শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু গোদাগাড়ীতে মজুত করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দৌঁড়-ঝাঁপ গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার!
গরিব মেধাবী ছাত্র পুলিশের কর্মকর্তা সাকলায়েনের জীবন কাহিনী

গরিব মেধাবী ছাত্র পুলিশের কর্মকর্তা সাকলায়েনের জীবন কাহিনী

গরিব মেধাবী ছাত্র পুলিশের কর্মকর্তা সাকলায়েনের জীবন কাহিনী
গরিব মেধাবী ছাত্র পুলিশের কর্মকর্তা সাকলায়েনের জীবন কাহিনী

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামের পদ্মার পাড়ে জন্ম নেয়া সেই ছেলেটি এখন পুলিশের বড় কর্মকর্তা। তিনি এখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার। বলছি গোলাম সাকলায়েন শিথিলের গল্প। শৈশব আর দুরন্ত কৈশরটা কেটেছে গ্রামে।

পরিশ্রম আর মেধায় তিনি সফলতার পথ খুঁজে পেয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রটি ৩০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান লাভ করেছিলেন। সেখান থেকেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় তার।

মেধার দিক দিয়ে বরাবরই তিনি সবার চেয়ে আলাদা। স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিলেন তিনি। ২০০১ সালে সারদা গভ. পাইলট একাডেমি হাই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৬৩ নিয়ে এসএসসি পাশ করেন।

সেসময় এমন ফলাফল সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। তবে এইচএসসির ফলাফল বেশি ভালো করতে পারেননি সাকলায়েন। এসএসসি পাশের পর উচ্চমাধ্যমিকে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন তিনি।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবার মেরুদণ্ডের সমস্যা থাকায় চিকিৎসার পেছনে খরচ হত অনেক অর্থ। একারণে সাকলায়েন রাজশাহী শহরে মেসে থেকে পড়াশোনার সুযোগ পাননি। সাইকেল চালিয়ে প্রতিদিন চারঘাট থেকে রাজশাহীতে

কলেজ করে আবার বাড়িতে ফিরতেন সাকলায়েন। বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। এলাকায় ছিল না কোন প্রাইভেট পড়ার প্রচলন। এভাবেই চলছিল তার জীবন সংগ্রাম। টাকা না থাকায় প্রাইভেট পড়ার সুযোগ পাননি তিনি। তবে সারদা কলেজের নজরুল স্যার তাকে পরীক্ষার অাগে ১ মাস অংক শিখেছিলেন। এটাই ছিল তার প্রস্তুতির সম্বল। এইচএসসি পরীক্ষাও দিয়েছেন বাড়ি থেকে রাজশাহীতে যেয়ে। এত সংগ্রামের কারণে এইচএসসিতে ফল বিপর্যয় হয়েছে তার। তিনি পেয়েছেন ৩.৮০ জিপিএ।

এমন ফলাফলের পর পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন সাকলায়েন। বুয়েট বা মেডিকেলে পরীক্ষা দিতে হবে এমনটা কখনো মাথায় আসেনি। আর তাই ভর্তি পরীক্ষার জন্য করেননি কোন কোচিংও। এরই মাঝে জানতে পারেন এইচএসসি পাশের পর আর্মিতে কমিশন পদে পরীক্ষা দেয়া যায়। অংশ নেন পরীক্ষায়। সকল ধাপ সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করে যোগ দেন আইএএসএসবি-৫৯ লং কোর্সে মিলিটারি একাডেমিতে। কিন্তু সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না তিনি।বিষয়টি তিনি তার মাকে জানান। পরে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। আবার সেই পুরনো দুরন্ত জীবনে ফিরে যান সাকলায়েন। এর মধ্যে জীবন থেকে হারিয়ে যায় ১টি বছর। ততদিনে বন্ধুরা বিভিন্ন

প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে গেছেন। এবার প্রস্তুতি নিয়ে দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। মোট ১৪ টি বিষয়ে পরীক্ষা দেন। এর মধ্যে ১টি বাদে সবগুলোতেই সফল হন সাকলায়েন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হন তিনি। তবে নিজের কাঙ্ক্ষিত সাবজেক্ট ইংরেজিতে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় মুষড়ে পড়েন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তিনি। এর মধ্যেই সাধারণ জ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে।এসময় সকাল ৬টা থেকে রাত পর্যন্ত করাতেন টিউশনি। নিজে কখনো প্রাইভেট না পড়তে পারলেও গ্রামের খেঁটে খাওয়া মানুষকে সেসময় প্রায় ৬ বছর ধরে পড়িয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। বিনামূল্যে কিনে দিয়েছেন বই।

তার পড়ানো প্রায় ৫০০ ছেলে-মেয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এটাও তার মনে প্রশান্তি যোগায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার পর অংশ নেন ৩০তম বিসিএসে। চয়েস দেন পুলিশ ক্যাডার। এর কারণ তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তখন সারদা পুলিশ একাডেমির পাশেই এক বন্ধুর সঙ্গে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন সারদা বাজারের মসজিদে। সেখানে দেখতে পান লম্বা লাইন দিয়ে একদল ছেলে মসজিদে

ঢুকছে নামাজ পড়তে। এদের মধ্যে সবার সামনে দাঁড়ানো লাল পাঞ্জাবি পরা একটি ছেলেকে দেখে চোখ আটকে যায় সাকলায়েনের। বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন সেই ছেলেটি ২৭ তম বিসিএসে পুলিশে প্রথম। বিষয়টা খুব ভাল লাগে সাকলায়েনের। সেই মূহুর্তে লাল পাঞ্জাবী পরা মানুষটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ মনে হচ্ছিল তার। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেন একদিন তিনিও হবেন মস্ত পুলিশ অফিসার। সেই স্বপ্নকে লালন করে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেন সাকলায়েন।

এরই মাঝে কর্মকর্তা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরীক্ষায় প্রথম হন। একই সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে সফল হন সহকারি উপজেলা অফিসারে। পোস্টিং হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানে সহকারি উপজেলা অফিসার থাকা অবস্থায়ই দেন ৩০তম বিসিএসেরর ভাইভা। যেদিন ফল প্রকাশ হয় সেদিন সারাদিন ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এক কাজিনের মারফত জানতে পারেন বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়েছে। অফিসে নিজের কম্পিউটারটি খুলে পিএসসির ওয়েবসাইটটি লগইন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বার বার। যখন লগইন করতে সক্ষম হন প্রথম শুরু করেন শিক্ষা

ক্যাডার দিয়ে। শিক্ষা ক্যাডারে নিজের নামটি না দেখে হতাশ হন। এরপর দেখেন নিজের প্রথম পছন্দ পুলিশ ক্যাডারের তালিকা। সেখানে প্রথম রোল হিসেবে দেখতে পান নিজের রোল। যেন কিছু বিশ্বাস হচ্ছে না। মাকে খবরটা দেয়া মাত্রই শুরু হয় আনন্দের কান্না। এভাবেই সফলতার পথ দেখেছেন সাকলায়েন। মেধাবী এ কর্মকর্তা নিজের যোগ্যতা ও প্রজ্ঞায় বুনিয়াদী প্রশিক্ষণেও হয়েছেন সেরা। পেয়েছেন বেস্ট প্রবিশনারি অ্যাওয়ার্ড। বেস্ট একাডেমিক এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস্টার্স অব পুলিশ সায়েন্সে হয়েছেন প্রথম। ‘হার্ডওয়ার্ক সাপোর্টেড বাই গুড ইনটেনশন মেকস মিরাকল’ এই প্রবাদটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন সাকলায়েন। সফলতার জন্য পরিশ্রমের বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply