শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
২ হাজার কোটি পাচার, যেভাবে উত্থান সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই বাবরের

২ হাজার কোটি পাচার, যেভাবে উত্থান সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই বাবরের

২ হাজার কোটি পাচার, যেভাবে উত্থান সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই বাবরের
২ হাজার কোটি পাচার, যেভাবে উত্থান সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাই বাবরের

অনলাইন ডেস্ক: ফরিদপুরের আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (০৭ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) বিকালে ফরিদপুরের আমলি আদালতের মাধ্যমে বাবরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার হলরুমে এ ব্যাপারে প্রেসব্রিফিং করে জেলা পুলিশ। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. জামাল পাশা বলেন, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহতেশাম হোসেন বাবর দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুরের বিভিন্ন সরকারি দফতরে টেন্ডার বাণিজ্য করেছেন। চাকরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২৬ জুন বাবরসহ একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে সিআইডি বাদী হয়ে রাজধানী ঢাকার কাফরুল থানায় মানিলন্ডারিং মামলা করে। মামলার তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত বছরের ৩ মার্চ বাবরসহ ১০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস।

জামাল পাশা বলেন, ওই মামলায় পলাতক ছিলেন বাবর। তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বাবরকে গ্রেফতার করা হয়।

faridpur-pic--02.jpg3খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

এ মামলায় ১০ জন আসামির মধ্যে এ নিয়ে আট জন গ্রেফতার হলেন। গ্রেফতার আসামিরা হলেন শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তার ছোট ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, সাবেক মন্ত্রীর সাবেক এপিএস এএইচএম ফোয়াদ, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, যুবলীগ নেতা আসিবুর রহমান ফারহান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ফাহিম, যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান ডেভিড। পলাতক রয়েছেন মোহাম্মদ আলী মিনার ও তারিকুল ইসলাম নাসিম। শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী ও যুবলীগ নেতা আসিবুর রহমান ফারহান বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

যেভাবে উত্থান বাবরের

বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর একসময়ে ছিলেন ফরিদপুরের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী মরহুম চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন না বাবর। কিন্তু ওই নির্বাচনে খন্দকার মোশাররফ এমপি ও পরবর্তীতে মন্ত্রী হওয়ায় ধীরে ধীরে ভাইয়ের ক্ষমতা বলয়ে ঢুকে পড়েন বাবর।

২০১০ সালের মাঝামাঝি ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন তিনি। মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবেও ফরিদপুর সদরে বিভিন্ন অফিস আদালতে প্রভাব বিস্তার করেন তিনি ও তার লোকজন। তাদের ছত্রছায়ায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ, পাসপোর্ট অফিস, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরগুলোর টেন্ডার চলে যায় বাবরের নিয়ন্ত্রণে।

কিন্তু পরিচয়ের সংকটে ভুগতে থাকেন বাবর। সরকারি দফতর দখলের পর নিজের পরিচয় দেওয়ার মতো একটি পদবি খুঁজতে থাকেন। ২০১৪ সালে বড় ভাই মন্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে ফরিদপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অস্তিত্বের সংকট ঘোচার পর তিনি আনুগত্যে আসেননি এমন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। নির্যাতনের শিকার তাদের মধ্যে অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মোহাম্মদ ক্যাপ্টেন বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শওকত আলী জাহিদ, ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির ও অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল।

এরপরও থেমে থাকেননি। ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন হতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ২০১৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে বাবরকে সাধারণ সম্পাদক দেখতে চাই লেখা হাজারো ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যায় শহর। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। তারপর থেকে তিনি মনোযোগী হন অর্থ-বিত্তের দিকে। মালয়েশিয়ায় একটি বাড়ি রয়েছে তার। যেখানে তার ছেলে থাকেন। ফরিদপুরের কৈজুরী ইউনিয়নের বাইপাস সড়কের পাশে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেন। এছাড়া বিপুল সম্পত্তির মালিক হন বাবর।

faridpur1বাবরকে গ্রেফতারের খবরে ফরিদপুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

২০১৭ সালে বড় ভাই খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাবরের কাছে টাকা চান বড় ভাই খন্দকার মোশাররফ। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ার ফেলে রেখেই ঢাকায় চলে যেতে হয় বাবরকে। পরে একবার ফরিদপুরে ফিরলেও টিকতে পারেননি। তারপর থেকে ঢাকাতেই থাকতেন মোহতেশাম হোসেন বাবর।

২০২০ সালের ১৬ মে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ১৮ মে এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন সুবল সাহা। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ জুন ফরিদপুরে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ক্ষমতার বলয়ে যারা ছিলেন তাদের প্রায় সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। এরই সূত্র ধরে বাবরসহ খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বলয়ে থাকা নেতাদের নামে সিআইডি অর্থ পাচারের মামলা করে।

এদিকে, খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরকে গ্রেফতারের খবরে ফরিদপুরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরের আলীপুর মোড় এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

আনন্দ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামীম হক, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান মিঠু ও শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক গোলাম মো. নাছির প্রমুখ। পরে মিছিলে আগত লোকজনের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply