রাজশাহীতে বিএনপির চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

রাজশাহীতে বিএনপির চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

রাজশাহীতে বিএনপির চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
রাজশাহীতে বিএনপির চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুসসহ দলটির চারজন নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ (আমলী আদালত বোয়ালিয়া) এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলায় অপর তিন অভিযুক্ত হলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বার্হী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জাতীয় নির্বার্হী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।

মামলাটির বাদি হলেন রাজশাহী মহানগর আ’লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোসাব্বিরুল ইসলাম। তার আইনজীবী হিসেবে মামলাটি আদালতে দাখিল করেন মহানগর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার। আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। একই সাথে মামলার বাদীর জবানবন্দীও গ্রহণ করেছেন আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলাম। তবে আদালত তাৎক্ষণিকভাবে কোন আদেশ দেননি। নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদেশ দেয়া হবে।

মামলা দায়েরকালে রাজশাহী মহানগর আ’লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, মহানগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ দলীয় নেতাকর্মীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২ মার্চ রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মিজানুর রহমান মিনু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা ও তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার’ ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন বলে মহানগর আ’লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে মহানগর আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টি। মিনুকে জাতির সামনে ক্ষমা চাইতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় আ’লীগ। অন্যথায় মামলা করারও ঘোষণা দেয় আ’লীগ। আর ওয়ার্কার্স পার্টি মিনুকে গ্রেফতারের দাবি জানায়। মিনু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার’ ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন অভিযোগ তুলে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান।

আল্টিমেটামের ৭২ ঘণ্টা পর মিনু গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ওই সমাবেশে দেয়া নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে ক্ষমা না চাওয়ায় আ’লীগের পক্ষ থেকে গত ৯ মার্চ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনটি জমা দেয়া হয়।

জেলা প্রশাসক সেটি প্রাথমিক তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে পাঠান। তদন্ত শেষে পুলিশ জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন দেয়। এরপর জেলা প্রশাসক মামলার আবেদনটি অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। মন্ত্রণালয় মামলার অনুমতি দিয়ে আবেদনটি আবার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠায়। এরপর মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্রসহ আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলায় বলা হয়, গত ২ মার্চ রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির এই চার নেতা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার উৎখাতের অসৎ উদ্দেশ্যে নেতাকর্মী, সাংবাদিক, আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে মিজানুর রহমান মিনু প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘হাসিনা রেডি হও, আজ সন্ধ্যার সময়, কালকে সকাল তোমার নাও হতে পারে, মনে নাই পঁচাত্তর সাল? পচাত্তর সাল মনে নাই?’

এতে আরও বলা হয়, মিনুর এই ঘোষণার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উগ্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। দলটির কিছু নেতাকর্মী সমাবেশের এই বক্তব্য ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করেন। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুসহ অন্যরাও একইভাবে বক্তব্য দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন এবং বেআইনিভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকার উৎখাতের হুমকি দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাসহ নির্বাচিত সরকার উত্থাতের প্রকাশ্য ঘোষণা ও হুমকি দিয়ে তারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ করেছেন। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি বিপদজনক ও হুমকিস্বরূপ। তাই এই মামলা করা হলো।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply