স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতিকালে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বাস ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ ডাকাত চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ডাকাত চক্রের সরদার মূসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামিম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০) ও মামুন (২৪)। র্যাব জানায়, ১০ থেকে ১২ জনের সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকার বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।
এর আগে শুত্রবার রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর অভিযানে চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। আটকের সময় তাদের কাছ থেকে ২টি চাপাতি, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি বাস জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার ২জন ভিকটিমসহ পণ্যবাহী পিকআপ।
শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এশিয়ান হাইওয়েতে র্যাব-১১ এর টহল চলাকালীন সময় একটি ডিম বোঝাই পিকআপের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা যায়। পরে র্যাবের টহল দল পিকআপটির গতিরোধ করে। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে পিকআপ থেকে ২ জন ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে আটক করা হয়। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা বার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদেরকে তল্লাশী করলে চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। ডাকাতির উদ্দেশ্যে যুব কল্যান এক্সপ্রেস লিমিটেডের একটি বাসের মাধ্যেমে ভুলতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়েতে ড্রাইভার ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেন এবং ড্রাইভার ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারপিট করে ও তাদের সাথে থাকা বাসে উঠিয়ে নেয়।
এরপর ডাকাত দলের সরদার মূসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যান এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপের চালক ও হেলপারকে তাদের সাথে থাকা বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যে পিকআপের ড্রাইভার ও হেলপারকে উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুব কল্যান এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাসটি আটক করা হয়। ওই সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদলের সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টাকালে ৪ জন ডাকাতকে আটক করা হয়। ওই সময় অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ডাকাত বাস থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। বাসের ভিতর থেকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধা অবস্থায় পিকআপ-এর ড্রাইভার ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বলেন, ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ভাবে ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।
এই চক্রটি মূলত ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়ে ডাকাতি করে এবং ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে। গ্রেপ্তার মূসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভ্যাব্য স্থান নির্ধারণ করে। এই দলের সদস্যরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার।
দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য টার্গেটকৃত পণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। পরে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা পণ্যবাহী গাড়ীটিকে বাস দিয়ে গতিরোধ করে এবং দ্রুত পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে এলোপাথারি মারপিট করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়। এরপর পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ও তাদের মারপিট করে মুক্তিপণ দাবী করে এবং ডাকাতি শেষে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধাঁ অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।
তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মূসা ডাকাতিকৃত পণ্যবাহী গাড়ীটি চালিয়ে ডাকাতিকৃত পণ্য বিক্রি করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যান এবং মালামাল আনলোড করেন। এছাড়াও ডাকাত দলটি পণ্যবাহী গাড়িটি সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করে অথবা ব্যর্থ হলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কোনো নির্জন স্থানে ফেলে যায়। গত ১ বছর ধরে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লিমিটেডের বাস দিয়ে তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। আগে তারা অন্যান্য বাস অথবা পিকআপ দিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করতো।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.