শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
অবৈধ অর্থে ড্রাইভার মালেকের বিলাসী জীবন

অবৈধ অর্থে ড্রাইভার মালেকের বিলাসী জীবন

অবৈধ অর্থে ড্রাইভার মালেকের বিলাসী জীবন

অনলাইন ডেস্ক: তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়ার বামনের টেক এলাকার রাস্তা থেকে সরুগলি পেরিয়ে একটি ফটক। ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় দু’টি ভবন।

 বাম পাশে খালি জায়গা এবং ডান পাশে অন্য একটি ভবন পেরিয়ে ৪২ নম্বর হাজী কমপ্লেক্স। ছয় কাঠা জমিতে ৭ তলা ভবনের মালিক নার্গিস আক্তার। তিনি গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে বাদল হাজী ওরফে ড্রাইভার মালেকের (৬৩) প্রথম স্ত্রী। বাড়ির পাশে পড়ে আছে ১০/১২ কাঠার খালি প্লট। তবে ভেতরে কোনো প্রাডো গাড়ি দেখা যায়নি।

ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সপ্তমতলা পর্যন্ত পুরো সিঁড়ি টাইলস করা। পুরো ভবনটিতে ১৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ভবনের তৃতীয়তলার দরজা দেখেই বোঝা যায় সেখানে ভবন মালিকের বাস। তৃতীয়তলার পুরো অংশে পরিবার নিয়ে বাস করেন ড্রাইভার মালেক। ২০১৪ সালে তিনি এই বাড়িটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন।

আবদুল মালেকের ফ্ল্যাটের সামনে যে দরজা লাগানো আছে, তা কোনো রাজপ্রাসাদ বা রাজহমলের দরজার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দরজাটি সম্পূর্ণ কাঠের, নিপূণ কারুকাজ করা। কারুকাজ নকশা রাজা-বাদশাহদের প্রাসাদের দরজার মত। এছাড়া ফ্ল্যাটের ভেতরেও রয়েছে বিলাসবহুল সাজসজ্জা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি তৃতীয় শ্রেণীর একজন সরকারি কর্মচারীর থাকার জায়গা।

তবে বামনার টেক এলাকায় অনেকেই জানতেন, আবদুল মালেক সরকারি বড় পদস্থ কর্মকর্তা। তার চাল চলন ও আলিশান বাড়ি, দামি সরকারি প্রাডো গাড়িতে চলাফেরা দেখে এলাকাবাসী বুঝতেই পারতেন না যে, তিনি একজন গাড়িচালক।

২০০৯-১০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সখ্য তৈরি করে অন্তত শতাধিক লোকের নিয়োগ-পদোন্নতি-বদলি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ড্রাইভার মালেকের উত্থান ঘটে। এরপর নিজেই সিন্ডিকেট করে অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের টাকা থেকেও ভাগ খেতে শুরু করেন। বনে যান অঢেল টাকা ও সম্পত্তির মালিক। ফলে বিলাসবহুল রাজকীয় জীবনযাপন শুরু করেন।

দক্ষিণ কামারপাড়ায় তার বাসভবনের পেছনে ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ‘ইমন ডেইরি ফার্ম’ নামে একটি গরুর খামার রয়েছে। তবে এই জায়গাটি ড্রাইভার মালেক তার বড় মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলির নামে রেখেছেন। বেলি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী পদে কর্মরত। এর বাইরেও ধানমন্ডির ২৩, ফ্রি স্কুল রোড, হাতিরপুলে পৈতৃক সাড়ে চার কাঠা জায়গার ওপর দশতলা নির্মাণাধীন ভবন আছে।

যদিও আবদুল মালেকের পরিবার দাবি করছে, র‌্যাব তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। যেসব সম্পত্তির কথা উঠে আসছে সেগুলো আবদুল মালকের পৈত্রিক (বাবা) সম্পত্তি। এসব সম্পত্তি অবৈধ টাকায় গড়া নয়।

গ্রেফতার আবদুল মালেকের মেয়ে নাজনীন সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, দক্ষিণ কামারপাড়ায় এই একটি বাড়ি আমার বাবার (আবদুল মালেক)।  আর ধানমন্ডির হাতিরপুলে যে নির্মাণাধীন ভবন সেটি আমার দাদার ছিলো। ওই সম্পত্তিটি নিয়ে আমাদের বাবা-চাচাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে।

পরিবারের দাবি, চাকরি করে মাসে ৪০ হাজার টাকা বেতন পান আবদুল মালেক।

নাজনীন সুলতানা আরও বলেন, ২০১৪ সালে প্রাইম ব্যাংক থেকে ৭০ লাখ টাকা লোন নিয়ে এবং আমাদের টাকা দিয়ে কামারপাড়ার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। এই বাড়ি নির্মাণ করতে এক কোটির বেশি টাকা খরচ হয়েছে। আর র‌্যাব যে গাড়ির কথা বলছে, সেটা তার অফিসের গাড়ি। আমার বাবার কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। কামারপাড়ায় যে ডেইরি ফার্ম রয়েছে সেটি ছিল আমার দাদার। দাদার মৃত্যুর পর আমার বাবা ও চাচাকে দিয়েছে। ওই জমি বাবার পৈতৃক সম্পত্তি।

তিনি বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এসে পুরো বাড়ি তল্লাশি করে কিছুই পায়নি। তারা পরে এক রুম থেকে পিস্তল আর অন্য রুম থেকে গুলি ও জাল টাকা পেয়েছে। কিন্তু এসব কোথা থেকে এসেছে তা আমরা জানি না। ঘরে কিছু না পেয়ে এগুলো দেখিয়েছে তারা। র‌্যাব বলছে, আমার বাবার ১০০ কোটি টাকা আছে। আমরা তো এত টাকা চোখেও দেখি নাই। আর আমার বাবা বিদেশে টাকা কিভাবে পাঠাবে? র‌্যাব বলছে, দুটি বাড়ি। কিন্তু আসলে আমাদের একটি বাড়ি। পাশের বাড়ির মালিকের নাম মো. জিন্নাত।

অবৈধ অস্ত্র ও জাল নোটের কারবার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে গত ২০ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেক ওরফে বাদল হাজী। দক্ষিণ কামারপাড়ার তার ওই বাসভবনের শয়নকক্ষ থেকে অবৈধ অস্ত্র ও গুলি এবং জালনোট জব্দ করে র‌্যাব। পরদিন (২১ সেপ্টেম্বর) র‌্যাব-১ এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) মো. আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে তুরাগ থানায় আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। আবদুল মালেককে দুটি মামলায় ৭দিন করে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আব্দুল মালেকের নিজ বাসায় শোয়ার ঘরে তল্লাশি করে ১ হাজার টাকার ১০০টি (প্রতিটির সিরিয়াল নম্বর ক ক ১৩৬৯৮৭৩) এবং ৫০০ টাকার ১০০টি নোট (প্রতিটির সিরিয়াল নম্বর ৪৩৭০৪৬৮) পাওয়া গেছে। মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে সেগুলো জাল নোট। অভিযানে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আসামি আব্দুল মালককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন, জব্দ করা জাল নোটগুলো তিনি বিক্রির জন্য নিজের কাছে রেখেছেন।

এছাড়া আসামি আব্দুল মালেকের শোয়ার ঘরের খাটের তোশকের নিচে তল্লাশি করে ১টি বিদেশি পিস্তল, যার চকলেট কালারের খাঠের বাট সংযুক্ত ট্রিগারপ্রেস এবং ফায়ারিং পিন সংযুক্ত। তবে পিস্তলের গায়ে কোনোকিছু লেখা নেই। এছাড়া একটি ম্যাগজিন ও ৫ বাউন্ড গুলি (৭.৬৫ KF) পাওয়া যায়। আসামি জব্দ হওয়া অস্ত্রের বৈধ কোনো লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। এসব অবৈধ অস্ত্র-গুলি ও জাল টাকা রাখার দায়ে অস্ত্র আইনে ১৯-এ ধারায় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে ২৫এ এর (বি) পেনাল কোড আইনের ৪৮৯-গ ধারায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

গাড়িচালক আবদুল মালেকের সম্পদের বিষয়ে র‌্যাবের কোনো বক্তব্য নেই উল্লেখ করে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আবদুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। ফৌজদারি আইন লঙ্ঘনের কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। গ্রেফতারের পরে আবদুল মালেকের বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। তিনি অবৈধভাবে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। মালেকের সম্পত্তির বিষয়ে র‌্যাবের কোনো বক্তব্য নেই। বিডি ২৪

মতিহার বার্তা ডট কম: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply