দুই বন্ধুর দেয়ালে ধরেছে ফাটল

দুই বন্ধুর দেয়ালে ধরেছে ফাটল

বিনোদন ডেক্স: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এমন একটা জায়গা, যেখানে সম্পর্ক জুড়তে বা ভাঙতে সময় লাগে না। ক্ষণে ক্ষণে বদলায় সমীকরণ। যাঁদের বন্ধুত্বের নজির দেওয়া হতো, তাঁরাই পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন, এমন উদাহরণও কম নয়। সলমন খান এবং অক্ষয়কুমারের সম্পর্ক এরই দৃষ্টান্ত।

দুই সুপারস্টারের বন্ধুত্বের কথা সকলেই জানেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক আগের মতো মোলায়েম তো নেই-ই, বরং তাতে ধরেছে ফাটল। ২০২০ সালের ইদ রিলিজ়কে কেন্দ্র করে দু’জনের এই লড়াইয়ের সূত্রপাত। ঘোষণা করা হয়, আগামী ইদে রোহিত শেট্টি ‘সূর্যবংশী’ নিয়ে আসবেন। অক্ষয় এবং ক্যাটরিনা কাইফ কেন্দ্রচরিত্রে। ঠিক তার পরেই সলমন ঘোষণা করেন, সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সঙ্গে তাঁর এবং আলিয়ার ‘ইনশাল্লাহ’ও ইদেই মুক্তি পাবে। দুই সুপারস্টারের সম্মুখসমরে যে কেউই বিশেষ লাভবান হবেন না, এটা জানা কথা। তাই সলমনের অনুরোধে রোহিত তাঁর ছবি এগিয়ে নিয়ে আসেন।

এখানেই গোলমাল বাধে। রিলিজ়ের দিন বদল নিয়ে অক্ষয়ের কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। রোহিত এবং সলমন ফোটোশুট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি জানান। সূত্র বলছে, সেই শুটে উপস্থিত থাকতে অস্বীকার করেন অক্ষয়। রোহিতও এ ক্ষেত্রে অক্ষয়কে খানিক উপেক্ষাই করেছেন। এমনিতেই তিনি ভাইজানের অভয়বাণী পেয়ে গিয়েছিলেন।

তাঁরা দু’জনে একসঙ্গে একটি ছবিও করছেন। অক্ষয়কে বাদ দিয়ে রোহিত আর সলমনের এই যোগসাজশ নিয়ে অনেক কথাই ঘুরছিল ইন্ডাস্ট্রিতে। অক্ষয়ের মৌনতাই বলে দিচ্ছিল, কোনও গোলমাল রয়েছে।

ওই ঘোষণার দিন দুয়েক পরে অক্ষয় একটি টুইট করেন, ‘কিছু দিন ধরে দেখছি, আমার কাছের লোকেরাই নানা নেগেটিভিটি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমার অনুরোধ, এগুলো করবেন না। আমি ‘সূর্যবংশী’ নিয়ে আশাবাদী। চাই ছবিটি ভাল হোক এবং ভাল ভাবে রিলিজ় করুক।’ অভিনেতার এই আপাত নিরীহ টুইট কিন্তু অনেক কথাই বলে দিচ্ছে।

তবে এই সংঘাত আকস্মিক নয়। অনেক দিন ধরেই নাকি অক্ষয় এবং সলমন কোনও অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হওয়া এড়াচ্ছেন। আসলে এর সূত্রপাত ঘটেছিল বছর দুয়েক আগে। সলমন নিজের প্রযোজনায় অক্ষয়কে নিয়ে একটি প্রজেক্ট ঘোষণা করেন।

সহ-প্রযোজক হিসেবে কর্ণ জোহরও ছিলেন সেখানে। তিন নামী ব্যক্তি একটি প্রজেক্টের জন্য একত্রে আসছেন, এটি বড় খবরই বটে। ব্যাটেল অব সরাগরহি নিয়ে ‘কেশরী’ ছবিটি করার কথা ছিল তখন। কিন্তু প্রজেক্ট থেকে সলমন নিজেকে সরিয়ে নেন। পরে অভিনেতা বলেছিলেন, ‘‘যে প্রজেক্টে আমার কিছু করার নেই, সেখানে থাকতে চাই না।’’ অক্ষয় বা কর্ণ কিন্তু সলমনের সরে যাওয়া নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি।

অনেকের মতে, সলমনের এই সরে যাওয়ার পিছনে অজয় দেবগণের ইন্ধন রয়েছে। অজয় আর সলমন বরাবরই ভাল বন্ধু। আর এ দিকে অজয়ের সঙ্গে কর্ণের সম্পর্ক বেশ খারাপ। এই ঘটনায় কর্ণের সঙ্গেও সলমনের সম্পর্ক খারাপ হয়। একটি পার্টিতে সলমন ও কর্ণ বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন, এমন কথাও শোনা যায়।

এই ভাঙনে অক্ষয় আর কর্ণ আরও ঘনিষ্ঠ হন। কর্ণের সহ-প্রযোজনায় ‘কেশরী’ মুক্তিও পায়। কর্ণের ক্যাম্পে পরপর ছবি অক্ষয়ের ‘গুড নিউজ়’, ‘সূর্যবংশী’।

বলিউডে ক্যাম্পবাজির প্রচণ্ড দাপট। এবং এই ক্যাম্পনীতিতে শাহরুখ খানের বিরাট প্রভাব। এঁদের সকলের সঙ্গেই তাঁর ভাল সম্পর্ক। শাহরুখের ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, সলমনের দিকেই অভিনেতার সমর্থন ছিল, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে কিছুই বলেননি।

দুই প্রতিপক্ষই সমান শক্তিশালী হওয়ায় একে অপরকে টক্কর দেওয়ার ঘটনা ঘটতেই থাকে। এর মাঝে সলমনের প্রাক্তন ম্যানেজার রেশমা শেট্টি কাজ করা শুরু করেন অক্ষয়ের সঙ্গে। রেশমার সঙ্গে সলমনের সম্পর্ক শেষ হয় তিক্ততায়। সোহেল এবং আরবাজ় দু’জনের প্রযোজনাতেই কাজ করতেন সলমন।

রেশমা নাকি সে সব জায়গায় জটিলতা সৃষ্টি করেন। সলমন তা জানতে পেরে রেশমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। অক্ষয়ের সঙ্গে কাজ শুরুর পরেই রেশমা নাকি সলমনের ব্র্যান্ডগুলো ভাঙানোর চেষ্টা করেন। যদিও বাস্তবে তা ঘটেনি।

‘বিগ বস’-এর সঞ্চালক হিসেবে অক্ষয়কে পুশ করার চেষ্টাও করেছিলেন, খুব কম টাকায়। কিন্তু ‘বিগ বস’ কর্তৃপক্ষও তাতে আমল দেননি। উল্টে তাঁরা সলমনের পারিশ্রমিক আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ-ও শোনা যায়, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ‘ভারত’ ছাড়ার পিছনে নাকি রেশমাই ছিলেন। তাঁর চরিত্রটির গুরুত্ব নেই, এটাই প্রিয়ঙ্কাকে বুঝিয়েছিলেন।

সলমন খান কিছু ভোলেন না। অক্ষয়ের নানা কাণ্ডের জবাবে তিনি ‘সূর্যব‌ংশী’র দিন বদলে দেখিয়ে দিয়েছেন নিজের ক্ষমতা। লড়াই এ বার কোন পথে এগোয়, তার উপরে নজর থাকবে।

মতিহার বার্তা ডট কম  ২৩ জুন  ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply