রাজশাহীর অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নিরব প্রশাসন

রাজশাহীর অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নিরব প্রশাসন

রাজশাহীর অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নিরব প্রশাসন
রাজশাহীর অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নিরব প্রশাসন

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে দুই শতাধিক এর বেশি ইটভাটা রয়েছে বিভিন্ন নামে। এসকল ইটভাটা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নাই বেশিরভাগ ইটভাটা মালিকদের।

অবৈধ ইটভাটা গুলোর মধ্যে নগরীর উপকণ্ঠ কাঁটাখালি থানাধীন ইউসুফপুর ইউনিয়নের নওদাপাড়া গ্রামে এম জেড পি ইটভাটা অন্যতম। এই ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় গাছের কাঁচা খড়ি ও ডালপালা। যদিও কয়লার পরিবর্তে গাছের খড়ি ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা আইনত অপরাধ। গাছের গুড়ি জ্বালানি হিসেবে ভাটায় ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষণসহ পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে। ইট ভাটায় ইট তৈরীর জন্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার নিয়ম কয়লা কিন্তু রাজশাহীর বেশিরভাগ ইটভাটাতেই জ্বালানি হিসেবে পুড়ছে গাছের কাঁচা খড়ি ডালপালা। এতে পরিবেশ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এছাড়া অবৈধ ভাবে ইটভাটা পরিচালনার জন্য বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলায় গনিপুর ইউনিয়নের মাদারীগঞ্জ বাজারের শুরুতে রয়েছে দেশ নামের ইটভাটা ও বাজারের শেষেও রয়েছে টাটা নামক ইটভাটা। এই ভাটা দুটির মালিক রতন নামের এক ব্যক্তি।

গত দুই বছর আগে এই দুটি ভাটা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে তৈরি ও কয়লার বদলে গাছের খড়ি ব্যবহারের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত ভেঙ্গে দেয়। কিন্তু চলতি বছরে ভাটা দুটি চালানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ইটভাটার মালিক রতন। আদালতের আদেশ অমান্য করেই আবারো ইটভাটা দুটির কার্যক্রম শুরু করেছে।

ইট ভাটা দুটি কিভাবে চালু করলেন জানতে চাইলে বলেন, গতবার তাড়াহুড়োর কারণে উপর মহলকে ম্যানেজ করতে পারিনি কিন্তু এইবার সেই ভুল আর করিনি।

একই চিত্র দেখতে পাওয়া যায় চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের কাটাখালি থানাধীন নওদাপাড়া বাজার সংলগ্ন এমজেডপি ইট ভাটাতেও। এই ভাটার মালিক মাজদার সরকার। গত বছর এই ইট ভাটাও বন্ধ করে দেয় ভ্রাম্যমান আদালত।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নওদাপাড়া বাজারের পাশে, নওদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাত্র ২শ পঞ্চাশ গজ দূরে জনবসতির মাঝেই এই ভাটা আইন অমান্য করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন প্রায় ১০মণের বেশি জ্বালানি হিসেবে গাছের কাঁচা খড়ি ব্যবহার করা হয় এই ইট ভাটায়। স্থানীয়রা কষ্ট ভরে বলেন, এই ইটভাটার কারণে গাছের ডাব, আম ও ফসল ঘরে তুলতে পারিনা। শুধু তাই না এই ইট ভাটার মালিক মাজদার সরকার এলাকায় পুকুর খনন করে মাটি দেড় কিলোমিটার দূর থেকে ট্রাক্টরে করে ভাটায় নিয়ে আসার কারণে পাকা রাস্তা গুলো ভেঙে গেছে। এই চিকন রাস্তা দিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

তারা আরও বলেন, ডিসি অফিসের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট স্যারের কাছেও অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দিয়েছে তিনি।

জানতে চাইলে এমজেডপি ইটভাটার মালিক মাজদার সরকার জানান, রাজশাহীতে সকল ভাটা যেভাবে চলছে আমারটাও সেভাবেই চলছে এর বাইরে বেশি কথা বলতে পারবোনা বলে জানান তিনি।

রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনির হোসেন জানান, গতবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে সাথী ব্রিকস ও বিশ্বাস ব্রিকস নামে দুইটি অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের কোন ইটভাটায় গাছপালা খড়ি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। যদি কোন ভাটায় জ্বালানি হিসেবে গাছপালা খড়ি ব্যবহার করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইন ২০১৯এর ধারা ৮ (১) (ঘ)ধারা লংঘন করেছে এমন কোন ইটভাটা থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে ও জানান তিনি।

মতিহার বার্তা ডট কম: ১১ নভেম্বর ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply