বিএমডিএ’র দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের নির্ধারিত মজুরি অব্যাহতভাবে কর্তনের অভিযোগ

বিএমডিএ’র দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের নির্ধারিত মজুরি অব্যাহতভাবে কর্তনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদর দফতরসহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত ৩৭৫ জন দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের নির্ধারিত মজুরি থেকে একটি বড় অংশ অব্যাহতভাবে কর্তন করে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি সার্কুলার অনুযায়ী- এসব শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিক মজুরি কত টাকা পাবেন তা নির্ধারণ করা আছে।

কিন্তু নির্ধারিত মজুরি না দিয়ে শ্রমিকদের কম মজুরি দেওয়া হচ্ছে। আর লাভবান হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এতে করে দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের প্রবিধি-৩ অধিশাখা থেকে ‘দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক মজুরি হার পুন:নির্ধারণ’ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করা হয়।

উপ-সচিব মো: গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত ওই সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, কাজের ধরণ বিবেচনায় ইতোপূর্বে যে সকল কার্যালয়ের জন্য কেইস টু কেইস ভিত্তিতে অর্থ বিভাগ কর্তৃক দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক মজুরির হার নির্ধারণ করা হয়েছিল সেসব কার্যালয়ের জন্য নির্দেশক্রমে নি¤œবর্ণিত শর্তে দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক মজুরি হার পুন:নির্ধারণ করা হলো।

বিএমডিএ’র একটি সূত্র বলছে, এই সার্কুলার অনুযায়ী বিএমডিএ সদর দফতরসহ মাঠপর্যায়ে কর্মরত অস্থায়ী ৩৭৫ জন দৈনিক ভিত্তিক নিয়মিত দক্ষ শ্রমিক ৪৫০ টাকা ও অনিয়মিত অদক্ষ শ্রমিক ৪০০ টাকা হারে মজুরি পাবেন।

অথচ এর বিপরীতে দৈনিক ভিত্তিক নিয়মিত দক্ষ শ্রমিককে ৪৫০ টাকার স্থলে ১৮০ টাকা ও অনিয়মিত অদক্ষ শ্রমিককে ৪০০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, ২০১৬ সালের ২৪ মে জারি করা মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত সার্কুলার নিয়ে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের এবং কর্মরত দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই সার্কুলার তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

সেটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য। আর শ্রমিকরা বলছেন, ওই সার্কুলার অনুযায়ীই তাদের মজুরি দেওয়ার কথা। অথচ বিএমডিএ’র কর্মকর্তারা জাতীয় পে-স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ভিত্তিক একাধিক শ্রমিক-কর্মচারী বলেন, কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত মজুরির চেয়ে কম মজুরি দিচ্ছেন। এতে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিনযাপন করছেন।

চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তারা মজুরি কম পাবার কথা কাউকে বলতে সাহস পান না। মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত সার্কুলার থাকলেও তা কাগজে-কলমে। তারা বলেন, এতে করে দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে তারা উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্মচারী লীগের (সিবিএ) সভাপতি মেসবাউল হক দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের নির্ধারিত মজুরির চেয়ে কম মজুরি প্রদানের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত ২৩ মে সিবিএ’র বার্ষিক সাধারণ সভায় নির্বাহী পরিচালকের কাছে ১৬টি দাবি উত্থাপন করা হয়।

এরমধ্যে ১৩ নং দাবি ছিল- দৈনিক ভিত্তিতে (অস্থায়ী) নিয়োজিত কর্মচারীদের মজুরি বৃদ্ধিসহ চাকরি স্থায়ী করা। এসময় নির্বাহী পরিচালক সিবিএ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে পর্যায়ক্রমে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানান তিনি। এছাড়া আটটি দাবির বিষয়ে শ্রম আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানান সিবিএ’র এই নেতা।

মেসবাউল হক আরো বলেন, ২০১৬ সালের ২৪ মে জারি করা মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত সার্কুলার অনুযায়ীই শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএমডিএ’র সচিব রেজাউল আলম সরকার বলেন, আমি ঢাকাই আছি। তাই অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে তথ্য নিতে হবে।

পরে এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বিএমডিএ’র প্রধান সহকারী কাদেরি কিবরিয়া তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের সংখ্যা কতজন- এমন তথ্য প্রদানেও অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, ২০১৬ সালের ২৪ মে জারি করা মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত সার্কুলার বিএমডিএ’র দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

কারণ বিএমডিএ একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। নিজস্ব আয় থেকে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয়। মজুরি নির্ধারণ সংক্রান্ত ওই সার্কুলারটি সরকারি দফতরের শ্রমিকদের জন্য বলে জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রশিদ বলেন, মজুরি কম দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

মতিহার বার্তা ডট কম  ২০ জুলাই ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply