অনলাইন ডেস্ক: কোনো ঋণ পরিশোধে রেকর্ড নেই ব্যর্থতার, আর তাই বিদেশি ঋণ পেতে কখনোই বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশকে। কিন্তু দিন যতই ঘনিয়ে আসছে চাপ বাড়ছে একের পর এক মোটা অঙ্কের বিদেশি ঋণ পরিশোধের।
যদিও এ নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর সঙ্গে ব্যয় সংকোচন নীতিতেই সংকট সামাল দেবে সরকার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, তিন বছরেই দ্বিগুণ হবে ঋণ পরিশোধের টাকার অঙ্ক। চাপ সামলাতে তাই বাড়াতে হবে রফতানি আর রেমিট্যান্স আয়।
গত এক দশকে সরকারের নেয়া বেশকিছু বড় প্রকল্প বদলে দিয়েছে উন্নয়ন আর অর্থনীতির ইতিহাস। কখনো কখনো প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গেছে বিশ্ব অর্থনীতির মোড়লদেরও। এর বেশির ভাগই বিদেশি ঋণনির্ভর প্রকল্প হলেও পরিশোধের ক্ষেত্রে কখনোই ব্যর্থ না হওয়ায় চিন্তা করতে হয়নি সরকারকে।
কিন্তু কোভিড আর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের মতো গন্তব্যহীন সংকটে কিছুটা হলেও চিন্তিত সরকার। এই মুহূর্তে চীন-রাশিয়া আর ভারতের কাছে সরকারের ঋণ ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৪ সাল থেকেই এসব ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় চড়া সুদের এ ঋণগুলোই দীর্ঘমেয়াদের ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে।
অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যেসব ঋণগুলোতে আমাদের সুদের পরিমাণ বেশি সেগুলো গ্রেস পিরিয়ডটা শেষ হলে ঋণ পরিষেবাটা শুরু হয়। দুই বিলিয়ন ডলার আমাদের ছিল, সেখানে আমাদের পরিশোধ করতে হবে ৪ বিলিয়ন ডলার। সেই ধরনের ঋণ পরিশোধ শুরু হবে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে। কিন্তু যদি আমাদের রফতানির তুলনায় ও বা রেমিট্যান্সটা আসার তুলনায় যদি ঋণ শোধের পরিষেবার দায়ভারটা বেশি হয় তখন এইটা একটা চাপ সৃষ্টি করবে।
যদিও পরিকল্পনামন্ত্রী মনে করছেন, অজানা সংকটের সামনে অনেকটা অপ্রস্তুত অর্থনীতি সামলাতে হচ্ছে সরকারকে। তবে মোটেই আতংকিত নন উল্লেখ করে আয় বাড়ানোর সঙ্গে ব্যয় কমানোর মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের চাপ সামাল দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঋণ তো নিয়েছি এবং কাজেও লাগিয়ে ফেলেছি, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ খরচ করা হয়ে গেছে, এটার থেকে বের হয়ে আসা মানে এটাও যাবে। সুতরাং আমাদের দাঁতে কামড় দিয়ে শক্তভাবে এই ঝড়ো হাওয়াটা পার হতে হবে। কিছুটা আমাদের রিজার্ভটা নেমে এসেছে তার সংগত কারণও আছে, করোনা, যুদ্ধ এই ২ থেকে ৩টি বিষয় এসে অনিশ্চিত করে ফেলেছে। বিপন্ন নয় সংকট নয় বলে আমি মনে করি। অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে হবে, বেশি কাজে বেশি আয়, কম ব্যয়ে বেশি আয় হবে, এই দুটো মিলোতে পারলে আমরা এই সময়টা পার হবে পারবো বলে আমি মনে করি।
সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্য বলছে, শেষ ১০ বছরে ১২টি প্রকল্পে ২ দশমিক ২ শতাংশ সুদে চীনের ঋণ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। ১ শতাংশ সুদে তিনটি লাইন অব ক্রেডিটে ভারতের পাওনা ৬৯ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। প্রায় ৩ শতাংশ সুদে রূপপুরে রাশিয়ার দেয়া ৯৮ হাজার কোটি টাকা শোধ করতে হবে ২০২৬ সাল থেকেই।
মতিহার বার্তা /এএম
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.