শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
রাবির আইন বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে আইন ভাঙছেন নিজেরাই

রাবির আইন বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে আইন ভাঙছেন নিজেরাই

রাবির আইন বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে আইন ভাঙছেন নিজেরাই
রাবির আইন বিভাগ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে আইন ভাঙছেন নিজেরাই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কমিশন (বিমক) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি ২৩টি পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে। সেই পর্যবেক্ষণের ১৯ নম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়।

সম্প্রতি প্রতিবেদকের হাতে আসা তদন্ত কমিটির এই পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘তদন্ত কমিটির কাছে এক প্রশ্নের জবাবে নিয়োগবঞ্চিত নুরুল হুদা বলেছেন- আমার স্ত্রীর ফোন থেকে অডিও সংগ্রহ করে সহকারী প্রক্টর আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী ইসলাম স্যারের নিকট প্রদান করে। এরপর কীভাবে ভাইরাল হলো সে বিষয়ে আমি জানি না।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিরি সঙ্গে জড়িত ছিল। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভাগের আরও দুইজন শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। তাদের একজন আইন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. শিবলী ইসলাম অপরজন হলেন বর্তমান আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান। এর আগে শিক্ষক শিবলী ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়া’ ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গালমন্দ করার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, আইন বিভাগে শিবলী যখন নিয়োগ পান তখন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় শিবলীর মাস্টার্স (এলএলএম ডিগ্রী) পরীক্ষা সম্পন্ন হয়নি এমনকি অনার্সে প্রথম শ্রেণিও ছিল না। এতে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

সূত্র জানায়, তদকালীন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এম. আনিসুর রহমান বিশেষ কাজে ২-৩ দিন বাইরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন জামায়াতপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল হান্নান। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে প্রশংসাপত্র দেওয়ার এখতিয়ার না থাকার পরও শিবলীকে প্রশংসাপত্র দেওয়া হয়।

আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শিবলী ইসলামের নিকট এসকল বিষয়ে জানতে দু’দিন যাবৎ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিতর্কিত চাকরিপ্রার্থী নুরুল হুদাকে নিয়ে ওই চাকরিপ্রার্থীর স্ত্রী সাদিয়ার কাছে ফোনে (যেই অডিওটি নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল) বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়া জিজ্ঞেস করেন তারা কোথায় কোথায় টাকা দিয়ে বেড়াচ্ছে! এবিষয়টি এডিট করে উপ-উপাচার্যের নাম যুক্ত করে ভাইরাল করা হয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন। অডিও রেকর্ডে চাকরিপ্রার্থী নুরুল হুদা ও আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল হানান্নের মধ্যে দুই লাখ টাকার বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়। এ বিষয়েও তদন্ত করে ইউজিসি।

তদন্ত প্রতিবেদনে ইউজিসি বলছে, ‘অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীর লিখিত বক্তব্য ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে- ভাইভা পরীক্ষার আগে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নিয়োাগপ্রত্যাশী প্রার্থী নুরুল হুদার নিকট থেকে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নীলফামারী সৈয়দপুর শাখা ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তারিখে ৮০০০৭৩৯ ক্রমিকের একটি ব্যাংক জমা স্লিপের মাধ্যমে ২ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।’

তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নুরুল হুদার শ্বশুর বাড়ি সৈয়দপুর ইসলামী ব্যাংকের সৈয়দপুর শাখা থেকে রাজশাহীর আলুপট্টি শাখায় ২ লাখ টাকা জমা হয়েছে ট্রেডার্সের মালিক অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নানের অ্যাকাউন্টে। নিয়োগের উদ্দেশ্যেই শ্বশুরবাড়ি থেকে এই টাকা লেনদেন করা হয়।

উপাচার্যকে এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্যের জন্য পত্র দেওয়া হলে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার সঙ্গে একটি অডিও প্রেরণ করেন। উক্ত অডিওতে অধ্যাপক আব্দুল হান্নান ও নুরুল হুদার কণ্ঠ রয়েছে। নুরুল হুদা আব্দুল হান্নানের নিকট টাকা ফেরত চেয়েছেন।

তবে অধ্যাপক আব্দুল হান্নান তার লিখিত বক্তব্যে জানান, মো. নুরুল হুদার সাথে তার লেনদেনের বিষয়টি একান্তই ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতেই সংঘটিত হয়েছিল। এর সাথে নিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনো সম্পর্ক ছিল না।

শুধু চাররিপ্রার্থী নুরুল হুদা কিংবা শিক্ষক শিবলীর বিষয়টিই নয়, ইতোপূর্বে ব্যক্তিগত জীবনে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লায় জামায়াতের মুফতি পর্যায়ের নেতা শিক্ষক ড. আবদুল হান্নান তার পিএইচডি ডিগ্রীর থিসিসে একটি বিদেশি প্রবন্ধ হুবহু নকল করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছিলেন। জামায়াতপন্থী এই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহানের প্রথম মেয়াদে এ থিসিস জালিয়াতি করেন। এ ঘটনায় ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীরকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ওই শিক্ষককে দীর্ঘদিন বিভাগের একাডেমিক কাজ থেকে সরিয়ে রাখাসহ তার পদোন্নতি আটকে রাখা হয়।

জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল হান্নান বলেন, ‘শিবলীকে সার্টিফিকেট দানের বিষয়টি সঠিক নয়। সেটি এ্যাপেয়ার্ড সার্টিফিকেট ছিল, তা মূলত দেওয়াই যায়। আর নুরুল হুদা আমার খুব কাছের ছাত্র ছিল। সম্পর্ক খুব ভালো থাকায় সে আমাকে বিপদের মূহুর্তে টাকাটি ধার দেয়। আমিও সেটি আমার কথা মতন ফেরত দেই।’

পিএইচডি’র থিসিস জালিয়াতি করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পিএইচডি বিষয়ে কোনো কোনো কথা না বলে ১৯৯১ সালে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ^বিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রি অর্জনের বিষয়ে প্রতিবেদককে জানান। কিন্তু থিসিস জালিয়াতির বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান।

অভিযোগ রয়েছে, শিবিরের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ছিলেন চাকরিপ্রত্যাশী নুরুল হুদা। তার স্ত্রীকেও শিবির নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আইন বিভাগে ভর্তি করায় এই নুরুল হুদা। তাকে রাবিতে নিয়োগ দেয়া ছিল জামায়াতের অন্যতম এজেন্ডা।

নুরুল হুদা বলছেন, ‘এসব বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। যা তথ্য দেওয়ার আমি ইউজিসি’র তদন্ত কমিটিকে বিস্তারিত জানিয়েছি। আর আমি কোন প্রকার সংগঠনের সাথে জড়িত নই। তবে কেউ আমাকে জামাত-শিবির সাজালে তাকে মামলা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। জড়িত থাকলে আমি আর জামাত নেতা ড. আব্দুল হান্নান ও উপ-উপাচার্য ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়ার বিষয়ে ইউজিসিকে তথ্য দিতাম না।

মতিহার বার্তা ডট কম: ০৭ নভেম্বর ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply