রাজশাহী তাহেরপুর পৌরসভা শহররক্ষা বাঁধে ধস

রাজশাহী তাহেরপুর পৌরসভা শহররক্ষা বাঁধে ধস

বাগমারা প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার শহর রক্ষা বাঁধে বিশাল ধস নেমেছে। নদীতে বন্যা ও স্রোত তীব্র হওয়ায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ব্লক বালি মাটি ভেসে যাচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মাথায় শহর রক্ষা বাঁধের এমন করুন পরিনতি হওয়ায় তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আপামর পৌরবাসী। তাদের অভিযোগ শহর রক্ষা বাঁধের কাজ হয়েছে অতি নিম্নমানের, তড়িঘড়ি শেষ করা হয়েছে কাজ এবং ব্লক গুলো তৈরি করা হয়েছে পাথরের সাথে ইটের খোয়া মিশিয়ে।

তাহেরপুর বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পৌরকর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, রাজা কংশ নারায়নের স্মৃতি বিজরিত প্রথম দূর্গা পূজার আবির্ভাব স্থল ঐতিহাসিক তাহেরপুরকে পর্যটন শহর হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষে পৌরসভার উদ্যোগে বেশ কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। এ পরিকল্পনার আওতায় তাহেরপুর ব্রীজ থেকে পুরাতন লঞ্চ ঘাটে পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চারশ মিটার বারনই নদীর তীর সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১৭ সালে।

পরে ওই বছরেই বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য তাহেরপুর পৌর এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ৪ কোটি ৯৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি প্রক্রিয়ায় এ কাজের ঠিকাদার নিযুক্ত হন ১০৯, রাজশাহী নিউমার্কেট এলাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খালেদ মোহাম্মাদ সেলিম। কাজের সময়সীমা দশ মাস নির্ধারন করে ২০১৭ সালের ১০ আগষ্ট কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ মতে, কার্যাদেশ পেয়েও যথা সময়ে কাজ শুরু করেনি ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান। তারা অবজ্ঞা অবহেলায় কাজটি ফেলে রেখে ২০১৮ সালের নভেম্বর ডিসেম্বরের দিকে ওই প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজটি শুরু করে। শুরুতে ৫৮ লাখ টাকার মাটি ভরাটের কাজ করা হয়। ভরাটের কয়েক মাস পার সমুদয় মাটি ধসে গেলে পরে আরো অতিরিক্ত ৪০ লাখ টাকার মাটি ভরাট করা হয়।

তাহেরপুর পিয়াজ হাটার মুদি ব্যবসায়ী ইলিয়াস মোল্লা রাজা, হোটেল ব্যবসায়ী অসীম চন্দ্র ও চা বিক্রেতা ঝুন্টু চন্দ্র সহ ১৫-১৬ জন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহর রক্ষা ওই বাঁধে মাটির ভরাটের পর সেখানে ব্লক ফেলার আগে বালি ভরাটের কথা থাকলেও ঠিকাদার টাকা বাঁচানোর জন্য সেখানে বালির পরিবর্তে আবারো মাটি দিয়ে ভরাটের কাজটি সেরেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টির পানিতে ওই মাটি সরে গিয়ে সেখান ধস নেমেছে।

ব্যবসায়ীরা আরো জানান, একই নদীর পাশ্ববর্তী সাধনপুর বাজারে একই ভাবে ব্লক দিয়ে সাধনপুর বাজার রক্ষা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রায় বিশ বছর হয়েছে সেখানে ব্লক ও বাঁধের সামান্যতম ক্ষতি হয়নি। অথচ তাহেরপুর পৌরসভার শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণের এক মাসের মাথায় তা ধসে পড়ল। অভিযোগ রয়েছে এই পরিমান টাকা মন্ত্রনালয় থেকে ছাড় করে আনতে শতকরা বিশ শতাংশ হারে উৎকোস প্রদান করতে হয়েছে। বাঁকি যে টাকা পাওয়া গেছে তা পৌর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মী ও ঠিকাদারের লোকজনরাই অধিকাংশ ভাগজোক করে খেয়েছে। অবশিষ্ট টাকার কাজ নয়ছয় করে শেষ করা হয়েছে।

ব্যবাসয়ীরা জানান, এখানো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো আরো নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি বেড়েছে। তাদের আশংকা এবারে যে হারে বন্যার পানি ও স্রোতের তীব্রতা বাড়ছে তা করে এই বাঁধ ভেঙ্গে নদীর গতি পথও পরিবর্তন করে তাহেরপুরের বাজারের বেশিভাগ অংশ নদীতে বিলিন হয়ে যেতে পারে। সাধারন পথচারী ও ভ্যান চালকরাও এই বেঁড়ি বাঁধের কাজের মান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এখানে তড়িঘড়ি করে কোটি টাকার কাজ যেনতেন ভাবে শেষ করা হয়েছে। যে ব্লকগুলো ফেলা হয়েছে তাতে বাইরের দিক থেকে পাথরের ফিনিসিং দেওয়া থাকলেও ব্লকের ভিতরে দেওয়া হয়েছে তিন নম্বর ইটের খোয়া। এই ব্লকগুলো রাতের আঁধারে অন্য কোথাও তৈরি করে পরে তা এখানে এনে ফেলা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বাঁধ ধসে পড়লে স্থানীয়রা কিছু ব্লক তুলে এনে সেগুলো উল্টিয়ে দেখনে ভিতরে শুধু ইটের খোয়া। এভাবে অতি নিম্নমানের সামগ্রি এ বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া বেঁড়ি বাঁধের স্থানে স্থানে পানি নিষ্কাশনের জন্য বড় বড় লোহার পাইপ ব্যবহারের কথা থাকলেও সেখানে প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব পাইপের অতিকাংশই এক মাস না যেতেই ভেঙ্গে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক খালেদ মোহাম্মাদ সেলিম বলেন, সেখানে যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমরা তা ঠিক করে দিব। এর জন্য কাজের সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে। এছাড়া ব্লক গুলো শুধুই পাথর দিয়ে তৈরি দাবী করে তিনি বলেন, আমরা রাজশাহীতেই এই ব্লকের কাজ করেছি। কোথাও ইটের খোয়া ব্যবহার করি নাই।

পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদের জানান, বেঁড়ি বাঁধটি প্রাকৃতিক কারনে ধসে পড়েছে। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমাদের করার কিছুই নেই। এখানে কাজের মান ঠিক রয়েছে। ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করা হয়নি। ষোলআনা কাজ বুঝে নিয়ে তবেই বিল পরিশোধ করা হবে। প্রায় একই অভিমত ব্যক্ত করে মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, নতুন ও আলগা মাটির কারণেই বেঁড়ি বাঁধে ধস নেমেছে। তবে এস্টিমেট অনুযায়ী সম্পূর্ণ কাজ বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদারকে কোন বিল পরিশোধ করা হবে না বলে তিনি দাবী করেন।

মতিহার বার্তা ডট কম  ১৬  জুলাই ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply