স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূত কর্মকান্ডে অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকায় সব প্রকার ইমারত নির্মাণে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র (এনওসি) ও নকশা (প্ল্যান) অনুমোদনের এখতিয়ার শুধুমাত্র আরডিএর। কিন্তু এ আইনটির কোনো তোয়াক্কা করছে না কাটাখালী পৌরসভা। পৌরসভা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে দেওয়া হচ্ছে এনওসি। এর বিনিময়ে তারা বাড়ি বা ভবন মালিকদের কাছ থেকে আদায় করছে মোটা অঙ্কের টাকা। পৌরসভার আওতায় ৬ হাজারের বেশি বাড়ি রয়েছে। এসব বাড়ি থেকে শুধু এনওসি ফির নামে শত কোটি টাকা আদায়ের টার্গেট নিয়ে মেয়র লোকজনকে মাঠে নামিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মেয়র আব্বাস আলী পৌর পরিষদের সভা করে প্রতিটি একতলা ভবন থেকে ১০ হাজার টাকা এবং পরবর্তী প্রতিটি তলার জন্য ৫ হাজার টাকা করে আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন। টিনশেড বাড়ির জন্য ২ হাজার টাকা ফি ধার্য করেন। বেআইনি এ সিদ্ধান্তের পর পৌরসভার সচিব নোটিশ জারি করেন। প্রতিটি ভবন বা বাড়ি মালিককেই এ ফি দিতে হবে বলে জানানো হয়। শুধু তাই নয়, আরডিএ থেকে এনওসি ও প্ল্যান নিয়ে যারা আগে বাড়ি বানিয়েছেন তাদের কাছ থেকেও এনওসি ফি আদায় হচ্ছে। আবার যারা নতুন বাড়ি নির্মাণ করছেন বা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদের কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে এনওসি ফি। যারা টাকা দিতে অস্বীকার করছেন পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বাড়ি বা ভবন ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।

কাটাখালী পৌরসভা কোন আইনে এনওসি ফি আদায় করছে এমন প্রশ্নের জবাবে পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শক আব্দুল আজিজ সাংবাদিকদের জানান, পৌর পরিষদের সিদ্ধান্তক্রমে তিনি ফি আদায় করছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে কাটাখালী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রৌউফ দাবি করেন, পৌরসভার আইনে এ ধরনের ফি নেওয়ার এখতিয়ার তাদের আছে। কোন সালের আইনে এটা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখে বলতে হবে। এখন মনে পড়ছে না। ইতোমধ্যে ৩২ জনের কাছ থেকে এনওসি ফি আদায় হয়েছে এবং কিছু আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী সাংবাদিকদের জানান, পৌর এলাকাতে কেউ বাড়ি বা ভবন করতে চাইলে আমরা ভূমির ছাড়পত্র (এনওসি) দিচ্ছি। নির্ধারিত ফি আদায় করছি। পৌরসভা থেকে লোকজন পাঠিয়ে জরিপ করে তারপর অনুমতি দিচ্ছি। আরডিএর অধিক্ষেত্রের ভেতরে থাকা কাটাখালী পৌরসভার এ ধরনের কাজ করার কোনো আইনি এখতিয়ার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আরডিএর সঙ্গে আমাদের ঝামেলা চলছে। আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সব ঠিকঠাক করব।

তবে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী ও জোন-৩ এর অথরাইজড অফিসার আব্দুল্লাহ আল তারিক জানান, কাটাখালী পৌরসভা আরডিএর অধিক্ষেত্রের ভেতরে থাকা একটি এলাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১৭ সালের ২২ জুন ও ২০০৯ সালের ৫০ (১) (গ) ধারা বলে যেসব পৌরসভা এলাকা সরকার গঠিত কোনো বিধিবদ্ধ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলাকাবহির্ভূত, শুধু সে সব পৌরসভা ইমারত বিধি অনুযায়ী এনওসি ও প্ল্যান দিতে পারবে। কাটাখালী পৌরসভা যেহেতু আরডিএর আওতাধীন এলাকা সুতরাং তারা ভবন বা ইমারত নির্মাণে কোনো এনওসি অথবা নকশা দিতে পারবে না। এটা পুরোপুরি বেআইনি। কারণ ভবন বা ইমারত নির্মাণে এনওসি ও প্ল্যান দেওয়ার এখতিয়ার শুধু আরডিএর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশন সংলগ্ন ২৪ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকার কাটাখালীকে ২০০২ সালের ১৫ ডিসেম্বর পৌরসভা ঘোষণা করে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ৩৬ হাজার ৭৮৫ জনসংখ্যার কাটাখালী পৌরসভায় ৬ হাজার ৪০৯টি পরিবার রয়েছে। এ হিসাবে পৌর এলাকায় ৬ হাজারের কিছু বেশি বাড়ি রয়েছে। পৌর এলাকায় দুই হাজারের বেশি একতলা বাড়ি, ১ হাজার ৮৬০টি দুই তলা এবং দেড় হাজার তিন, চার, পাঁচ ও ছয়তলা ভবন রয়েছে। বাকিগুলো টিনশেড বাড়ি। সেই হিসাবে এনওসি ফি থেকেই কাটাখালী পৌরসভায় বাড়ি মালিকদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আদায় হওয়ার কথা।

মতিহার বার্তা / এফ কে