শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু গোদাগাড়ীতে মজুত করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দৌঁড়-ঝাঁপ গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার!
জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় খলিফা আল-মনসুরের অবদান

জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় খলিফা আল-মনসুরের অবদান

জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় খলিফা আল-মনসুরের অবদান
জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় খলিফা আল-মনসুরের অবদান

ধর্ম ডেস্ক: জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে যেসব মুসলিম খলিফা অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব খলিফা আল-মনসুর। তাঁর পূর্ণ নাম ছিল মূলত আবু জাফর। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করার পর নিজেকে আল-মনসুর (বিজয়ী) বলে ঘোষণা করেন। তখন থেকে তিনি আল-মনসুর নামে বেশি পরিচিত।

তিনি ছিলেন আব্বাসীয় প্রথম খলিফা আবুল আব্বাস আস-সাফফাহর বড় ভাই। আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ ৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তখন আবু জাফর পবিত্র হজ উপলক্ষে মক্কায় ছিলেন। এ কারণে আবুল আব্বাস আস-সাফফাহর মৃত্যুর পর তাঁর ভাতিজা ঈসা তাঁর অনুপস্থিতিতে আবু জাফরের নামে শপথ বাক্য পাঠ করেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে আবু জাফর হজ শেষে দ্রুত কুফায় ফিরে আসেন। এ সময় তিনি মসজিদ প্রান্তরে প্রথম উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন।

তাঁর বড় ভাই আব্বাসীয় খিলাফতের প্রথম খলিফা হলেও তিনি এর ভিত্তি খুব বেশি দৃঢ় করতে পারেননি। কিন্তু আল-মনসুর ক্ষমতা লাভের পর তাঁর দূরদর্শিতা ও কূটনীতির দ্বারা অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রুর মোকাবেলা করে আব্বাসীয় খিলাফতকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। এ কারণেই আল-মনসুরকে কেউ কেউ আব্বাসীয় খিলাফতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলেন।
মনসুরের ব্যক্তিগত জীবন ছিল সুন্দর, নির্মল ও পবিত্র। তিনি ছিলেন একদিকে ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক, পরিশ্রমী, ধৈর্যশীল, দূরদর্শী এবং জনদরদি। তিনি তাঁর বন্ধুদের প্রতি ছিলেন খুবই কোমল আর শত্রুদের প্রতি ছিলেন কঠোর ও নির্মম। ন্যায়নিষ্ঠা, মিতব্যয়িতা, কর্মতৎপরতা ও প্রজাসাধারণের প্রতি দরদি মন তাঁকে সদা কর্মচঞ্চল করে রাখত।

তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও শাসক। তাঁর ন্যায়বিচার ও ন্যায়দর্শিতা ছিল প্রশংসনীয়। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বিচার তাঁর নিজের বিপক্ষে গেলেও তিনি তা মাথা পেতে নিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। একবার কয়েকজন উটের মালিকের অভিযোগে মদিনার বিচারক খলিফা মনসুরকে তাঁর বিচারালয়ে হাজির হতে বলেন। মনসুর বিনা দ্বিধায় বিচারালয়ে উপস্থিত হয়ে সাধারণ আসামিদের মতো বিচারকের সামনে দাঁড়ান। বিচারে মনসুর দোষী সাব্যস্ত হন। মনসুর বিচারকের সৎসাহসের জন্য ধন্যবাদ জানান ও তাঁকে প্রচুর অর্থ দ্বারা পুরস্কৃত করেন।

তিনি দীর্ঘ ২২ বছর খিলাফতের দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে তিনি কোনো রকম অবহেলা করতেন না, নিয়মিতভাবে তিনি রাজকার্য তদারকি করতেন। সকালের দিকে তিনি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের খবরাদি জানতেন এবং প্রয়োজনীয় আদেশ-নিষেধ জারি করতেন। রাজকার্যের প্রত্যেকটি বিষয় তিনি স্বয়ং দেখাশোনা করতেন। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়কদের হিসাব-নিকাশ তিনি কড়াকড়িভাবে তদারকি করতেন। এমনকি দিরহামের কানাকড়ি পরীক্ষা করে দেখতেন, এ জন্য তাঁকে ‘আদ্দাওয়ানিকী’ উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

তাঁর সময় আব্বাসীয় খিলাফত সামরিক শক্তিতেও উন্নতি সাধন করেছিল। তাঁর আমলে রোমান সম্রাট চতুর্থ কনস্টানটাইনকে ৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত করে মালাসীয় দুর্গ পুনরুদ্ধার করা হয়। শুধু তা-ই নয়, তিনি গ্রিক সীমান্তেও নতুন দুর্গ নির্মাণ করেন। এ ছাড়া তাবারিস্তান, আর্মেনিয়া, কুর্দিস্তান ও উত্তর আফ্রিকা জয় করে তাঁর শাসনাধীনে নিয়ে আসেন।

তাঁর শাসনামলে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য তিনি বহু নগর, সরাইখানা, চিকিৎসালয়, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মাণ করেন। এমনকি তাঁর আমলেই মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের উন্মেষ ঘটে। মধ্যযুগের বিশ্বসভ্যতার চারণভূমি সৌন্দর্যের নগরী বাগদাদ প্রতিষ্ঠা তাঁর অমর কীর্তি। তা ছাড়া কুফা ও বসরা নগরীর প্রাচীর, রুসাফা নামক রাজপ্রাসাদ তাঁর উন্নত শিল্প মনের পরিচয় বহন করে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ভীষণ ঝোঁক ছিল। তাই তিনি এই শাখার উন্নতিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতেন। তাঁর সময় থেকে মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসে সোনালি যুগের সূচনা হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপুল সম্পদ সংগ্রহ করে মুসলমানগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে চরম উৎকর্ষ লাভ করে এর তুলনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তাঁর সময়ে সাহিত্য, ইতিহাস, গণিত, চিকিৎসা, দর্শন ও জ্যোতিষ শাস্ত্রের গভীরচর্চা শুরু হয়। তাঁর আদেশে গ্রিক ও ভারতীয় পণ্ডিতদের দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থাবলি অনূদিত হয়। মনসুরের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমান পণ্ডিতগণ জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষা-সভ্যতার পূর্ণ বিকাশ ঘটান।

বিশ্ব সভ্যতায় মুসলিম অবদান গ্রন্থের লেখক নূরুল হোসেন খন্দকার তাঁর ব্যাপারে লেখেন, আল-মনসুর কেবল জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকই ছিলেন না, তিনি নিজেও একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা তাঁর খুব প্রিয় ছিল। রাজকীয় কাজ থেকে একটু অবসর পেলেই তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান সাধনায় ডুবে যেতেন। তাঁকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক বললেও অত্যুক্তি হয় না। কারণ তিনি আরবের প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী। সুপ্রসিদ্ধ ইউরোপীয় ঐতিহাসিক মি. বোসো বলেন, ‘আর জ্যোতির্বিদদের মধ্যে খলিফা আল-মনসুর সর্বপ্রথম।’

তথ্যঋণ : ইসলামের ইতিহাস প্রথম পত্র, বিশ্ব সভ্যতায় মুসলিম অবদান

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply