স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে গতকাল সকালে পাঠানো করোনার তথ্যনুযায়ী জেলায় ২৪ ঘন্টায় সংক্রমণের হার ছিল (বুধবার সকাল-বৃহস্পতিবার) ৩৯ দশমিক ৭৯ ভাগ। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিপ্তর রাজশাহীকে গ্রিণ জোন থেকে রেডে জোনে ঘোষণাও করেছে। কিন্তু এতোকিছুর পরেও বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে করোনার বিধি-নিষেধ মানার কোনো বালাই নাই সাধারণ মানুষের মাঝে। এমনকি যাত্রীবাহী বাস, অটোরিকশাসহ গণপরিবহণে মাস্কবিহীন যাত্রী চলাচল করতেও দেখা গেছে। আর শহরের দোকান-পাট ও বিপনী বিতানগুলোতে ভিড় থাকলেও সেখানেও স্বাস্থ্য বিধি মানার প্রবনতা তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। এ নিয়ে ফের রাজশাহীতে করোনার মৃত্যুর হার গত বছরের মতো সর্বোচ্চ আকার ধারণ করতে পারে বলেও শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুন মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রাজশাহীতে করোনার মৃত্যুর হার ছিল সর্বোচ্চ। আগস্টে প্রতিদিন রাজশাহী হাসপাতালে গড়ে ১৬ জন রোগী মারা গেছে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে। এমনকি একদিনে ২৭ জন রগোীর মৃত্যুও দেখেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বেড়ে যায় সংক্রমণের হার। রাজশাহীতে একদিনে সংক্রমণের হার ৫০ ভাগের ওপরে গিয়েও ঠেকে। তবে সেপ্টেম্বর থেকে ধিরে ধিরে কমতে শুরু করে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার। তবে গত কয়েকদিন ধরে আবারো ব্যাপক হারে সংক্রমণ বেড়ে যায়। সর্বশেষ গতকাল সিভিল সার্জনের দপ্তর থেকে দেওয়া তথ্যনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় ৩৯২ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে পজেটিভ ধরা পড়ে ১৫৬ জনের। যার মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন নগরীর বাসিন্দা।
নগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকাগামী যাত্রীরা বাসে ওঠার পরে মাস্ক পরছেন। কিন্তু বাসের জন্য মাস্ক ছাড়ায় অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। বাস্ট্যান্ডের আশে-পাশের দোকানগুলোর সামনেও শত শত মানুষের ভিড়। কিন্তু অধিকাংশের মুখেই নেই কোনো মাস্ক।
জানতে চাইলে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহণের যাত্রী মাইনুল হাসান বলেন, ‘মাস্ক পড়তে মনে থাকে না। তাই তেমন পড়া হয় না। তবে বাসে ওঠার পরে পড়বো।’
দেশ ট্রাভেলসের যাত্রী দিলারা পারভীন অপেক্ষা করছিলেন ঢাকা যাওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমি মাস্ক পড়েছি। কিন্তু অন্যদের মধ্যে অধিকাংশই পড়েনি। তাহলে করোনা রোধ করবেন কিভাবে? মানুষের মাঝে এতোকিছুর পরেও সচেতনতা আসেনি। আগে সচেতনতা দরকার।’
একতা পরিবহনের ড্রাইভার মামুন বলেন, ‘আমাদের পরিবহন সরকারি নির্দেশনা মেনেই চলছে। এজন্য যাদের করোনার টিকা দেওয়া নেই, তাদের আমরা গাড়ীতে ওঠাচ্ছি না। তবে গাড়ীতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক আমাদের। যদিও অর্ধেক সিট ফাাঁকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’
এমপি সাফারি পরিবহনের টিকিট মাস্টার ডাবলু বলেন, ‘অর্র্ধেক সিট ফাঁকা রাখা সম্ভব নয়। যাত্রীদের প্রয়োজনেই সিটের সমান যাত্রী নিতে হচ্ছে। তবে মাস্ক পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। বাইরে থেকে মাস্কহীন অবস্থায় আসলেও বাসে ওঠার পরে মাস্ত দেওয়া হচ্ছে।’
রাজশাহীর রেলগেট এলাকার অটোরিকশা চালক হাদিসুর রহমান বলেন, ‘আমি মাস্ক পড়ে থাকছি। তবে অনেক যাত্রীই উঠছে মাস্ক ছাড়া। আমরা ছোট গাড়ি চালায়। মাস্ক পড়তে বললে অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছে। তাই এখন আর কাউকে বলছি না মাস্ক পড়ার কথা।’
রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, ‘দোকানে মাস্ক পড়েই ব্যবসা করছি। ততে অধিকাংশ ক্রেতাই আসছেন মাস্ক ছাড়া। এখন তাঁদের দোকানে ঢুকতে না দিলে তো আর ব্যবসা হবে না। তবে কেউ মাস্ক চাইলে আমরা ফ্রি দিচ্ছি। তাও মানুষ মাস্ক পড়ুক। কিন্তু কতজনকে ফ্রি দিবো, কতজনকে বুঝাবো আমরা?’
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন আবু সাইদ বলেন, ‘করোনার হার যে হারে বাড়ছে, তাতে আমরা চিন্তিত। কখন না আবার মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। এর জন্য মানুষকে দ্রুত সচেতন হতে হবে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.