বিপুল মেয়াদোত্তীর্ণ সার নিয়ে বিপাকে কর্তৃপক্ষ

বিপুল মেয়াদোত্তীর্ণ সার নিয়ে বিপাকে কর্তৃপক্ষ

নিজেস্ব প্রতিবেদক : মেয়াদোত্তীর্ণ বিপুল পরিমাণ জমাট ইউরিয়া সার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী বাফার গুদামে কর্মরত বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) কর্মকর্তা ও ডিলাররা।

পুরোপুরি অকেজো ও মেয়াদোত্তীর্ণ বিবেচনায় এসব সার গত সাত দিনেও পরিবহন ঠিকাদারের কাছ থেকে গ্রহণ করেননি তারা। শনিবারও ওই সার রাজশাহী বাফারের এক কোণে স্তূপীকৃত আকারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তবে সরবরাহকারী ও ঠিকাদারের লোকজন জমাটবাঁধা সার হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রিপ্যাক বা পুনরায় বস্তায় ভরার কাজটি করছেন।

এদিকে রাজশাহী অঞ্চলের তিন জেলা- রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরের সার ডিলাররা বরাদ্দকারী সংস্থা বিসিআইসিকে আগেই জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের নষ্ট সার উত্তোলন করবেন না। রাজশাহী বাফার গুদামে সার নিতে আসা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের একাধিক সার ডিলার জানিয়েছেন, চাষীরা গত বছর একই ধরনের জমাটবাঁধা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইউরিয়া সার বিভিন্ন ফসলের জমিতে ব্যবহার করে মারাÍকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

জমাট সার উত্তোলন করে চাষীদের সঙ্গে রাজশাহী অঞ্চলের ডিলাররাও ব্যবসায়িক ক্ষতিতে পড়েন। বিক্রি করতে না পেরে মেয়াদোত্তীর্ণ জমাট সার অনেক ডিলার ভাগাড়ে ফেলে দেন। এ নিয়ে জেলা সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসককে কয়েক দফা লিখিতভাবে অভিযোগও দেয়া হয়েছিল জেলা ফার্টিলাইজার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরবরাহকারী ও পরিবহন ঠিকাদার পোটন ট্রেডার্স ও নবাব অ্যান্ড কোম্পানি নামে দুটি পরিবহন ঠিকাদার কোম্পানি গত কয়েক দিনে পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌবন্দর থেকে আমদানি করা ৫০০ টন সার রাজশাহী বাফার গুদামে নিয়ে যায়। কিন্তু সারের অবস্থা দেখে রাজশাহী বাফার গুদামে কর্মরত বিসিআইসির কর্মকর্তারা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। এরপরও প্রভাবশালী সরবরাহকারী ও পরিবহন ঠিকাদারদের লোকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সার বাফার গুদামে রেখে যান। কিন্তু কাগজে-কলমে সার গ্রহণ করেননি বিসিআইসির কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিআইসির রাজশাহী বাফার গুদামের ইনচার্জ শামীম আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, পরিবহন ঠিকাদাররা প্রায় ৫০০ টন সার রাজশাহী বাফার গুদামে নিয়ে আসেন। কিন্তু সার গুদামে উঠানোর পর দেখা যায় অধিকাংশ বস্তার ভেতরের সার জমাট বাঁধা। অনেক বস্তার ওজন ৫ থেকে ৭ কেজি করে কম। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ওই সার নষ্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হয়েছে। এজন্য আমরা সার গ্রহণ করিনি। এখন পরিবহন ঠিকাদারের লোকেরা শ্রমিক নিয়োগ করে গুদামের ভেতরে হাতুড়ি দিয়ে জমাট সার ভাঙছেন ও নতুন বস্তায় ভরছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী ফার্টিলাইজার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহা. ওসমান আলী বলেন, জমাট সার তুলে গত বছর রাজশাহীসহ তিন জেলার ডিলাররা বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। অনেক চাষীও নষ্ট সার কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে আমরা এবার গুদামে আসা জমাট সার না উত্তোলনের কথা জেলা সার মনিটরিং কমিটিকে জানিয়েছি। ভালো সার বরাদ্দ ও সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছি।

রাজশাহীর ডিলারদের অভিযোগ, ওই সার দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম অথবা মোংলা বন্দরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। এখন বোরো চাষের মৌসুমে সারের চাহিদা থাকায় নষ্ট সার ডিলারদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার জন্যই সরবরাহকারী ও পরিবহন ঠিকাদাররা কৌশলে রাজশাহী বাফারে পাঠিয়েছে। ওই সার কোনোভাবেই উত্তোলন করবেন না বলে ডিলাররা জানিয়েছেন।সূত্র: যুগান্তর।

রাজশাহী বাফার গুদামে জমাটবাঁধা সার সরবরাহকারী পরিবহন ঠিকাদার পোটন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কামরান আশরাফ খান পোটন ফোনে যুগান্তরকে বলেন, সার বিসিআইসি অথবা তাদের অনুমোদিত কোনো প্রতিষ্ঠান আমদানি করে। আমরা শুধু বন্দর থেকে ২১ দিনের মধ্যে বিভিন্ন বাফার গুদামে পৌঁছে দিয়ে থাকি। সারের গুণগতমান অথবা মেয়াদ থাকা না থাকা নিয়ে আমাদের বিশেষ কোনো দায় নেই। এটা তারাই বলতে পারবেন, যারা আমদানি করেন অথবা যারা আমদানি করান ও তদারকি করেন।

মতিহার বার্তা ডট কম ০৩  মার্চ ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply