শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু গোদাগাড়ীতে মজুত করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দৌঁড়-ঝাঁপ গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার!
ইসির তফসিল : জনমনে নানা প্রশ্ন কৌতূহল ও উদ্বেগ

ইসির তফসিল : জনমনে নানা প্রশ্ন কৌতূহল ও উদ্বেগ

ইসির তফসিল : জনমনে নানা প্রশ্ন কৌতূহল ও উদ্বেগ
ইসির তফসিল : জনমনে নানা প্রশ্ন কৌতূহল ও উদ্বেগ

অনলাইন ডেস্ক: নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে প্রায় সপ্তাহ দুয়েক ধারাবাহিক সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। এ ব্যাপারে কোনো সমঝোতা না করে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে সরকারবিরোধী দলগুলো চলমান আন্দোলন কঠোর থেকে কঠোরতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছে। একই ইস্যুতে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলনও তফসিল ঘোষণার দিনই নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলের ঘোষণা দিয়েছে। তবে এসব হুমকি-ধামকি ‘থোড়াই কেয়ার’ করে নির্বাচন কমিশন চলতি সপ্তাতেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে।

উত্তেজনাকর এ পরিস্থিতিতে তফসিল ঘোষণার পর কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে উদ্বেগ ও আতঙ্কের পারদ চূড়ায় গিয়ে ঠেকেছে। তফসিল ঘোষণা নিয়ে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কঠোর আন্দোলন রক্তক্ষয়ী ভয়াবহ সংঘাত-সহিংসতায় রূপ নিতে পারে বলে খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

এদিকে ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করতে সে সময় বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর কঠোর আন্দোলন চলাকালে যানবাহনে অগ্নিসংযোগে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির দুঃসহ স্মৃতি এখন নতুন করে সাধারণ মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। গত ২৯ অক্টোবরের হরতাল এবং এরপর চার দফায় ৯ দিনের অবরোধে যে বিপুলসংখ্যক যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে, আগামীতে বিএনপি-জামায়াতের কঠোর আন্দোলনে তা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে পরিবহণ মালিকরা। এ পরিস্থিতিতে বাস-ট্রাক-কভার্ডভ্যানসহ দূরপাল্লার অন্য যানবাহন দীর্ঘমেয়াদে বন্ধ রাখতে হলে তাদের ব্যবসা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে? কিংবা সরকারের নির্দেশনা মেনে রাস্তায় গাড়ি নামালে পথে কি পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাবে? নাকি স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার বাস চালাতে গিয়ে উল্টো ক্ষতির মুখে পড়বে? পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা আগেভাগেই এ হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানিকারক ও শিল্পকারখানার মালিকসহ সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরাও তফসিল ঘোষণা পরবর্তী সময়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের ভাষ্য, ডলারের উচ্চমূল্য ও সংকটের কারণে খাদ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দামই এখন আকাশছোঁয়া। এ কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা অনেকখানি কমে গেছে। ফলে তাদের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। এর ওপর তফসিল ঘোষণার পর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। যার খেসারত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের সাধারণ মানুষকেই দিতে হবে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না করেই নির্বাচন কমিশন এক তরফা নির্বাচন করার চেষ্টা করলে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ বাড়বে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন কিংবা অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। এর নেতিবাচক প্রভাব শুধু অর্থনীতিতেই নয়, অন্যান্য খাতেও পড়বে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচিতে নির্বাচন কমিশনও মারাত্মক চাপে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলিম বলেন, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মসূচি আসতে থাকলে সেটি কমিশনের ওপর আলাদা চাপ তৈরি করবে। তার ভাষ্য, নির্বাচনের জন্য কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা দরকার হয়। সেখানে এ ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি আসা অব্যাহত থাকলে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বেশ বেগ পেতে হবে।

এদিকে, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সমঝোতা না হলে তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের প্রতিবাদ বিক্ষোভ হতে পারে নির্বাচন কমিশন এটি ধরেই নিয়েছে। তাই এ ইস্যুতে যাতে দেশে কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। সেসব বৈঠকে নানা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে সহিংস হয়ে ওঠা রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করলে সেটি রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ নির্বাচন কমিশনই। তবে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের কিছু বলার নেই। কমিশন ও ইসি সচিবালয়ের দায়িত্ব সঠিক সময় সঠিকভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা। সে লক্ষ্যেই তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে নির্বাচন বিশ্লেষকরা অনেকে ইসি এ ধরনের তৎপরতা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণা করলেই যে নির্বাচন হবে এমন কোনো গ্যারান্টি নেই, বরং তফসিল ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কী পদক্ষেপ নেয়, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের গতিবিধি কোন দিকে মোড় নেয় এবং এতে কতটা জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি হয় তার ওপরই নির্বাচন হবে কি না বা কেমন হবে সেটি নির্ভর করবে।

নির্বাচন বিশ্লেষক প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলছেন, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এখন দৃশ্যত নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টার দিকেই হাঁটছে। ফলে তফসিল ঘোষণা হলে হরতাল অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের রোডম্যাপের চূড়ান্ত করেছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানিয়েছে। তারা কী কৌশল নেয় তার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে। তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো হস্তক্ষেপ করলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করেন, তফসিল ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই হবে না। তাদের ভাষ্য, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো যতই আন্দোলন করুক না কেন এখন পর্যন্ত সরকারকে বাধ্য করার মতো আন্দোলন তারা করতে পারেনি কিংবা ভয় ধরাতে পারেনি। তাদের আন্দোলনে তারা এখন দেশের সাধারণ মানুষকে টানতে পারেনি। তাই নির্বাচন কমিশন চাইবে, এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই নির্বাচন সম্পন্ন করতে। যদিও তফসিল ঘোষণার পর তাদের আন্দোলনের কর্মসূচির কারণে ‘ঝামেলার’ মুখোমুখি হতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন প্রতিহত করতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেই পদক্ষেপগুলোকে বিরোধী দল কিভাবে মোকাবিলা করতে পারবে তা তফসিল ঘোষণার পর পরিষ্কার হবে। এর ওপরই সার্বিক পরিস্থিতি নির্ভর করবে।

এদিকে, বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, একতরফা নির্বাচন ঠেকাতে তারা ইতোমধ্যে হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও বিভিন্ন সরকারি অফিস ঘেরাওয়ের মতো কঠোর কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিরতিহীন আন্দোলনের কৌশল তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, আন্দোলন জোরদার করতে, দলের কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর জন্য, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই আমরা রাজপথে আসব। জেলা পর্যায়ে মহাসড়ক ও সড়কে পিকেটিং বাড়ানোর মাধ্যমে অবরোধ-কর্মসূচি আরও কার্যকর করে, ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ওই নেতা আরও বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্র কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তাই, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত থাকলে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন উঠবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার মনে করতে পারে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু এটা হবে না। তফসিল ঘোষণার পর, নির্বাচন বাতিলের উদাহরণ আমরা দেখেছি। বিএনপি রাজপথে থেকে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply