খালা-শিশু ভাগ্নিকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৫

খালা-শিশু ভাগ্নিকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৫

খালা-শিশু ভাগ্নিকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৫
খালা-শিশু ভাগ্নিকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার ৫

অনলাইন ডেস্ক: বগুড়ার কাহালুতে এক গার্মেন্টস কর্মী (৩৯) ও তার শিশু ভাগ্নিকে (১৫) রাস্তা থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার কাহালু থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই গার্মেন্টস কর্মী।

পুলিশ রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত এক জোড়া সোনার কানের দুল ও ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে জানান, আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- বগুড়ার কাহালু উপজেলার কুশলীহার পূর্বপাড়ার আশরাফ আলী ফকিরের ছেলে আবুল কাশেম মানিক (৩৫), একই গ্রামের মোস্তফা ফকিরের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব (২৫), একই উপজেলার বাগাইল দক্ষিণপাড়ার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে রাকিব হাসান (২৩), বাগইল উত্তরপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে শাকিল হোসেন (২৩) এবং একই এলাকা আইয়ুব আলীর ছেলে আতিক রহমান প্রান্ত (২২)।

ওই গার্মেন্টস কর্মী বুধবার স্বামী ও ভাগ্নিকে নিয়ে কাহালু থানায় আসেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় ক্লিনারের কাজ করেন। তিনি গত ১২ জুলাই বেলা ১২টার দিকে বাসে বড় বোনের মেয়ে (ভাগ্নি) ও পরিচিত সহকর্মী রব্বানীকে (৩৫) নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসটি রাতে বগুড়া সদরের বারপুর এলাকায় মহাসড়কে পৌঁছলে বিকল হয়ে যায়।

বাধ্য হয়ে রাত ২টার দিকে তারা সহকর্মীর বন্ধু কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের কুশলিহার পূর্বপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে রাতযাপনের জন্য আশ্রয় নেন। পরদিন সকালে প্রধান আসামি আবুল কাশেম মানিক ও অন্যরা গ্রামে প্রচার করে রাজ্জাক বাড়িতে খারাপ মেয়ে এনে অসামাজিক কাজ করছে। ফলে তারা দিনভর বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি।

সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে তারা আবদুর রাজ্জাকের ভ্যানে রংপুরগামী বাস ধরার জন্য রওনা দেন। পথিমধ্যে রাত সোয়া ৮টার দিকে বাগাইল গ্রামের বড়পুকুর ব্রিজের কাছে পৌঁছেন। এ সময় আসামি আবুল কাশেম মানিকের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের একদল ডাকাত ভ্যানের পথরোধ করে। তারা চালকসহ চারজনকে ভ্যান থেকে নামিয়ে চাকুর মুখে জিম্মি করে। এরপর চাকুর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ৭২ হাজার টাকা, এক জোড়া সোনার কানের দুল ও একটি বাটন ফোন ছিনিয়ে নেয়।

রব্বানী ও রাজ্জাককে মারপিটের পর আটকে রেখে ডাকাতরা গার্মেন্টস কর্মী ও তার ভাগ্নিকে টেনেহিঁচড়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। গার্মেন্টস কর্মীকে কাহালু উপজেলার বাগইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে নিয়ে সব আসামি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এছাড়া মানিকসহ দুই-একজন গার্মেন্টস কর্মীর ভাগ্নিকে মহিষামুড়া-বাগইল সড়কের উত্তরপাশে তালগাছের নিচে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। ধর্ষণে শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ডাকাতরা এ ঘটনা প্রকাশ করলে রব্বানী ও ভ্যানচালক আবদুর রাজ্জাককে হত্যার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এছাড়া গার্মেন্টস কর্মী ও তার ভাগ্নিকে একটি ভ্যানে তুলে বগুড়া শহরের সাতমাথায় এনে নারায়ণগঞ্জগামী বাসে তুলে দেওয়া হয়। গার্মেন্টস কর্মী ও তার ভাগ্নি ঢাকায় ফিরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন।

আইনগত ব্যবস্থা নিতে গার্মেন্টস কর্মী বুধবার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে কাহালুর কুশলিহার পূর্বপাড়ায় ভ্যানচালক রাজ্জাকের বাড়িতে আসেন। পরে রাজ্জাককে সঙ্গে নিয়ে কাহালু থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এদিকে মামলা দায়েরের পর কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসান ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদের নেতৃত্বে বুধবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মূলহোতা মানিকসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজনকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ডাকাতির কথা স্বীকার করে। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ১৫ হাজার টাকা ও এক জোড়া সোনার কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাটন ফোনটি পাওয়া যায়নি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার পাঁচ আসামিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এছাড়া অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply