খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রশ্ন সহকর্মীদের

খাদ্যমন্ত্রীর জামাতার অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রশ্ন সহকর্মীদের

মতিহার বার্তা ডেস্ক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের জামাতা রাজন কর্মকারের (৩৯) স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে নাকি তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার সহকর্মীরা।

ঢাকা ডেন্টাল কলেজের প্রিন্সিপাল ও বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব প্রফেসর ডা. হুমায়ুন কবির এ বিষয়ে বলেন, আমরা রাজনের মৃত্যুটা মোটেও স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে করছি না। রাজনের পরিবারের কাছ থেকে কিছু ঘটনা শুনেছি, সেসব শুনে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হচ্ছে না। কারণ গত রাত পর্যন্তও রাজন হাসপাতালে প্র্যাকটিস করে বাসায় ফিরেছেন। তার কোনো শারীরিক অসুবিধাও ছিল না। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু বলেই চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছিল।

রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে স্কয়ার হাসপাতালের মরচুয়ারিতে রাজনের মরদেহ দেখে এসে সাংবাদিকদের এসব বলেন তিনি।

তিনি বলেন, যেহেতু আমরা তার পারিবারিক কিছু ঘটনা শুনেছি সেক্ষেত্রে এ মৃত্যুর কারণ জানা জরুরি। পরিবারের পক্ষ থেকে তার মামা আমাদের জানিয়েছেন, এটি নিশ্চিত একটি হত্যাকাণ্ড। পরিবারের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি তাতে এটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে।

রাজনের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুধু মুখ দেখেছি। এটুকুতে বোঝা মুশকিল। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন করেছে তারা বলতে পারবেন।

তিনি বলেন, শেরেবাংলা নগর থানায় তার পরিবার গেছে, এ বিষয়ে একটি মামলা করা হবে।

ডা. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত চাই। কারণ তাদের ধর্মে মরদেহ সৎকারের পর সেটা পুনঃময়নাতদন্ত করা খুব মুশকিল। তাই সৎকারের আগেই ময়নাতদন্ত দরকার। যদিও ময়নাতদন্তের ব্যাপারে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

এর আগে রাজন অসুস্থ হয়েছিলেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জেনেছি বছরখানেক আগে পারিবারিক ঝামেলার কারণে কিছু ঘটনা ঘটেছে। সে প্রথমে পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হয়; পরে সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল এবং পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক তার শাস্তি আমরা অবশ্যই চাই। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকলেও সেটি খুঁজে বের করা হোক। যদি রাজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তাহলে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা খুনিদের ছাড় দেব না। প্রয়োজনে আন্দোলন করব।

রাজনের মৃত্যু কি হাসপাতালে হয়েছে না কি বাসায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতালে মারা যায়নি বলে আমরা জানতে পেরেছি।

বিএসএমএমইউয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. ওমর ফারুক বলেন, সুস্থ মানুষ হঠাৎ করে মারা যাবে, তা তো সন্দেহ হবেই। আমার জানা মতে, রাজনের কোনো শারীরিক অসুস্থতা ছিল না। আমরা জেনেছি, আগে থেকেই পারিবারিক কলহ ছিল। আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত চাই।

নিহতের বন্ধু খুলনা সদর হাসপাতালের কনসালট্যান্ট নিতিশ কৃষ্ণ দাশ বলেন, মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন ময়নাতদন্ত করা হয়। তিনি সম্মত হয়েছেন।

বিএসএমএমইউর মেডিকেল অফিসার জাকির হাসান বলেন, আনন্যাচারাল ডেথ। ময়নাতদন্ত দাবি করছি। রাজনের শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা ছিল না। হার্ট অ্যাটাকও করেনি। তাহলে রাজনের মৃত্যুর কারণ কী আমরা জানতে চাই। এর নেপথ্যে অন্য কোনো কারণ আছে কি না খুঁজে বের করার দাবি জানাচ্ছি।

নিহতের মামা সুজন কর্মকার বলেন, প্রথমে নিহতের শ্বশুরবাড়ির লোকজন স্বাভাবিক মৃত্যু ধরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু নন-ডায়াবেটিস (ডায়াবেটিস নেই এমন) একজন লোকের এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। আমরা ময়নাতদন্ত চাই।

এর আগে শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের একটি বাসা থেকে রাজনকে স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ভোরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাজন কর্মকার বিএসএমএমইউ ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তার স্ত্রী একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।

মতিহার বার্তা ডট কম ১৭  মার্চ ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply