আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পয়লা বৈশাখের সকাল থেকেই জ্বালাপোড়া গরম। এর মধ্যেই চলছে ভোটের প্রচার। একে গরম, তার উপর এত হাঁটাহাঁটি। মেজাজ কী আর ঠিক থাকে! যাদবপুর কেন্দ্রের সেলিব্রিটি প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী এবং কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, দু’জনেই দলীয় মঞ্চে হারিয়ে ফেললেন মেজাজ। একজন গলা সপ্তমে তুলে বললেন, “আমি আপনাদের জন্য কাজ করতে এসেছি। আমার নিজের কোনও স্বার্থ নেই। এটা সবার মাথায় গেঁথে নিন।” আর অন্যজন বললেন, “যত বেয়াদপ চ্যাংড়া এখানে আছে, বেশি কথা বলেছে, হয় ভোট করো নয় বাড়ি যাও।”
কয়েকদিন আগেই মিমির ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে গিয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। যাদবপুর কেন্দ্রের একটি কর্মসূচিতে গিয়েছিলেন তিনি। মঞ্চে মিমির বক্তৃতা চলাকালীনই নীচ থেকে কেউ এমন কোনও মন্তব্য করেন, যাতে চটে যান মিমি। তারপর সে কী মেজাজ! পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল নেতারাও মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু করে দেন।
যাদবপুরকে এ বারেও ধরে রাখতে সেলেব মুখকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর যে এমন ‘মুখ’ অতি বড় তৃণমূলকর্মীরও ধারণার মধ্যে ছিল না। যদিও ওই একবারই। বাকি সময়ে মিমি নিজের সিনেমার গান গেয়ে, জনতাকে এন্টারটেন করেই প্রচার সারছেন। পয়লা বৈশাখ যাদবপুরের তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন জলপাইগুড়িতে। লাড্ডু বিলি করে, রিকশায় চেপে ফুরফুরে মেজাজে প্রচার সেরেছেন টলিউডের এই গ্ল্যামার গার্ল।
ও দিকে রেগে ফায়ার হয়ে যান মহুয়া মৈত্রও। প্রচারে বেরিয়েছিলেন কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী। দেখা যায় মহুয়ার প্রচারের মাঝেই এক দল তৃণমূলকর্মী মহুয়ার কাছে নালিশ জানাতে শুরু করেন পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে। ব্যাস! মেজাজ হারিয়ে ফেলেন মহুয়া। বলেন, “আমি পরিষ্কার কথা বলছি। আমি এমপি ক্যান্ডিডেট, তাপসদা নির্বাচিত এমএলএ। আমি একটা কথা কারও বিরুদ্ধে শুনতে আসিনি। আমি ভোট করতে এসেছি। যত বেয়াদপ চ্যাংড়া এখানে আছে, বেশি কথা বলেছে, হয় ভোট করো, নয় বাড়ি যাও।”
এমনিতে টেলিভিশন বিতর্কে গলার জোরে বিরোধীদের একাই প্রতিহত করে দেন মহুয়া। কিন্তু দলীয় প্রচারে বেরিয়ে যে এমন করতে হবে তা বোধহয় তিনি নিজেও জানতেন না। কৃষ্ণনগরে এ বার প্রার্থী বদল করতে হয়েছে তৃণমূলকে। গত দশ বছরের সাংসদ তাপস পালকে আর টিকিট দেননি দিদি। তার উপর রয়েছে বিজেপি জুজু। কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে বহু বছর ধরেই গেরুয়া শিবিরের একটা গণভিত্তি রয়েছে। এ বার সেখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবেকে। মহুয়া হয়তো প্রকাশ্যে কলহ দেখেই আর মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। ২৯ এপ্রিল ভোট হবে এই কেন্দ্রে। হাতে আর ১৫ দিনও বাকি নেই। এখন যদি দলীয়কর্মীরা এ তাঁর নামে নালিশ করে তাহলে প্রার্থী আর ঠিক থাকেন কী করে!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে মিমি বা মহুয়াদের মেজাজ হারাতে হচ্ছে কেন? রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের ভিতরে পারস্পরিক অবিশ্বাস, কোন্দলই এর জন্য অন্যতম কারণ। তাঁদের মতে, যাদবপুরের একটা বড় অংশে তৃণমূলকর্মীরা মিমিকে প্রার্থী হিসেবে মানতে পারেননি। ঠিক তেমনই কৃষ্ণনগরেও। নদিয়া জেলার সংগঠনের ভিতরকার দশা বিলক্ষণ জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাই প্রার্থী ঘোষণার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও কর্মীরা নামছেন না দেখে, গোটা নদিয়া জেলার নেতাদের নবান্নে ডেকে নিয়েছিলেন মমতা। শান্তিপুরে বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য বনাম চেয়ারম্যান অজয় দে’র লড়াই, ও দিকে চাকদহে রত্না ঘোষ বনাম সেখানকার ব্লক সভাপতির কোন্দল। সব মিলিয়ে এই জেলায় ভিতরকার দ্বন্দ্বেই জেরবার শাসক দল। ভোট এগেইয়ে এলেও কোন্দল কমার কোনও নামগন্ধ নেই! প্রার্থীদের চিন্তা তো হবেই!সুত্র: দি ওয়াল
মতিহার বার্তা ডট কম ১৫ এপ্রিল ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.