স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের রাজশাহীর কোর্ট স্টেশনের চিত্র বদলে যাচ্ছে অচিরেই। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য রেল যোগাযোগের মূলকেন্দ্র হবে এই স্টেশনটি। সে জন্য স্টেশনটির ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে এ কথা জানিয়েছেন।

শনিবার (১৩ মার্চ) বিকালে রাজশাহীর হযরত শাহমখদুম (রহ.) বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তাদের বৈঠক হয়। রাজশাহী সফর শেষে ফেরার পথে সেখানেই এ কথা জানান মন্ত্রী।

এর আগে কোর্ট স্টেশনকে ঘিরে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের সম্ভবনার কথা জানিয়ে এর আধুনিকায়নের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর রেলওয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। সবশেষে রেলমন্ত্রী নিজেও স্টেশনটি পরিদর্শন করলেন। পরিদর্শনের পর মন্ত্রী নিজেও রাজশাহীর সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।

বিমানবন্দরে মন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন, কোর্ট স্টেশনের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি আবদুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত রেললাইনটি ডুয়েল গেজ করা হবে। কোর্ট স্টেশন থেকে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিপণ্য সরাসরি ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এখান থেকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আনা-নেওয়ায়ও করা যাবে। এ ব্যাপারে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ সময় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেলমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

ঢাকায় ফেরার আগে সকালে রাজশাহী মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী। রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশন এবং অপারেশন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আদর্শ রেলওয়ে স্টেশন ও যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার।

কর্মশালায় রেলমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য দেশের রেলওয়ে ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রেল ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে চেষ্টা করে যাচ্ছি। অন্য দেশে রেল মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক প্রভাব বিস্তার করছে। আমাদের দেশেও রেল কেন্দ্রিক অনেকের জীবন ব্যবস্থা চালু আছে। তিনি বলেন, যে অঞ্চলের পাশ দিয়ে রেললাইন গিয়েছে সেখানে রেলকে কেন্দ্র করেই সবকিছচু পরিচালিত হচ্ছে। বিদ্যমান রেলওয়ে ট্র্যাকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে গতি বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন সবকিছুই আমরা করব। ইতিমধ্যেই স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা হচ্ছে। এ বছরের মধ্যে ৫০টি স্টেশনকে সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হবে।

মন্ত্রী সুজন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় করে দিয়েছেন। প্রতিটি জেলায় রেল সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন সমুদ্র বন্দরের সাথে রেল সংযোগ প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সাথে কয়েকটি আন্তঃসংযোগ খুলে দেয়া হয়েছে।

তিনি কয়েকটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন লাইন নির্মাণ প্রকল্প, যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পসহ বর্তমানে রেলওয়েতে অনেক প্রকল্প চলমান আছে। রেলওয়ের ইঞ্জিন বিষয়ে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪০টি লোকোমোটিভ আসছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ইতিমধ্যে ১০টি বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এভাবেই রেলকে ঢেলে সাজানোর জন্য বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।

কর্মশালায় রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদত আলী, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বক্তব্য দেন। এদিকে শুক্রবার রাতে রাজশাহী পর্যটন মোটেলের কনফারেন্স কক্ষে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সভা করেছে রাজশাহীস্থ পঞ্চগড় জেলা সমিতি। বহুল প্রতীক্ষিত পঞ্চগড়-রাজশাহী রুটে ‘বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস’ ট্রেন চালু করায় এই সভায় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে পঞ্চগড় জেলা সমিতি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাবিবুর রহমান রাসেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মজিদ আলি। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর তথ্য ও গবেষণা বিষযক উপকমিটির সদস্য প্রফেসর ড. হাসিবুল আলম প্রধান রেলমন্ত্রীর প্রতি পঞ্চগড়বাসীর কৃতজ্ঞতার বিষয় তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন-আওয়ামী কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আবদুল লতিফ তারিন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্ট্যার কৌশিক নাহিয়ান নাবিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর অনিল চন্দ্র দেব প্রমুখ। অনুষ্ঠানে শিক্ষক ছাত্র, ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাসহ শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

মতিহার বার্তা / ইএবি