স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে ‘আল-ফাতাহ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতিকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি মামলা ও অভিযোগ হয়েছে। অর্থ আত্নসাত ও প্রতারণার অভিযোগে সমিতির সভাপতি এনামুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগী। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ফেরতাপাড়া গ্রামের ফজলু শেখের ছেলে আলী জামাল বাদি হয়ে গত ১৭ আগস্ট রাজশাহী সিএমএম কাশিয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক রাজশাহী পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, ওই ভুক্তভোগীর মামলা দায়েরের আগেই তাকে প্রতারক উল্লেখ করে গত ২৯ জুলাই আদালতে মামলা করেছেন এনামুল হক। তার দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত ৪ নং আসামি হলেন নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার এএসআই সোহেল রানা। এছাড়া এনামুল হককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এএসআই সোহেল রানার বিরুদ্ধে গত ১৯ জুলাই পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত করেছেন তিনি।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৮ অক্টোবর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ফেরতাপাড়া গ্রামের ফজলু শেখের ছেলে আলী জামালের কাছ থেকে আলফাতাহ সমবায় সমিতি লি: এর সভাপতি এনামুল হক ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। যা ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে র্দীঘদিন পর এনামুল হক লিখিত দেন। পরে এনামুল হক তিন বছর মেয়াদে কিস্তি আকারে আলী জামালের ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে অস্বীকার করলে বিপাকে পড়েন আলী জামাল। বারবার টাকা ফেরত চাইতে গেলে বিভিন্ন রকম টালবাহানা ও কালক্ষেপন করতে থাকেন এনামুল। সম্প্রতি এনামুল টাকা পরিশোধ করবে না মর্মে সাফ জানিয়ে দিলে নিরুপায় হয়ে দন্ড বিধির ৪০৬/৪২০ ধারায় আদালতে মামলা দায়ের করেন আলী জামাল। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই রাজশাহীকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
সমিতির সভাপতি এনামুল হক বাগমারা উপজেলার বালানগর মহম্মদপুর গ্রামের মৃত আবুল কাশেম মোল্লার ছেলে। কাশিয়াডাংঙ্গা থানার পেছনেই সমিতির অফিস থাকলেও সম্প্রতি অফিসের কোনো হদিস মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এনামুল হক দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সাথে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা করে আসছেন বলেও বহু অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, সমিতির সভাপতি এনামুল হক মামলা দায়েরের আগেই কাশিয়াডাঙ্গা থানার এএসআই সোহেল রানার বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ১৯ জুলাই করা এ অভিযোগের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের আইজির কাছেও পাঠিয়েছেন তিনি। অভিযোগে এনামুল উল্লেখ করেন, গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কাশিয়াডাঙ্গা থানা সংলগ্ন তার অফিসের নিকট পৌঁছলে এএসআই সোহেল রানাসহ তিন পুলিশ তাকে ঘিরে ধরেন এবং পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার মোবাইল কেড়ে নেন। এরপর তাকে থানার একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে সোহেল রানা তাকে বলেন, আপনি সব কথা ঠিকমত স্বীকার করবেন। নইলে গরম পানি নাকের মধ্যে ঢুকিয়ে দেবো, গরম ডিম ইয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দেবো ইত্যাদি বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এরপর এএসআই সোহেল রানা তাকে (এনামুল) বলেন, একজনের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন তা পরিশোধ করতে হবে। এজন্য নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে দিতে হবে। এতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পরে ৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করবে মর্মে জোর করে তাকে দিয়ে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে বাধ্য করেন এএসআই সোহেল। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরদিন এএসআই সোহেল সমঝোতার প্রস্তাব দিলে এনামুল রাজি হননি। এরপর থেকে লোক মারফত তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে এনামুল হক ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা করেছেন।
সমিতির সভাপতি এনামুল হক পুলিশের এএসআই সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ করলেও নিজের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষরা মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
বুধবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে এএসআই সোহেল রানার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ও পুলিশ কমিশনার কাছে করা অভিযোগ প্রসংগে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা পেলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মোবাইলে জানতে চাইলে কাশিয়াডাঙ্গা থানার এএসআই সোহেল রানা বলেন, এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাইনা। যা হবার আদালতে হবে।
এ ব্যাপারে কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদ পারভেজ জানান, আমি থানায় যোগদানের পরে এ ধরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে অভিযোগ হাতে পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মতিহার বার্তা ডট কম – ১৯ আগস্ট, ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.