রাজশাহী নগরীর শ্যামপুরে ফাঁকা রশিদেই চলছে পৌরসভার টোল আদায়

রাজশাহী নগরীর শ্যামপুরে ফাঁকা রশিদেই চলছে পৌরসভার টোল আদায়

রাজশাহী নগরীর শ্যামপুরে ফাঁকা রশিদেই চলছে পৌরসভার টোল আদায়
রাজশাহী নগরীর শ্যামপুরে ফাঁকা রশিদেই চলছে পৌরসভার টোল আদায়

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর উপকন্ঠে রয়েছে শ্যামপুর বালুমহাল। এই বালুমহালে ফাঁকা রশিদেই চলছে কাটাখালি পৌরসভার অতিরিক্ত টোল আদায়ের কাজ। ঘাটটিতে পৌরসভার বেঁধে দেওয়া টোল দুইশত টাকা হলেও অতিরিক্ত একশত টাকা বেশি আদায় করছে টোল ইজারাদার। এতে অল্পপুজির বালু ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।

রোববার (২৮ আগস্ট) অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাটাখালী পৌরসভার মেয়র মো. আব্বাস আলী।

তিনি বলেন, পৌরসভার অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি আমি শুনেছি। এনিয়ে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। সেখানে একটি বাজে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই টোল আদায়ের বিষয়টি আমাকে না অবহিত করেই সেখানকার ইজারাদারেরা অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে টোল আদায় করছে।

এদিকে গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট) সন্ধার দিকে শ্যামপুর বালুমহালে সরেজমিনে গিয়ে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) থেকে ফাঁকা রশিদেই আদায় হচ্ছে টোল। সরকার নির্ধারিত ২০০ টাকার বদলে আদায় হচ্ছে ৩০০ টাকা করে। এতে ঘাটের বালুমহাল থেকে বালু নিয়ে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন আপত্তি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বালু ব্যবসায়ী বলছেন, শিঘ্রই অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ না করা হলে আইনের আশ্রয় নিবেন তারা।
৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন কাজলা এলাকার অক্টোর মোড়ের মো. ঈদুল ইসলাম। টোল বৃদ্ধির আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, বালু বেঁচে একটি ট্রাক প্রতি লাভ থাকে ৫০ থেকে শ’দেড়েক টাকা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার থেকে হুট করেই ১০০ করে টোল আদায়ের কারণে পড়েছি বিপাকে। আমার চুক্তিকৃত জায়গাতে বালু দেওয়ার বিষয়ে থাকছে না লাভ, যা অন্যায় ভাবে আদায় করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বালুর দাম বর্ষার সময় বৃদ্ধি পায়, আবার স্বাভাবিক মৌসুমে বালু পর্যাপ্ত পরিমাণে উঠলে দাম কমে। কিন্তু পৌরসভার টোল কোনো মৌসুমেই বাড়ে না, যা অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়েছে টোল আদায়কারী ইজারাদার।

সুরাপানের মোড়ের ছোট বালু ব্যবসায়ী শুকুর আলী বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন বিল্ডিং খুঁজে খুঁজে ঘুরে বালুর কাস্টমার খুজি। তারপর তাদের বালু সাপ্লাই দেয়। এতে ট্রাক প্রতি আমার লাভ থাকে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মতো। কিন্তু হুট করে টোল বাড়ানোতে আমি আর বালু সাপ্লাই দিতে পারছি না। পূর্বের অর্ডারও বাধ্য হয়ে বাতিল করেছি।

এই বালু সাপ্লাই দিয়েই চলতো আমার রুজি রুটি। টোল বৃদ্ধির কারণে এখন আমি প্রায় বেকার। কারণ, লাভ না থাকলে ব্যবসা করব কিভাবে। কাস্টমারেরা হুট করে অতিরিক্ত দামে বালু নিচ্ছে না। যার কারণে বিড়ম্বনার শেষ নেই। পৌরসভাকতৃক নির্ধারিত টোলের চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে টোল আদায়কারী ইজারাদার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে ট্রাক একবারেই কমে গিয়েছে, তাই টোল আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নদীতে পানি নামলে এবং বালু আবার উঠতে শুরু করলে তারা আবার কমিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন যদি আমরা টোল বেশী আদায় না করি তবে আমাদের ইজারা নেওয়ার জন্য যে অর্থ ও সরকারকে ট্যাক্স দেওয়া হয়েছে তার কোনোটায় উঠবে না। বরং, উল্টো লস যাবে। আমরা তো লস করে ব্যবসা করতে আসিনি। ক্ষতি এড়ানোর জন্যই মূলত টোল বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে এখানে ৪০০ থেকে ৫০০ গাড়ি যাতায়াত করত। কিন্তু এখন দিনে ১০০ গাড়িও মাল নিয়ে যাচ্ছে না। রিজার্ভ যে বালু আছে তাই নিয়ে যাচ্ছে ট্রাক।

তিনি আরও বলেন, টোল বাড়ানোর বিষয়ে ২০২১ সালের এপ্রিলের দিকে তথা বৈশাখের শরুতেই এই বালুমহালের ইজারা চালু হয়। কিন্তু তার আগেই কাটাখালী মেয়রের কাছে গিয়ে ইজারা নেওয়ার আগেই টোল বৃদ্ধির বিষয়ে আবেদন করে আসা হয়েছে। তবে তিনি ওই আবেদনটিতে সাড়া দেননি বলেও জানান টোল আদায়কারী ইজারাদার নজরুল ইসলাম।

তবে এবিষয়ে কাটাখালি পৌরসভার মেয়র বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণে এখানে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়েছেন। অনেকেই আমাকে এবিষয়ে অভিযোগ দিচ্ছেন। এছাড়া সেখানে বালু ব্যবসার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। খুব দ্রুতই এবিষয়ে বসে একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান কাটাখালী মেয়র আব্বাস আলী।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply