মতিহার বার্তা ডেস্ক : হঠাৎ করেই পদ্মানদীর পাকশী হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। এতে ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে ভারত অতিরিক্ত পানি ছেড়েছে কিনা তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
১৬ই মে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তির ২২ বছর পূর্তি দিবস। এদিন ফারাক্কা দিবস হিসেবেও পরিচিত। প্রতি বছর এই সময়ে শুকনো মৌসুমে পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টসহ পদ্মা নদীতে তীব্র পানি সংকট থাকলেও এবার পানি বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।
পাউবোর পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী ও উত্তরাঞ্চল পানি বিভাগের পরিমাপক কেএম জহুরুল হক জানান, এ বছরই প্রথম খরা মৌসুমে পদ্মায় প্রায় দ্বিগুণের বেশি পরিমাণ পানি পাওয়া যাচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি আগাম বন্যার পূর্বাভাস দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে রক্ষায় ১৯৯৬ সালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড় ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চুক্তি সই করেন।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেয়ার কথা ভারতের। কিন্তু চুক্তির পর দু’একবার বাদে বেশিরভাগ সময়ই কম পানি পেয়েছে বাংলাদেশ। পানি সংকটে চাষাবাদসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুময়তা দেখা দেয়। পদ্মার শাখা-উপশাখা নদীগুলোর অবস্থা দাঁড়ায় মরণদশায়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা মনে করেন, এই পানি বৃদ্ধি ঈশ্বরদীসহ উত্তর জনপদে আগাম বন্যার পূর্বাভাসেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ১৫ই মে বুধবার পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫৮ মিটার পরিমাপ করা হয়েছে, যা বছরের এই সময়ে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। প্রতি বছর এই সময়ে পদ্মায় পানি সংকট থাকলেও এবারের চিত্রটা ভিন্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বছরের এই সময়ে পদ্মায় পানির প্রবাহ থাকার কথা সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ১৫ হাজার কিউসেক। অথচ এখন পদ্মায় পানির প্রবাহ রয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কিউসেক। গতকাল বুধবার ৭৯ হাজার কিউসেক পানি পাওয়া গেছে পাকশী পদ্মায়, যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবাহের রেকর্ড।
গত এক মাসের হিসাব অনুযায়ী, এই শুকনো মৌসুমে যেখানে চুক্তির সমপরিমাণ ৩৫ হাজার কিউসেক পানিই পাওয়া যেত না, সেখানে পাকশীর পদ্মায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এ বছর শুস্ক মৌসুমেই পানির পরিমাপ ৫০ থেকে ৮০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত ওঠানামা করছে।
পাউবোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, এ বছর উজানে অতি বৃষ্টির কারণে পদ্মায় পানি বেড়েছে।
পাউবোর পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী ও উত্তরাঞ্চল পানি বিভাগের পরিমাপক কেএম জহুরুল হক জানান, এ বছরই প্রথম খরা মৌসুমে পদ্মায় প্রায় দ্বিগুণের বেশি পরিমাণ পানি পাওয়া যাচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি আগাম বন্যার পূর্বাভাস দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বেশি পানি পাচ্ছি। ২০১৬ সালে পদ্মায় এই সময়ে পানি পাওয়া গিয়েছিল ১৫ হাজার ৩০০ কিউসেক, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পানির প্রবাহ মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল কিন্তু এ বছর পানি প্রবাহ দ্বিগুণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের আওতায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমিতে সেচ সরবরাহ করার কথা থাকলেও পানির অভাবে গত বছর মাত্র ১ লাখ ১৬ হাজার একর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হয়। পানি বাড়ার কারণে এ বছর এই প্রকল্প সচল আছে এবং স্বাভাবিকভাবেই চলছে বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্মকর্তারা।
মতিহার বার্তা ডট কম ১৬ মে ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.