শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
বাবা আমাকে বিক্রি করো না, আমি ভালো হয়ে যাব’

বাবা আমাকে বিক্রি করো না, আমি ভালো হয়ে যাব’

মতিহার বার্তা ডেস্ক: সাড়ে চার বছরের ফুটফুটে মনিরা। বয়সের ধর্ম মেনে আর দশটি শিশুর মতোই চঞ্চলতায় দিন কাটানোর সময় তার।

কিন্তু বিরল এক রোগ তার সেই চঞ্চলতা থামিয়ে দিয়েছে। মনের ভিতরে বাসা বেঁধেছে ভয়। বাবাকে বলেছে, ‘আমাকে বিক্রি করে দিও না, আমি ভালো হয়ে যাব।’ মেয়েটির এ করুণ আবেদন কেবল চোখের জল ঝরিয়েছে দিনমজুর বাবার।

তাসফিয়া জাহান মনিরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার গোডাউন পাড়ার মাসুদুজ্জামান মামুনের মেয়ে। ফুটফুটে শিশুটির শরীর ধীরে ধীরে ঢেকে যাচ্ছে কালো লোমে। ইতোমধ্যে পুরো পিঠ জুড়ে কালো লোম আগ্রাসন চালিয়েছে। মুখমণ্ডলসহ বুক-পেটেও লোম গজাচ্ছে। এমনকি মুখের ভিতরেও লোম গজাতে শুরু করেছে।

পরিবারের দুঃশ্চিন্তা, মেয়েটির মুখের লোম বড় হয়ে গেলে তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। খেতে না পারলে মেয়েটা বাঁচবে কী করে?

মনিরার বাবা মাসুদুজ্জামান জানান, তার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার শরীরে কোথাও এমন লোমের আভাষ নেই। কিন্তু ছোট মেয়ে মনিরার জন্মের পর থেকেই শরীরের কিছু অংশে লম্বা লোম দেখা যায়। অল্প কিছুদিনের মধ্যে শরীরে নতুন করে তিলের মত কালো দাগ দেখা দেয়। কালো দাগের সাথে সাথে লোমও গজাতে থাকে। ধীরে ধীরে তা মুখমণ্ডলসহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। দিন যত যাচ্ছে, সমস্যা তত জটিল হচ্ছে।

মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘মেয়ের জন্য আমি আগে এতটা ভাবিনি। বর্তমানে রোগটি খুব বেশি বাড়ছে। আর বাড়ছে কষ্টও। গত কয়েকদিন থেকে মনিরার চিন্তায় কাজেও যেতে পারিনি। আমি গরিব মানুষ। রাজমিস্ত্রির কাজ করি। মেয়ের সুস্থতার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিরা সহযোগীতা করলে আমার মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠবে।’

মনিরার মা তানজিলা খাতুন বলেন, “মনিরা যখন ছয়দিনের শিশু তখন তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে চিকিৎসকরা বোর্ড বসিয়ে মনিরার চিকিৎসা করেন। সেসময় চিকিৎসকরা বলেন, এটি বিরল ধরনের চর্মরোগ। বয়স তিন থেকে চার বছর হলে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আমরা টাকার অভাবে মনিরার উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। আর সে ধরনের সামর্থ্যও নেই। তাই এখন হোমিও চিকিৎসা চলছে।”

তিনি আরো বলেন, ‘মনিরার শরীরের বেশিরভাগ অংশই পশুর মত লোমে ভরে গেছে। এমনকি মুখের তালুতে কালসিটে দাগও ছড়িয়ে পড়েছে। গরমের দিনে মনিরার শরীর থেকে আগুনের মত তাপ বের হতে থাকে। ভেজা কাপড় পরিয়ে দিনরাত ফ্যানের নিচে রাখতে হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে পাখার বাতাস করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তবু গরম কমে না বাচ্চাটির।’

আবেগাপ্লুত হয়ে তানজিলা বলেন, “মেয়ে সব সময় বলে, আমি সাদা হয়ে যাব। ভালো হয়ে যাব। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওর লজ্জাও বেড়েছে। সে বলে, আমি বাইরে গেলে লোকে লজ্জা দিবে। তাই সে এখন বাড়ির বাইরে যেতে চায় না। লোক দেখলেই ঘরের কোনে লুকিয়ে পড়ে। বাবাকে বলে, আমাকে বিক্রি করে দিও না, আমি ভালো হয়ে যাব।” এ কথা বলার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন মনিরার মা তানজিলা।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা মনিরার বিষয়ে জানতে তাদের বাড়িতে যান। সাংবাদিকদের কাছে মনিরা বিরল এ রোগ থেকে সেরে ওঠার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে। সে বলে, ‘কালো লোম আমার শরীরে থাকবে না। আমি সাদা হয়ে যাবো। আমি ভালো হয়ে গেলে আমার লজ্জা লাগবে না। আমি স্কুলে যেতে চাই। পড়াশোনা করব। সবার সাথে খেলা করব।’

স্থানীয় চিকিৎসকরা বলছেন, বিরল এ রোগের চিকিৎসা খুব জটিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ নেওয়া দরকার। পাশের দেশ ভারতেও এর চিকিৎসা রয়েছে বলে জানান তারা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. আফরোজা নাজনিন বলেন, ‘এর চিকিৎসা জটিল। প্লাস্টিক সার্জারি ছাড়া অপশন নেই। এটা এক ধরনের জন্মগত সমস্যা। ঠিক ক্যান্সার জাতীয় নয়, তবে কসমেটিক সমস্যা বলা যেতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটি মূলত চামড়ার রোগ। কোনো ওষুধ খাইয়ে অথবা আক্রান্ত স্থানে কোনো ওষুধ লাগিয়ে এর চিকিৎসা সম্ভব না। একমাত্র প্লাস্টিক সার্জনরাই পারেন এই রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা করতে। অপারেশনই একমাত্র চিকিৎসা। এই রোগকে বিরল রোগ বলা যেতে পারে। কয়েক স্টেপে অপারেশন করতে হবে। সময় সাপেক্ষ অপারেশনের মাধ্যমে বিরল এ রোগটি নির্মূল করা সম্ভব। কিন্তু এ জন্য প্রয়োজন অনেক অর্থ।’

মনিরার দিনমজুর বাবার পক্ষে মেয়ের উন্নত চিকিৎসাতো দূরের কথা, সাধারণ চিকিৎসা করানোরও সামর্থ্য নেই। স্থানীয়ভাবে হোমিও চিকিৎসা চলছে মেয়েটির। তবে হোমিও চিকিৎসায় কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আরো বেশি লোম গজাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়েটির বাবা মাসুদুজ্জামান।

তিনি মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে সমাজের বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। সামর্থবানরা এগিয়ে এলে হয়তো মেয়েটি চিকিৎসা পাবে। সেরে উঠবে ভয়াবহ রোগটি থেকে। আবারো সমবয়সীদের সাথে হেসে খেলে বেড়াতে পারবে। বেঁচে থাকতে পারবে পৃথিবীর আলো হাওয়ায়।

মতিহার বার্তা ডট কম ২৬   আগস্ট ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply