পরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নেতা, কাউন্সিলর ও স্থানীয় গণমান্য বক্তিবর্গের সমন্বয়ে অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রæতি দেন এবং দুপক্ষ বসে সামাজিক আপোষ-মীমাংসার কথা বলেন। এতে রাজি হন ভুক্তভোগী নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। দুপক্ষের আপোষ হওয়ায় এবং রবীন্দ্রনাথের অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্তে জামিন করানো হয় প্রতারক মামুনকে। এরই মধ্যে প্রতারণার দায়ে ৯ দিন জেল খাটতে হয় তাকে। জেল থেকে জামিন পান ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিনই জেল থেকে বের হয়েই কারাবাসে থাকা ৯ দিনের অর্থাৎ ৯/১২/২০১৯ থেকে ১৭/১২/২০১৯ পর্যন্ত পারিবারিক ছুটি চান চিফ মেডিকেল অফিসারের নিকট। আবেদনটি গ্রহণপূর্বক তাঁর ছুটি মঞ্জুর করেন জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার-২ মো. হযরত আলী তালুকদার। পরবর্তীতে তার ছুটির আবেদনটি পাঠানো হয় পিএ টু সিএমও (পশ্চিম) কাছে। চিফ পার্সোনেল অফিসারের পক্ষে সেটি গ্রহণ করেন জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার-২ এসএম সেলিম উদ্দীন। পরবর্তীতে ওই আবেদনের মঞ্জুরি দিয়ে চার্জশিটভুক্ত আসামী মামুনকে কাজে যোগদানের অনুমতি দেন এসএম সেলিম উদ্দীন এবং তাঁকে (মামুনকে) কাজে যোগদানের অনুমতি প্রদান করেন ডিভিশনাল মেডিক্যাল অফিসার ডা. এসএম মারুফুল আলম।
নাম প্রকাশে এক রেল কর্মচারী বলেন, রেল হাসপাতালের চৌকিদার পদে কর্মরত মামুনের কুকর্মের ঘটনাটি রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সকল কর্মকর্তাই অবগতি ছিলেন। কারণ তাঁর আটকের ঘটনাটি স্থানীয়, জাতীয় সহ বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এবং ওই সংবাদে মামুনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডিএমও মারুফুল আলমের বক্তব্যও রয়েছে। তারপরও মামুনের জেলে কাটানো ওই ৯ দিনকে রেল কর্তৃপক্ষ কাগজে-কলমে দেখায় ‘পারিপারিক ছুটি’ হিসেবে।
তিনি আরও বলেন, বিধি মোতাবেক একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ফৌজদারি আইনে সাজা প্রাপ্ত হলে তিনি তার কর্মস্থলে যোগদান করতে পারবেন না। উপরন্তু তিনি শুধুমাত্র খোরপোশ ভাতার সুবিধা ভোগ করতে পারবেন, অন্য কোন সুবিধায় তিনি পাবেন না যতক্ষণ না মামলাটির নিষ্পত্তি ঘটে। অথচ, রেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে সরকারি বিধান ভঙ্গ করে তাকে অবৈধভাবে চাকুরি যোগদানসহ তাঁর কারাবাসের ৯দিনকে ‘পারিবারিক ছুটি হিসেবে দেখানো হয়।
শুধু তাই নয়, রেল কর্তৃপক্ষ আবারো সরকারি তথা রেলওয়ের আইন অবজ্ঞা করে চার্জশিটভুক্ত আসামী মামুনকে ওই মাসের (ডিসেম্বর) পুরো হাজিরা দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেতন-ভাতার সুবিধা প্রদান করে।
জানতে চাইলে ডিভিশনাল মেডিকেল অফিসার (ডিএমও) ডা. এসএম মারুফুল আলম, ‘তাঁর (মামুনের) নামে প্রতারণার মামলা, কারাবাস ও পরবর্তীতে মীমাংসার ঘটনা সবই জানি। পত্রিকার সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি জানা ছিল। কিন্তু জনসংযোগ দপ্তর থেকে কোনো পেপার কাটিং বা কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। যার কারণে বিষয়টি জানার পরও আমার কিছুই করার ছিল না। পরবর্তীতে মামুন অফিসিয়ালি পারিবারিক ছুটি নিয়ে তার আবেদন করে। সেই আবেদন সিএমও এবং সিপিও দপ্তর গ্রহণপূর্বক আমার কাছে তাকে যোগদানের বিষয়ে বললে আমিও অফিসিয়ালি তাকে যোগদান করায়।’
এদিকে জুনিয়র পার্সোনেল অফিসার-২ মো. হযরত আলী তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো ডকুমেন্ট নাই সে (মামুন) জেলে ছিল। আর দাপ্তরিকভাবে যেভাবে সম্ভব হয়, সেই ভাবেই তাকে যোগদান করানো হয়েছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আমি কাজটি করেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না।’
বিধি ভেঙ্গে ছুটি প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ পার্সোনেল অফিসার (পশ্চিম) এর পক্ষে ছুটি মঞ্জুরকারী এসএম সেলিম উদ্দীনকে তার মুঠোফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি তা না রিসিভ করেননি।
এদিকে চিফ পার্সোনেল অফিসারের দায়িত্বে থাকা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই সময় আমি এ দায়িত্বে ছিলাম না। তবে ঘটনার আংশিক শুনেছিলাম। কিন্তু পুরো ঘটনা আমার জানা নেই। ঘটনাটি না জেনে কোনো পদক্ষেপ বা মন্তব্য করতে পারবো না।’
বিধি ভেঙ্গে যোগদানের বিষয়টি জানালে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে থাকলে এটা কোনো দিনই সম্ভবই নয়। এটা নিয়মের মধ্যেই পড়ে না।’
ভুক্তভোগী রবীন্দ্রনাথ বলেন, আমার ভাতিজাকে চাকরি দেওয়ার নামে মামুন আমার সাথে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। সেই অর্থ চাইতে গেলে মামুন সহ তার পুরো পরিবার আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এতে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করি। এ ঘটনায় তার বাবা-মা ও ভাই ছাড়া পেলেও মামুনকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। তাঁর প্রতারণা প্রমাণাদি, মামলার অভিযোগ, চার্জশিট এবং অন্যান্য সকল তথ্য আমার কাছে রয়েছে। এতে ঘটনার পরও বহাল তবিয়তে সরকারি নিয়ম ভেঙ্গে চাকরি করছে সে।
জানতে চাইলে চৌকিদার মামুন বলেন, ‘আমার কোন দোষ নাই। আমি এলইপি ছুটির আবেদন করেছি, কর্তৃপক্ষ আমাকে ছুটি দিয়েছে। এর চেয়ে আরো বেশি কিছু চানতে চাইলে সামনা-সামনি আসেন কথা হবে।’ তবে প্রতারণার বিষয়টি জানতে চাইলে রাগান্বিত হয়ে তিনি ফোন কেটে দেন অভিযুক্ত মামুন।
মামুনের বিষয়ে রেল হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডা. সুজীত কুমার রয় বলেন, ‘আমি ২০২০ সালে যোগদান করেছি। কিন্তু ঘটনাটি ২০১৯ সালের। তাই না জেনে এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারবো না।’
এবিষয়ে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘ঘটনাটি আপনার মুখেই এই প্রথম শুনলাম। তবে ঘটনাটি আমার জানা নেই। জেনে এবিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো বলে জানান তিনি।’
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.