নিজস্ব প্রতিবেদক: লিবিয়ায় চার যুবককে জিম্মি করে তাদের পরিবার থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায়কালে আদম পাচার চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার রাতে পাচার চক্রের সদস্য খন্দকার সাজেদুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে তুষার (৪০) নামের একজনকে নগরীর পদ্মার পাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারেক নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার হোসেনীগঞ্জ মহল্লার শরিফুল ইসলামের ছেলে। রোববার জেলার তানোর থানায় এ অভিযোগে করা মামলায় তারেককে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার আদালতে তোলা হলে শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে পাচার চক্রের হোতা তারেক গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জিম্মি চার যুবকের সঙ্গে পরিবারের আর যোগাযোগ হয়নি বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। লিবিয়া থেকে কিভাবে তারা উদ্ধার হবেন তা নিয়েও পরিবারের সদস্যরা চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
জেলার তানোর থানার ওসিসহ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, তারেকসহ আদম পাচার চক্রের হোতারা সম্প্রতি রাজশাহীর তানোর উপজেলার হাড়দহ সিলিমপুর গ্রামের জামিল সরদারের পুত্র রাজু আহমেদ, নওশাদ আলীর পুত্র রুবেল আহমেদ, সৈয়দ আলীর পুত্র সাইবত আলী ও মনজুর আলীর পুত্র মোতালেব হোসেনকে দুবাইতে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনে জন প্রতি সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে ১৮ লাখ টাকা আদায় করে।
২৫ মে আদম পাচার চক্রের আরেক হোতা সাজেদুল ইসলাম তানোরের এ চার যুবককে কাতারের বদলে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে ১০ দিন আটক রাখার পর ৪ জুন তাদের লিবিয়াগামী একটি বিমানে তুলে দেয়া হয়। যুবকরা ওই সময় প্রতিবাদ করলে তাদের মারধরও করা হয়।
অভিযোগ মতে, লিবিয়ার একটি শহরের একটি নির্জন বাড়িতে তাদের আটকে রেখে আদম পাচার চক্রের দুই মূল হোতা কুমিল্লার সালাম ও ফারুক ৪ জনের কাছ থেকে আরও ১২ লাখ টাকা দাবি করে। এ টাকা না পেলে ৪ জনকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়।
পাচার চক্রের হোতারা লিবিয়া থেকে চার যুবকের পরিবারের কাছে ফোন করে এবং ফোনে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে তাদের কথা বলায়। যুবকরা নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফোনে জানায়, জনপ্রতি আরও ৩ লাখ করে ১২ লাখ টাকা না দিলে তাদের হত্যা করে লাশ জঙ্গলে ফেলে দেয়া হবে। তারা যেন বাংলাদেশে পাচার চক্রের লোককে দ্রুত টাকা পরিশোধ করেন।
এদিকে আদম পাচার চক্রের হোতারা ১৩ জুন লিবিয়া থেকে আবার ফোন করে চার যুবকের পরিবারকে চাঁদপুর জেলার দুটি এজেন্ট ব্যাংকের শাখায় ও অন্য একটি ব্যাংকের চাঁদপুর শাখার তিনটি হিসাব নম্বর দেয়। টাকা ওই সব হিসাবে দ্রুত দিতে বলা হয়।
লিবিয়ায় যুবকদের জিম্মিকারী সালাম ও ফারুক বাংলাদেশে যোগাযোগের জন্য পাচার চক্রের আরেক সদস্য আশিকুর রহমানের ফোন নম্বরও দেয় যুবকদের পরিবারকে। তারা আশিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা নগদে পরিশোধের প্রস্তাব দিলে পাচার চক্রের হোতারা তাতে সম্মতি দেয় এবং কে টাকা নিয়ে আসবে তার মোবাইল নম্বর পরে দেবে বলে জানায়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শনিবার বিকালে পাচার চক্রের গ্রেফতার হওয়া সদস্য তারেক ৪ যুবকের পরিবারকে ফোন করে ১২ লাখ টাকাসহ সন্ধ্যার পর পদ্মার পাড়ে আসতে বলে। এ পরিস্থিতে যুবকদের পরিবারের লোকেরা নগর গোয়েন্দা পুলিশকে বিষয়টি জানান।
তারেক টাকা নিতে পদ্মার পাড়ে গিয়ে পরিবারের লোকদের ফোন দিলে আগে থেকে ওতপেতে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করেন। রোববার তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
তানোর থানার ওসি খাইরুল ইসলাম জানান, তারেক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চার যুবককে লিবিয়ায় জিম্মি করে রাখা ফারুক ও সালামের বাড়ি কুমিল্লা সদরে। বাংলাদেশে অবস্থানকারী আশিকুর রহমান জিম্মিকারী সালামের ভাই।
আদম পাচার চক্রের সদস্য হিসেবে তারেক রাজশাহীতে সালাম ও ফারুকের এজেন্ট। সালাম ও ফারুকের বিষয়ে পুলিশের আদম পাচার প্রতিরোধ সেলে তথ্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া লিবিয়ায় জিম্মি তানোরের চার যুবককে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু হয়েছে।
মতিহার বার্তা ডট কম ১৮ জুন ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.