মিজানুর রহমান: অর্ধশতরান করেছেন বিরাট কোহলী। তবু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছে ভারত। কোনও ক্রিকেটারকে দোষ দিতে চাইলেন না কোহলী। ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত বেছে নিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।
নিজে অর্ধশতরান করেও দলের হার বাঁচাতে পারলেন না বিরাট কোহলী। মহম্মদ রিজওয়ান এবং মহম্মদ নওয়াজের দাপটে সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে পাঁচ উইকেটে হারল ভারত। ম্যাচের পর দলের কোনও ক্রিকেটারকে দোষ দিতে চাইলেন না কোহলী। বরং তাঁর মতে, পাকিস্তান ভাল খেলেছে বলেই যোগ্য দল হিসাবে জিতেছে। ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্তও বেছে নিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক।
সাংবাদিক বৈঠকে কোহলী বলেছেন, “মহম্মদ নওয়াজের ইনিংসটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল। ওকে আগে পাঠিয়ে একটা ফাটকা খেলেছিল পাকিস্তান, যাতে পরের দিকে পরিস্থিতি কঠিন হলে ওদের হাতে উইকেট থাকে। সবাই বাবর বা রিজওয়ানের থেকে বড় ইনিংসের প্রত্যাশা করে। নওয়াজ যদি ১৫-২০ রানের ইনিংস খেলত তা হলে কিছু হত না। কিন্তু ও ৪২ রানের ইনিংস খেলেছে। এ রকম একটা ইনিংস ম্যাচে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। বিশেষত এ রকম টান টান ম্যাচে। ওর ইনিংস থেকেই আমাদের উপর চাপ শুরু হয়।”
১৯তম ওভারে লোপ্পা ক্যাচ ফেলায় গোটা দেশের কাছে খলনায়ক হয়ে গিয়েছেন অর্শদীপ সিংহ। নেটমাধ্যমে সমালোচনা চলছে তাঁর। তবে সতীর্থের পাশে দাঁড়িয়েছেন কোহলী। বলেছেন, “চাপের মুখে যে কোনও খেলোয়াড়ই ভুল করে। এ রকম একটা বড় ম্যাচ, এত কঠিন পরিস্থিতি। আমার মনে আছে, এক বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলাম। সেই প্রথম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা। শাহিদ আফ্রিদির বলে একটা খারাপ শট মেরেছিলাম। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত জেগেছিলাম। শুধু ছাদের দিকে তাকিয়েছিলাম। ঘুমই আসছিল না। ভেবেছিলাম আর কোনও দিন সুযোগ পাব না। আমার কেরিয়ার শেষ। এখন আমাদের দলের পরিবেশ অনেক ভাল। কাল যখন সবাই একসঙ্গে হব, হাসাহাসি করব, সেটা দেখে অর্শদীপ নিশ্চয়ই অনেকটা চাপমুক্ত হবে। আমি দল পরিচালন সমিতিকে কৃতিত্ব দেব। ওরা এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, যেখানে কেউই ব্যর্থতায় ডুবে যায় না। নতুন উদ্যমে ফিরে আসে। এ রকম পরিবেশে যে কোনও ক্রিকেটার চাইবে, আবার সুযোগ আসুক। তখন সে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে দেবে।”
কোহলী নিজেও সেই মন্ত্রে বিশ্বাস করেন। সেই কারণেই বলেছেন, “১৪ বছর ধরে খেলছি। এমনি এমনি তো আর সেটা হয় না। কখনও সমালোচনা নিয়ে ভাবিনি। নিজের খেলার উপর বেশি জোর দিই। বরাবরই সেটা করেছি এবং করে যাব। আমার পদ্ধতি নিয়ে সাজঘরে যত ক্ষণ না কেউ কিছু বলছে, তত ক্ষণ সেটা চালিয়ে যাব। কে কী বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। এটাই জীবনের শেষ নয়। লোকের প্রত্যাশা সব সময় মেটাতে পারব না এটা আমি জানি। বিরতি নিয়ে দলে ফেরার সময় পরিবেশ দুর্দান্ত ছিল। সবাই আমাকে স্বাগত জানিয়েছে। দলের বাঁধনও মজবুত।”
পিচ থেকে অনেকেই মনে করছেন, বোলারদের জন্য কিছুই ছিল না। কোহলীও পরোক্ষে সেটা স্বীকার করলেন। বলেছেন, “আগের ম্যাচের থেকে ভাল উইকেট ছিল। কোনও শিশির ছিল না। আগের ম্যাচে খুব দ্রুতগতির উইকেটে খেলেছি আমরা। আজকের উইকেটে বল থেমে থেমে আসছিল। তাই প্রথমে ব্যাট করছি না শেষে, সেটা খুব একটা বড় ব্যাপার নয়। এখানে যে পরিস্থিতি ভাল বুঝতে পারে, সেই বাজিমাত করে।”
প্রতিপক্ষের প্রশংসা করেছেন কোহলী। তাঁর কথায়, “জানতাম পাকিস্তান বেশ শক্তিশালী দল। ওদের বোলিং লাইন-আপ তো আরও ভাল। আগের ম্যাচেই সেটা আমরা বুঝেছিলাম। দুটো ভাল দল থাকলে লড়াই হবেই। এত সহজে আমরা জিতব এটা ভাবিইনি। আজ সঠিক সময়ে ওরা আমাদের চেয়ে ভাল খেলল।” কোহলীর আক্ষেপ, “আমাদের হাতে যদি আরও দুটো উইকেট থাকত তা হলে রানটা আরও বেশি হত। মাঝের ওভারগুলিতে আমরা অনেকগুলো উইকেট হারাই। তখন উইকেট থাকলে আরও ২০-২৫ রান বেশি হতে পারত আমাদের।”
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.