নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেছেন, জ্ঞানের মশাল প্রজ্জ্বলিত করে । আদর্শ ছাড়া , প্রচেষ্টা ছাড়া , বৃত্তি ছাড়া , পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন । তাই একজন শিক্ষককে হতে হবে আদর্শ ও ন্যায় – নীতির প্রতীক ।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে-সব খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে আচার্য হিসেবে আমাকে মর্মাহত করে । আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যাচ্ছে শিক্ষকগণ প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবি পাওয়ার লােভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ঠিকমতাে অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিং-এ ব্যস্ত থাকেন । অনেকে আবার নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না । ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনে সম্পৃক্ত হন । এটা অত্যন্ত অসম্মানের ও অমর্যাদাকর ।
আজ শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক । সাধারণ মানুষ আপনাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনেই দেখতে চায় । তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে আপস করবেন না। আপনাদের মর্যাদা আপনাদেরই সমুন্নত রাখতে হবে ।
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, মনে রাখবে এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে তােমাদের শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করেছে । তাদের কাছে তােমরা ঋণী । এখন সময় এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার । তােমরা তােমাদের মেধা , কর্ম ও সততা দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করতে পারলে সেই ঋণ কিছুটা হলেও শােধ হবে । এ দেশ ও এ দেশের সাধারণ জনগণকে কখনাে ভুলবে না । মনে রাখতে হবে বাঙালির শেকড় এই সাধারণ জনগণের মধ্যেই প্রােথিত ।
তিনি আরও বলেন, একবিংশ শতাব্দী তথ্যপ্রযুক্তির যুগ । এ সময়ে বিশ্ব প্রতিযােগিতায় টিকে থাকতে হলে আধুনিক ও প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে । বাংলাদেশের বিশাল তরুণ সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার কোনাে বিকল্প নেই । এই বিবেচনায় বর্তমান সরকার প্রায় প্রতিটি জেলায় বিশ্বদ্যিালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উচ্চতর শিক্ষার যে সুযােগ তৈরি হয়েছে তাতে দেশের সকল অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে । ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত – সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে এ উদ্যোগ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে হেলিকপ্টারে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর রাবি স্টেডিয়ামে আয়োজিত একদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগদেন তিনি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এবারের রাবির সমাবর্তনে অংশ নিতে মোট ৩ হাজার ৪৩১ জন গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে কলা অনুষদের ৬৬৬ জন, আইন অনুষদের ৮৯ জন, বিজ্ঞান অনুষদের ৩৭৭ জন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ৫০৫ জন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ৫৮১ জন, জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদের ৩১০ জন, কৃষি অনুষদের ৮৫ জন, প্রকৌশল অনুষদের ১৩৫ জন ও চারুকলা অনুষদের ৪৩ জন নিবন্ধন করেছেন। বিভিন্ন ইনস্টিটিউটসগুলোর ৬ জন গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছে।
এছাড়া এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন ও ব্যাচেলর অব সার্জারি) ও বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জন) ডিগ্রির জন্য যথাক্রমে ৫১১ ও ১২৩ জন নিবন্ধিত হয়েছেন।
আগামী কাল রোববার দুপুর ৩টার দিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পঞ্চম সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করবেন। সমাবর্তন আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
মতিহার বার্তা ডট কম – ৩০ নভেম্বর ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.