ভাত খাবো, ভাত, পেটভরে ভাত খাইলেই দুনিয়ার সব শান্তি…! বর্ণিল রঙের পাশেই বিবর্ণ জীবন

ভাত খাবো, ভাত, পেটভরে ভাত খাইলেই দুনিয়ার সব শান্তি…! বর্ণিল রঙের পাশেই বিবর্ণ জীবন

ভাত খাবো, ভাত, পেটভরে ভাত খাইলেই দুনিয়ার সব শান্তি...! বর্ণিল রঙের পাশেই বিবর্ণ জীবন
ভাত খাবো, ভাত, পেটভরে ভাত খাইলেই দুনিয়ার সব শান্তি...! বর্ণিল রঙের পাশেই বিবর্ণ জীবন

শাহিনুর রহমান সোনা: বর্ণিল রঙের পাশেই বিবর্ণ জীবন…অবিরত বর্ণিল রঙের ধারার পাশেই প্রবাহিত হচ্ছে বিবর্ণ জীবনধারা। সৃষ্টির এ এক অবুঝ লীলাখেলা। নবনির্মিত বর্ণিল রঙের কারুকাজ করা ব্রীজের নিচে পদ্মার পাড়ের বস্তির কুঁড়ে ঘরে বাস করে শিশু রাহান, কুরবান, সুরাইয়া’রা।

রাজশাহী নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বিস্তীর্ণ পদ্মার পাড়। নগরীর শাহ্ মখখদুম (রা:) স্মৃতিবিজড়িত দরগা গেটের বিপরীত পাশেই গড়ে উঠেছে মনোরম একটি ব্রীজ…যাতে রয়েছে নানা রঙে আঁকা সুন্দর শিল্পকর্ম। রাজশাহী নগরীর বিনোদন প্রিয় মানুষগুলো প্রতিদিন-ই ছুটছেন ব্রীজটি দেখার জন্য। পরিবার পরিজন আর শিশুদের নিয়ে সেখানে কাটাচ্ছেন সুন্দর কিছু মুহূর্ত। বেড়ানোর সাথে সাথে তারা নানা রকম মুখোরোচক খাবার খাচ্ছেন আর বাচ্চাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন হাওয়াই মিঠাই, বেলুন, চকলেট সহ নানা রকমের আবদার উপকরণ।

ব্রীজের ঠিক নিচেই থাকে বস্তির শিশু কুরবান (৬), সুরাইয়া (৫) আর রাহান (৮)। কুরবান আর সুরাইয়ার মা কুটি (৩০) মানসিক ভারসাম্যহীন, বাবা ওয়াদ আলী রাগারাগি করে কোথায় চলে গেছে কেউ জানে না।রাহান (৮) এর মা আজিরন (৩৫) আর বাপ দিন মজুর জলিল (৪৬)। তারা দরগাতে চেয়ে চিনতে দিন পার করে।

কুরবান, সুরাইয়া, রাহান’দের পড়াশোনা আর ভালো পোশাক জোটেনা, জোটেনা প্রতিদিনের পেটভরে খাবার মত দু’মুঠো ভাত। তাদের অভিভাবকরা জানে না শিশু অধিকার কি ? শিশু গুলোও জানে না আজ জাতীয় শিশু দিবস, যে দিবসে জন্মেছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ! হয়তো তিনি থাকলে সোনার বাঙলার আজ এ দূর্দশা থাকতো না !

ছলছল দৃষ্টিতে কুরবান তাকিয়ে থাকে সুবিশাল আকাশের দিকে…হয়তো সৃষ্টি কর্তাকেই খু্ঁজে ফেরে তার দু’চোখ। জিগ্যেস করতেই বললো, ওসব আমরা খাইনা, ওতে কি পেট ভরে…?? ভাত খাবো, ভাত, পেটভরে ভাত খাইলেই দুনিয়ার সব শান্তি…! হাওয়াই মিঠাই, চকলেট আর বেলুন তো বড় লোকের বাচ্চাদের জন্য, আমরা ওসব কি করবো ??

উল্লেখ্য, নগরীর দরগাপাড়ার দরগার মূল গেটের সামনেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর উদ্যোগে তৈরী করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন একটি ব্রীজ। ব্রীজটির ঠিক নিচেই নদীর ধারে চারটি অসহায় হতদরিদ্র পরিবার কোন রকম ঝুপড়ি তুলে বসবাস করে। ১৯৫৭ সালে নদীতে সব খেয়ে নেয়া বরিশালের এতিম নবাব আলী (৮২), ৪০ বছর আগে মাগুরা থেকে আসা সহায় সম্বলহীন মতিয়ার রহমান (৭০), মানুষিক ভারসাম্যহীন বিউটি ওরফে কুটি(৩২) আর দিনমজুর জলিল মিয়া (৭০)… এই মিলে চারটি পরিবার এখানে থাকে।

নবাব আলী বলেন, আমাদের কোথাও থাকার জায়গা নেই, এ কারনে এখানে ঘর তুলে থাকি, অনেক দিন হলো, কোনরকম ভাবে দু’বেলা দু’মুঠোভাত জোগাড় করে বেঁচে আছি। কিন্তু ব্রীজটি হবার পর থেকেই নানান মানুষ নানান কথা বলছে। কেউ বলছে, এখানে রেস্টুরেন্ট বানাবো, তোরা অন্য কোথাও চলে যা, আবার কেউ বলছে তোদের এই ঘর গুলোর জন্য সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। আমাদেরতো আর কোথাও যাবার জায়গা নাই, যাব কোথায় ? তবে আমরা জানি, আমাদের এই দু:খ দূর্দশার কথা যদি নগর পিতা এএইচএম খায়রুজজামান লিটনের কানে পৌছায়, তাহলে তিনি নিশ্চয় আমাদের জন্য একটা ব্যবস্থা করবেন।

মানষিক ভারসাম্যহীন বিউটি ওরফে কুটি বলেন, আমরা এখান থেকে কোথাও যাব না, একটু একটু করে মাটি তুলে ভরাট করে আমরা এখানে ঘর বানিয়েছি ; প্রতিবছর বর্ষার সময় আমাদের ঘরে পানি উঠলে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নীচে দিনের পর দিন কাটাতে হয়, তবুও এখানেই থাকি, আল্লাহ্‌র দুনিয়ায় আর তো কোন কিছুই নাই আমাদের।

দিনমজুর বৃদ্ধ মতিয়ার রহমান(৭০) বলেন, শুনতে পাই এদেশে কেউ নাকি ঘরহীন থাকবে না, বিভিন্ন জায়গায় ভূমিহীনদের জন্য সরকার ঘর বাড়ি দিচ্ছ ; আমরাও তো ভূমিহীন, তাহলে আমরা কি একটা স্থায়ী বসবাসের জায়গা পাবোনা ??

দরগার সামনের বস্তির এই পরিবারগুলো আর আশপাশের অনেকেই মনে করেন রাজশহীর নগর পিতা এএইচএম খায়রুজজামান লিটন জানলে নিশ্চয় তাদের একটা সুব্যবস্থা হবে ! যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ অসহায় পরিবারগুলোর পাশে এসে দাঁড়াক, শিশু গুলোর অধিকার সংরক্ষিত হোক, আজকের মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে এরকম প্রত্যাশাই করছেন সাধারণ মানুষ !

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply