নিজেস্ব প্রতিবেদক: বখাটের ছোড়া পাথরের আঘাতে ট্রেনযাত্রী সালমান জাহান জিসানের মাথায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তার ব্রেনে রক্ত জমেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
আহত জিসান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন। ওই ওয়ার্ডের ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে সে। সোমবার রাতেই তার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন তার অবস্থা উন্নতির দিকে।
নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফম মোমতাজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মারাত্মক আঘাতের কারণে তার মাথার বাম পেরিয়েটাল হাড় কিছুটা দেবে গেছে। এ কারণে ব্রেনে রক্ত জমেছে। সফল অস্ত্রোপচার শেষে তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আপাতত সে শঙ্কামুক্ত।
৫ মে রাত ৮টার দিকে জামতৈল-ক্যাপ্টেন মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় ঢাকাগামী পদ্মা এক্সপ্রেসের ‘ঞ’ কোচের জানালায় পাথর নিক্ষেপ করে এক দুর্বৃত্ত। এতে জানালার পাশের আসনে বসে থাকা জিসান মারাত্মকভাবে মাথায় আঘাত পায়।
সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। আহত জিসান নওগাঁর আত্রাই উপজেলার সোনাইকান্দা এলাকার আবদুস সালামের ছেলে। বাবা-মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে ওই দিন ঢাকায় যাচ্ছিল জিসান।
মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের পাশে বসে রয়েছেন বাবা আবদুস সালাম। বিছানার আরেক পাশে মা জেমি।
বাবা আবদুস সালাম জানান, অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সেরে উঠছে জিসান। মঙ্গলবার তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু ব্রেনে রক্ত জমে থাকায় আরও ৪-৫ দিন দেখতে চাইছেন চিকিৎসক।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসা সূত্রে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করি। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে প্রায়ই বেছে নিই ট্রেন। বিভিন্ন সময় ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। কিন্তু এবার এর ভয়াবহতা টের পেলেন। এমন ঘটনা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।
এদিকে, শিশু জিসানকে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় আবু হানিফ (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাকে সিরাজগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়।
গ্রেফতারকৃত আবু হানিফ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কড্ডা কৃষ্ণপুর এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে। ভবঘুরে আবু হানিফ পুলিশের কাছে এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন।
সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন মজুমদার বলেন, পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ৫ মে রাতে থানায় মামলা করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা।
ওই মামলায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত আবু হানিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কারণ ছাড়াই তিনি একাই ট্রেনের জানলায় পাথর ছুড়েছেন। এর আগেও বিভিন্ন সময় একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন হানিফ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, গত ৫ মে রাতে রাজশাহীগামী মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের শিকার হয়েছে যুথি আক্তার (১২) নামের আরেক শিশু। যুথি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার বাহিরবাটি সদরঘাট এলাকার হামিদুল ইসলামের মেয়ে।
হামিদুল ইসলাম জানান, চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে আসছিলেন তিনি। মেয়েকে নিয়ে তিনি ভেড়ামারা স্টেশনে মধুমতি এক্সপ্রেসে ওঠেন। ট্রেনটি পাকশি-ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় পৌঁছালে ‘ঙ’ কোচের জানালায় পাথর নিক্ষেপ করে অজ্ঞাতরা।
এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পায় জানালার পাশে বসে থাকা যুথি আক্তার। ওই দিন রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। আঘাত ততটা গুরুতর না হওয়ায় চিকিৎসা শেষে সোমবার বেলা ২টার দিকে হাসপাতাল ছেড়ে যায় যুথি।
সম্প্রতি ট্রেনে অন্তত ১৭টি পাথর নিক্ষেপের তথ্য নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) খন্দকার শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, একদল দুষ্কৃতকারী পাথর নিক্ষেপ করে জানমালের ক্ষতি সাধন করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে যাত্রীদের সর্তক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
মতিহার বার্তা ডট কম ০৮ মে ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.