চারঘাটে রেল কর্মচারী অপহরণের ঘটনায় থানায় মামলা: প্রধান আসামী গ্রেফতার

চারঘাটে রেল কর্মচারী অপহরণের ঘটনায় থানায় মামলা: প্রধান আসামী গ্রেফতার

এসএম বিশাল: রাজশাহীর চারঘাটে রেলের কর্মচারীকে অপহরণ করে নগদ টাকা ও ফাঁকা স্ট্যাম্পে সহি নেয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে চারঘাট থানায় এ অপহরণ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া (৩২)। অপহরণকারী অজ্ঞাত ৪/৫ জনসহ চারঘাট চক মুক্তারপুর এলাকার মিলন, অরফে সাহেব (২৮) একই এলাকার রকি (২৪) পিতা অজ্ঞাত এর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন তিনি। মামলা নং-১, তাং-০১/০৩/২০১৯।

মামলা দায়েরের পর ওসির তৎপরতায় আজ শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে এ মামলার প্রধান আসামী অপহরণকারী ও মাদক ব্যবসায়ী মিলনকে গ্রেফতার করেছে চারঘাট মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আব্দুল করিমসহ সঙ্গীয় ফোর্স। পরে শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছেন বলেও জানান চারঘাট থানার ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম।

এর আগে গত শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) রাজশাহীর চারঘাট থানাধিন মুক্তারপুর চকপাড়া এলাকায় এ অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহরণের স্বীকার জিয়া পুঠিয়া থানাধিন হাতিনাদা গ্রামের মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। বর্তমানে তিনি শিরোইল রেলওয়ে কোয়াটারে বসবাস করেন। তিনি বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম ভবনে বার্তাবাহক হিসেবে কর্মরত আছেন।

থানায় দায়েরকৃত মামলা সুত্রে  জানাযায়, গত শনিবার বিকাল ৬টার দিকে জিয়া তার সহকর্মী মোঃ হাসিরুল ইসলামকে নিয়ে চারঘাট থানাধিন হলিদাগাছী এলাকায় তার শ্বশুর বাড়ী বেড়াতে যান। পরে সেখান থেকে চা পান করার উদ্দেশ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে হলিদাগাছি দ্বী-মুখি উচ্চ বিদ্যালয় মোড়ে একটি চায়ের দোকানে আসেন।

ওই সময় অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪/৫ জনসহ মিলন ও রকি নামের দুই অপহরণকারী জিয়াকে জোরপূর্বক একটি ব্যাটারী চালিত অটো-রিক্সায় তোলার চেষ্টা করে। এ সময় সেখানে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে অজ্ঞাত পরিচয়ের ৪/৫ জন ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অটো রিক্সায় তুলে নেয়।

সেখান থেকে একই থানার মুক্তারপুর এলাকার মোঃ জমসেদ আলীর ছেলে মাদক স¤্রাট মোঃ মিলন ওরফে সাহেব ও একই এলাকার রকিসহ তারা মিলনের বাড়িতে নিয়ে যায় জিয়াকে। সেখানে তারা রেল কর্মচারী জিয়ার মাথায় দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে একশত টাকা মূল্যের ৩টি ফাঁকা স্ট্যাম্পে সহি নেয় এবং উক্ত স্ট্যাম্পে জিয়ার সহকর্মীকে স্বাক্ষী হিসেবে সহি নেয়। এ সময় তারা নগদ ১ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

জিয়া টাকা দিতে অপারগতা জানালে তারা প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখায়। শেষে তারা আলোচনা সাপেক্ষে নগদ ৪০ হাজার টাকায় রাজি হয়।

প্রাণ বাঁচাতে জিয়া তার ছোট ভাই মোঃ এরশাদ আলীকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। তার ছোট ভাই এরশাদ আলী আবুল কালাম আজাদ নামের পরিচিত এক ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগদ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে অপহরণকারীদের দেয়া ঠিকানায় পৌঁছে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে বড় ভাই জিয়াকে মুক্ত করে আনেন। এ সময় অপহরণকারীরা জিয়াকে হুমকি দিয়ে বলে কাউকে এ ঘটনা জানালে ফাঁকা স্ট্যাম্পে ৫লক্ষ টাকা লিখে আদালতে মামলা দেবো।

এ ঘটনার গত রবিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জিয়া চারঘাট থানায় দুইজন অপহরণকারীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪/৫ জনসহ মোট ৫জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

জানতে চাইলে ভূক্তভোগী মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে অপহরণ করে ৫জন অপহরণকারী। তাদের মধ্যে আমি দুইজনকে শনাক্ত করেছি।

তিনি আরো বলেন, প্রাণ বাঁচাতে আমি ফাঁকা স্ট্যাম্পে সহি দিয়েছি এবং আমার ভাইকে ফোন দিয়ে ৪০ হাজার টাকা আনিয়ে তাদের দিয়ে মুক্ত হয়েছি।

এদিকে একাধিক স্থানীয়রা জানায়, মিলন এক সময়ের মাদক চোরাকারবারী ও ভয়ংকর ছিনতাইকারী। গত অনুমানিক এক যুগের ও বেশি সময় ধরে অপরাধ জগতে তার বিচরত করছে মিলন। মিলনের নেতৃত্বে চক মুক্তারপুর এলাকায় বিশাল একটি মাদক সিন্ডিকেট রয়েছে। ভারত থেকে মাদক চোরাচালান আর পদ্মার চরে ছিনতাই এ সিন্ডিকেটের নিত্যদিনের কর্ম। তার গ্রেফতারে এলাকাবাসীরা সন্তোশ প্রকাশ করে বলেন, মিলনের সহযোগীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে চকমুক্তারপুর এলাকাকে মাদক মুক্ত করার হোক।

মতিহার বার্তা ডট কম ০১ মার্চ ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply