রাজশাহীতে মশার প্রকোপ বেড়েই চলেছে, কাজ হচ্ছে না ফগারেও

রাজশাহীতে মশার প্রকোপ বেড়েই চলেছে, কাজ হচ্ছে না ফগারেও

রাজশাহীতে মশার প্রকোপ বেড়েই চলেছে, কাজ হচ্ছে না ফগারেও
রাজশাহীতে মশার প্রকোপ বেড়েই চলেছে, কাজ হচ্ছে না ফগারেও

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে মশার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। কিছুতেই কমছে না মশার উপদ্রব। মশা মারতে ফগারের ধোঁয়াও কোনো কাজে আসছে না। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। দিনে-রাতে মশারী টাঙিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে। কোনো জায়গায় বিশ্রামের জন্য বসলেও স্বস্তি নেই। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, মশক নিয়ন্ত্রণে রাসিকের অভিযান চলছে। তারা প্রতিদিনই ফগারে মশক নিধন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে নগরবাসী বলছেন, মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের নেয়া পদক্ষেপ কোনো কাজে আসছে না। ফগারের ধোঁয়ায় রাস্তা-ঘাট অন্ধকার হলেও এর আওয়াজে মশা উড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ফগার মেশিনের ধোঁয়া আর আওয়াজে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে আত্নরক্ষা করছে মশা। ফলে ফগারেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ধোঁয়া সরে গেলেই আবার চারদিক থেকে মশা মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী মোতাহার হোসেন জানান, ফগার মেশিনের ওষুধ ছিটানোর পরই বিছানায় ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। কম্পিউটার অপারেটর ইসমাইল হোসেন জানান, বিছানায় শুতেই মশারির ফাঁক দিয়ে মশা ঢুকে যাওয়ায় সারারাত ঘুমাতে পারিনি। অথচ এখানে ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানো হয়েছে। এভাবে অভিযান চললেও মানুষ মশার কামড় থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

ফগারেও মশা মরছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর সাইফুল ইসলাম বলেন, ফগার ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত আওয়াজ ও ধোঁয়ার অন্ধকারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে গিয়ে মশা নিজেকে রক্ষা করছে। ফগারে ডিবিসাইপার ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তা সঠিকভাবে হচ্ছে কি না দেখতে হবে। কারণ ফগার মেশিন বন্ধ হলে কিংবা ধোঁয়া দূর হয়ে গেলে তা থেকে কেরোসিনের গন্ধ বের হয়। এ থেকে অনুমান করা যায় ফগার মেশিনে কেরোসিন তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ওষুধে অ্যাডাল্ট মশা মরবে না। কেরোসিনের সাথে পানি মিশিয়ে শুধু মশার লার্ভা ধ্বংস করা যায়, অ্যাডাল্ট মশা এতে মরে না বলেই মনে হয়। তিনি আরও বলেন, বাড়িতে অ্যাডাল্ট মশা নিধনের জন্য অ্যারোসল জাতীয় ওষুধ স্প্রে করা হয়।

শীতের সময় মশা থেকে অনেকটা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে ছিল নগরবাসী। এখন গরম পড়তে শুরু করেছে। সাথে সাথে বেড়েছে মশার উৎপাত। এ সম্পর্কে তেরোখাদিয়ার কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইউনুস আলী বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রাসিকের মশক নিধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু এতেও মশা নির্মূল হচ্ছে না। বরং আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মশা। বাড়ির রান্না ঘরে, শোবার ঘরে, নামাজের সময় কিংবা খাবার খেতে বসে মশার কামড়ে নাজেহাল হচ্ছে মানুষ। এমনকি মশার কয়েলেও মশাকে জব্দ করা যাচ্ছে না। কাঁচা বাজার, দোকানপাট, মসজিদ, মন্দিরসহ নগরীতে সবে গড়ে ওঠা এলাকার ঝোঁপ-জঙ্গল এখন মশার খামারে পরিণত হয়েছে। ড্রেনে ময়লা আবর্জনা জমে পচন ধরা পানিতে মশা ডিম পাড়ে। এ লার্ভা থেকেও মশা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ী গোলাম রসুল বাবলু বলেন, আরডিএ মার্কেটে এখন মশার উৎপাত বেড়েছে। আশপাশেই কাঁচাবাজার। এ সব বাজারে প্রচুর মশা। গত কয়েক দিন ধরে মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হয়ে আসছে ঠিকই, কিন্তু এতেও মশার উপদ্রব কমছে না। মশার কামড়ে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে না।

নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের দোকানগুলোতে এখন প্রচুর মশা। মশার কামড়ে দোকানে বসে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, খেতে বসে মশা, ঘুমাতে গিয়ে মশা, বাথরুমে বসে মশা, এমন কি বাসে, ট্রেনে উঠেও মশা কামড় দিচ্ছে। যেখানে সেখানে চলছে মশার কামড়। সুযোগ পেলেই কামড় বসাচ্ছে। কোথাও গিয়ে রক্ষা নেই। শহরের নিম্নাঞ্চল আর নগরীর ড্রেনসহ বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা আবর্জনা মশার নিরপদ প্রজননস্থল হয়ে উঠেছে।

জানা গেছে, মশার কামড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুজ্বর হচ্ছে। দেশব্যাপী দেখা দিয়েছে গোদরোগ। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার পর এবার মশার কামড় থেকে ছড়াচ্ছে গোদরোগ বা ফাইলেরিয়া। সে জন্য মশক নিধন এবং পরিষ্কার পরিছন্নতার বিকল্প নেই।

সচেতন মহল বলছেন, রাজশাহীতে ডেঙ্গু বিস্তার না হলেও মশার যে দাপট বেড়েছে তাতে এখনও হয়তো ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া হয়নি। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে ভবিষ্যতে ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে পড়তে কতক্ষণ। তাই এখনই মশক নিধনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ খুবই জরুরি।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান বলেন, ‘রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত মশা নিধনে রাসিকের তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। যার কারণে শুধু বাড়ি-ঘরেই নয়, বাইরেও কোথাও বসে থাকার উপায় নেই।

তিনি যোগ করেন, ‘যদি রাসিকের প্রত্যেক ওয়ার্ডে ড্রেন ও আশপাশের জঙ্গল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলতো এবং নিয়মিত ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ দেয়া হতো তবে এ সমস্যার উত্তোরণ ঘটত।

রাসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা ডলার বলেন, ফগারমেশিনে মশক নিধন অভিযান চলছে। এখন মশার প্রজননের সময়। এ ব্যাপারে নগরবাসীর সহযোগিতা চাই। আশা করি মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply