পুরুলিয়ার মাওবাদীর গুলিতে ৫ পুলিশ নিহত, অস্ত্র লুঠ

পুরুলিয়ার মাওবাদীর গুলিতে ৫ পুলিশ নিহত, অস্ত্র লুঠ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝাড়খণ্ডের তিরুলডি থানার কুকড়ু হাটে টহল দিতে বেরিয়েছিলেন কয়েকজন পুলিশকর্মী। আচমকাই মাওবাদীরা তাঁদের ওপরে হামলা করে।

পুলিশের টহলদার টিমকে ঘিরে ধরে গুলি চালায়। পাঁচ পুলিশকর্মী নিহত হন। আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, মাওবাদীরা সংখ্যায় ছিল দু’জন।

তারা ভিড়ের মধ্যে আচমকা গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশকর্মীরা কিছু বোঝার আগেই লুটিয়ে পড়েন। মাওবাদীরা তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র লুঠ করে পালিয়েছে। যেখানে এই হামলা হয়েছে, জায়গাটি পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডি থানা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে বেশ কিছুদিন ধরেই মাওবাদী তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জুনের শুরুতে দুমকার কাছে তালডঙ্গল অঞ্চলে সশস্ত্র সীমা বলের সঙ্গে মাওবাদীদের গুলির লড়াই হয়। এসএসবি-র একজন নিহত হন। আহত হন চারজন।

২৮ মে সরাইকেলায় মাওবাদীরা মাইন বিস্ফোরণ ঘটায়। ১১ জন সিআরপিএফ জওয়ান আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজন শুক্রবারই দিল্লির এইমসে মারা গিয়েছেন।ঝাড়খণ্ডে বহুদিন ধরেই শক্ত ঘাঁটি বানিয়েছে মাওবাদীরা। গত কয়েক বছরে অবশ্য তাদের তৎপরতা কমে গিয়েছিল কিছু পরিমাণে। এর পিছনে দু’টি কারণ ছিল।

প্রথমত অপারেশান গ্রিন হান্ট চালুর পরে মাওবাদীদের বেশ কয়েকজন হতাহত হয়। বন্দিও হয় অনেকে। তাদের মধ্যে মাওবাদীদের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন ছিল। এছাড়া ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছিল ব্যাপকভাবে।

বেশ কয়েকটি মাওবাদী গোষ্ঠী সিপিআই মাওবাদী দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদাভাবে সংগঠন গড়তে শুরু করে। এইসব গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি লেগেই থাকত। তাতেই মাওবাদীরা দুর্বল হয়ে পড়ে।গত এক-দেড় মাসে মাওবাদীরা যেভাবে একের পর এক আঘাত হেনেছে, তাতে ফের চিন্তা বেড়েছে সরকারের।

প্রশ্ন উঠেছে, ফের কি শক্তি ফিরে পাচ্ছে মাওবাদীরা? বছরখানেক আগেই মাওবাদী দলের সম্পাদকের পদ থেকে সরে গিয়েছেন মুপ্পালা লক্ষ্মণ রাও ওরফে গণপতি। তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন।

পার্টির একাংশের ধারণা হয়েছিল, তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির যৌথ অভিযানের মুখে মাওবাদী ক্যাডারদের ঠিকমতো নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। গণপতি অবসর নেওয়ার পরে সিপিআই মাওবাদীর সর্বাধিনায়কের পদে আসেন নাম্বাল্লা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ।

তিনি একসময় মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে মাওবাদীরা আরও জঙ্গি অবস্থান নেবে।পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী তৎপরতা শেষ হয় ২০১১ সালে। ওই বছর বুড়িশোলের জঙ্গলে কিষেণজি ওরফে মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও যৌথবাহিনীর হাতে নিহত হন।

লালগড়কে কেন্দ্র করে মাওবাদীদের যে তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, তা কিষেণজির মৃত্যুর পরেই শেষ হয়। কিন্তু তার পরে এরাজ্যের মাওবাদীদের একটি অংশ ঝাড়খণ্ডে আত্মগোপন করে। তারা মাঝে মাঝে লালগড়ের কোনও কোনও ব্লকে ঢোকে ঠিকই কিন্তু নতুন করে সংগঠন গড়ে তুলতে পারেনি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, ঝাড়খণ্ডে যদি মাওবাদীরা নতুন করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে হয়তো তারা নতুন করে সংগঠন গড়তে চেষ্টা করবে।

মতিহার বার্তা ডট কম – ১৪  জুন- ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply