অনলাইন ডেস্ক: ব্রিটেনের খামারগুলোতে লক্ষাধিক শুকর বড় হয়ে গেলেও এগুলোকে জবাই করে মাংস উৎপাদনের মত কসাই পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রেক্সিট পরবর্তী পরিস্থিতির কারণেই এ সংকট দেখা দিয়েছে। এরফলে খামারিদের প্রাণিগুলোকে হত্যা বা পুড়িয়ে মারা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটেনে অন্য দেশে থেকে কসাই কাজে আসতে চাইলেও তাদের দক্ষ কর্মী হিসেবে ভিসা দিতে দেশটির সরকার এখনো রাজি নয়। কসাইখানাগুলোতে কসাই মিলছে না। ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বিদেশি কসাইকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে এখনো রাজি হননি।
মজার ব্যাপার হচ্ছে দক্ষকর্মী হিসেবে কসাইরা ব্রিটেনে আসার সুযোগ না পেলেও ব্যালে শিল্পীরা ঠিকই ওই তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। ব্রেক্সিটের কারণে এবং কোভিড মহামারিতে শত শত কসাই ব্রিটেন ছেড়ে ইউরোপে তাদের দেশে চলে গেছে। ফলে ব্রিটেনের খামারগুলোতে কসাই সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি ভ্যান চালকের সংকটে বিপাকে পড়েছেন ব্রিটিশ খামারিরা। ফলে সুপার মার্কেটগুলোতে সময়মত পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরফলে স্কটল্যান্ডে গত সপ্তাহে ২৫ লাখ ব্রোকলি ফেলে দিতে হয়েছে। বিনষ্ট করা হয়েছে ১৫ লাখ ফুলকপি। অথচ ভ্যান চালকদের বছরে ৫০ হাজার পাউন্ডের বেশি বেতন অফার দেওয়া হচ্ছে। ফাস্ট ফুড শপগুলো তাদের ক্রেতাদের এ সংকটের কথা জানিয়ে আগেভাগেই কাঙ্খিত পণ্য নাও মিলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেগস অন্যতম। ব্রিটেনের ন্যাশনাল পিগ এ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী ড. জো ডেভিস বলেন খামারে প্রতি সপ্তাহে ১৫ হাজার শুকর মাংস উৎপাদন সক্ষম হয়ে উঠছে। এধরনের ৮৫ হাজার শুকর অপেক্ষায় আসে মাংস উৎপাদনের জন্যে। কিন্তু কসাই সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ শতাংশ। প্রতি সপ্তাহে ২ লাখ শুকর পাঠানো হচ্ছে জবাইয়ের জন্যে কিন্তু মাংস উৎপাদন করতে না পারলে তাদের খেতে দেওয়ার মত খাবার খামারিদের হাতে নেই। ডেভিস বলেন মাইগ্রেশ কমিটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে সুস্পষ্ট করে জানিয়েছে কসাই জরুরি কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। আগামী বছরের আগে এধরনের তালিকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে এবছর খামারিরা বড় ধরনের লোকসানে পড়তে যাচ্ছেন।
ব্রিটেনের ন্যাশনাল ফার্মার্স ইউনিয়ন বলছে হর্টিকালচার কর্মীদের এক তৃতীয়াংশের বেশি ভ্যাকসিন দিতে পারেননি এজন্যে তারা খামারে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। পরিসংখ্যান বলছে ২৭ শতাংশ ফুড ও এ্যাকোমেডেশন ফার্মের হাতে স্বাভাবিকের চেয়ে কম পণ্য মজুদ রয়েছে। হিসাব রক্ষক গ্রান্ট থর্নটনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ফুড ও ড্রিংক ব্যবসায় অন্তত ৫ লাখ কর্মী এখনো ভ্যাকসিন দিতে পারেননি। ব্রিটিশ মাংস প্রক্রিয়াজাত এ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নিক এ্যালেন বলেন ইইউ ছেড়ে ব্রিটেনের সরে আসলে আমাদের কোন ধরনের অসুবিধায় পড়তে হবে তা জিজ্ঞাসা করার কেউ ছিল না। এজন্য রাজনীতিবিদদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল। কারণ অভিভাসন প্রক্রিয়া তাদেরই হাতে ছিল। তারাই তা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এখন খামার, ব্যবসা যদি লোকবলের অভাবে ঠিকমত না চালানো যায় তাহলে এ দায় কে নেবে। এরপর কোভিড মহামারিজনিত ক্ষতিতো রয়েছেই। তবে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলছে ব্রেক্সিটের পর এখন ইউরোপের দেশ থেকে এখনো কসাই আসতে কোনো অসুবিধা নেই যদি তারা স্পন্সর দেখাতে পারেন। কারণ তারা ব্রিটেনে এলে বছরে ২৫ হাজার ৬ পাউন্ড আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। ব্রিটেন চায় বিদেশি কর্মীর চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে ব্রিটিশ কর্মীদের নিয়োগ। ব্রিটিশ সরকার চায় প্রশিক্ষণ, ক্যারিয়ারের বিকল্প এবং মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে গৃহকর্মীদের জন্য কর্মসংস্থানকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং অটোমেশন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের জন্য সকল খাতকে উৎসাহিত করতে।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.