প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে,প্রধানমন্ত্রী

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে,প্রধানমন্ত্রী

মতিহার বার্তা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নদী বেষ্টিত দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এই দেশে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ছাড়াও নানা দুর্যোগ আসবে। সেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই আমাদের চলতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে শিখেছি। দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমরা সাইক্লোন শেল্টার, মুজিব কিল্লা নির্মাণ করেছি।

আজ (বৃহস্পতিবার) বিশ্ব পানি দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিশ্ব পানি দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত হন।

‘পানি সবার অধিকার বাদ যাবে না কেউ আর’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এ বছর বিশ্ব পানি দিবস পালিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। অনুষ্ঠানে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া ডেল্টা প্লান ২১০০ এর ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি আমাদের জীবন বাঁচায়। আবার এই পানিই এক সময় বন্যায় ভয়াবহ রুপ নিয়ে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। পানি আমাদের অভিশাপ না হয়ে কিভাবে আশীর্বাদ হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। এসব দুর্যোগ থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। নদী ভাঙনের ফলে নদী এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় মানুষ। আমাদের সেই ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। ড্রেজিং করা হলে আর এই ধরনের শঙ্কা থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য অনেকে মানববন্ধন করেছেন, পদযাত্রা করেছেন, আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন । কিন্তু পারেননি। আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি করেছি। এর আগে বঙ্গবন্ধু গঙ্গার পানি চুক্তি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর গত ২১বছরে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। শুধু তাই নয়, ২১ বছরে নদী ড্রেজিং করা এবং ড্রেজার মেশিন সংগ্রহ করার কোনো উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়নি। আমরা ’৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি ড্রেজার মেশিন ক্রয় করি। আমাদের দেশে উজান থেকে সমস্ত পলি এসে আমাদের নদী ভরাট হয়ে যায় । ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যা শুধু ভেঙে নিয়ে যায় তা নয়, বন্যার ফলে পলি হয় এবং এই পলি হলে প্রচুর ফসল হয। সুতরাং পানি যে সবসময় অভিশাপ তা কিন্তু নয় এটা আশীর্বাদও বটে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদী ড্রেজিং করে পানি ধরে রাখতে হবে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে চল্লিশটি ড্রেজার ক্রয় করেছে । আরও ৮০টি সংগ্রহ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। বঙ্গবন্ধু সে আমলে ৭টি ড্রেজার মেশিন কিনেছিলেন। নদীগুলো ড্রেজিং করলে শুধু পানি নয়, এই পানি দিয়ে আমরা জমির ফসল আবাদ করতে পারবো, ফসলে সেচ দিতে পারবো।

তিনি বলেন, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে আমরা বিশ্বে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছি। নদীগুলো ড্রেজিং করে সচল করলে মিঠা পানির মাছ উৎপাদন হবে। সেই মাছ আমরা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। সাগরে জাহাজের বর্জ্য না ফেলে অন্য জায়গায় বর্জ্য ফেলার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, সাগর এবং নদীতে বর্জ্য ফেলে পানি দূষিত করবেন না, সবাই চেষ্টা করবেন পানি সুন্দর রাখতে, পরিষ্কার রাখতে। যারা নদীর পাড়ে শিল্প-কলকারখানা করেছেন তারা অবশ্যই পানি শোধনাগার করবেন।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি । তারপরেও এটাকে মোকাবেলা করে আমাদের চলতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সমুদ্র উপকূল এরিয়ায় প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। তিনি এ সমস্ত এলাকার অধিবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত গাছ লাগানোর আহ্বান জানান।

বালু মহালের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর দায়-দায়িত্ব জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়েছে। প্রতিবার শুধু একটা জায়গা থেকে বালু না তুলে ঘুরে ঘুরে নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বালু তুলতে হবে। এতে করে ভাঙন রক্ষা পাবে। জলাধার সংরক্ষণ আইন, পানি আইন ২০১৩ ও বিধিমালা করেছি। আমরা শুধু পানির ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ আইন এবং বিধিমালাগুলো করা হয়েছে। তিনি ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।সুত্র: জাগো নিউজ

মতিহার বার্তা ডট কম  ১১ এপ্রিল  ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply