টিটিসিতে ভুয়া ট্রেনিং: চাকরির নামে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, আটক -২

টিটিসিতে ভুয়া ট্রেনিং: চাকরির নামে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, আটক -২

টিটিসিতে ভুয়া ট্রেনিং: চাকরির নামে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, আটক -২
টিটিসিতে ভুয়া ট্রেনিং: চাকরির নামে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ, আটক -২

স্টাফ রিপোর্টার: সারকারি হাসপাতালে ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভনে ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর শাহমখদুম থানা পুলিশ। চক্রটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী লিমিটেডে (নেসকো) চাকরি দেওয়ার নামে ১১ জন প্রার্থীর থেকে বিভিন্ন সময় নগদ টাকা, চেক ও স্ট্যাম্পে টাকাগুলো নিয়েছেন।

গতকাল সোমবার ২৪ মে সন্ধ্যায় রাজশাহী টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) ডরমেটরি কক্ষ থেকে সুরাইয়া সুলতানা ও তার ভাই কো-অডিনেটর জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে পুলিশ। তারা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকার আশরাফুল আলমের মেয়ে। সেই রাতেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানান। এর আগে গত ১৯ মে প্রশিক্ষণার্থীদের থাকার জন্য টিটিসির ডরমেটরির কয়েকটি রুমে ভাড়া নেন তারা। সেখানে কুষ্টির তিনজন প্রশিক্ষণার্থী ছাড়াও রাজশাহীর কয়েকজন ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে টিটিসির ইন্সট্রাক্টর আয়ুব উল্লাহকে কারণ দর্শানের নোটিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন- টিটিসি অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার এস এম এমদাদুল হক। তিনি বলেন- ‘পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আমার খারাপ লেগেছে- তাই গতকাল সোমবার (২৪ মে) সকালে তাকে কারণ দর্শানের নোটিশ করা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মে) জবাব চাওয়া হয়েছে।

টিটিসির দুইজন শিক্ষক ক্লাস নিয়েছে এমন কথার উত্তরে তিনি বলেন- ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। ইনিস্টাক্টার আয়ুব উল্লাহ জানেন। এবিষয়ে ইন্সট্রাক্টর আয়ুব উল্লাহ জানান- ‘আমাকে কারণ দর্শানের নোটিশ করেছে। আমি জবাব দেবো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- এই চক্রটি প্রার্থীদের রামেক হাসপাতাল, নেসকোসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানীতে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছে। ১১ জন প্রার্থীর থেকে তিন থেকে পাঁচ লাখ করে টাকাও নিয়েছে। টাকা দেওয়ার বিষয়টি কারও সাথে মৌখিক, চেক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ডে ও স্ট্যাম্পে লিখিত রয়েছে। তবে স্ট্যাম্পে লেখা রয়েছে ঋণ হিসেবে। চক্রটি নিয়োগ পত্র দিলেও চার থেকে পাঁচ মাস পরে কর্মস্থলে যোগদান দিতে পারেন নি। এতে প্রার্থীরা ক্ষিপ্ত হলে রামেকের পরিবর্তে নেসকোতে মিটার রিডার হিসেবে চাকরির কথা বলে।

তবে বিষয়টি নিয়ে নেকসোর এক কর্মকর্তাকে ডাকা হলে তিনি জানান- ‘তারা কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। আর নিয়োগপত্র তাদের নয়। এটি প্রতারণা করা হয়েছে।

এর আগে প্রতারকরা প্রার্থীদের জানান-নেসকোতে চাকরির জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে ৬০ দিনের। এমন শর্তে রাজি হন প্রার্থীরা। থাকা ও ট্রেনিং ভেন্যু ঠিক করা হয় টিটিসিতে। টিসিবির ডরমেটরি রুমে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। প্রার্থীরা নেসকোর মিটার রিডারসহ কয়েকটি পদের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কয়েকদিন আগে ঘোষণা আসে ১৫ দিনে ট্রেনিং হবে। এছাড়া ট্রেনিং চলাকালে টিটিসি দুইজন শিক্ষক ক্লাস নিয়েছেন বলে চাকরি প্রত্যাশীরা জানান।

কে কত টাকা দিয়েছেন:
মোকলেসুর রহমান তিন লাখ, হুমায়ুন কবীর এক লাখ, নূর আলম এক লাখ ৫০ হাজার, আলমঙ্গীর এক লাখ, মোশাররফ হোসেন দুই লাখ ৫০ হাজার, মোস্তাফিজুর রহমান দুই লাখ ৫০ হাজার, মতিউর রহমান দুই লাখ ৫০ হাজার ও মঈন উদ্দীন মানিক ৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা দিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি মৌখিক ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান- ঢাকা থেকে একজন ব্যক্তি ফেসবুকে (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) নম্বর পান। এর পরে টিটিসির শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে কয়েকজনকে টেনিং করানোর কথা জানায়। করোনার কারণে টেনিং বন্ধ থাকায়, না করে দেওয়া হয় তাকে। পরে তারা (টিটিসি) ডরমেন্টরীতে প্রশিক্ষণার্থীদের রাখার বিষয়ে প্রস্তাব দেয়। এর পরে বিষয়টি অধ্যক্ষকে জানানো হয়। এসময় তাদের প্রতিনিধি হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম (কো-অডিনেটর) নামের এক ব্যক্তিতে পাঠান। জাহাঙ্গীর আলম টিটিসির অধ্যক্ষর সাথে যোগাযোগ করেন। পরে তারা বিধি বহিভূত ভাবে (টিটিসি) ডরমেটরির কয়েকটি রুম ভাড়া নেন তারা। তারা বাইরে টেনিং করাতেন বলে দাবি করেন এই শিক্ষক।

ভুক্তভোগি হুমায়ুন কবীর জানান-‘ রামেকের একজন কর্মচারী মাইনুদ্দিন মানিকের মাধ্যমে জানতে পারে অফিস সহায়ক হিসেবে পরিচয় দানকারী সুরাইয়া সুলতানার কথা। মানিক নিজের ভাইয়ের জন্যও টাকা দিয়েছেন সুরাইয়াকে। এই সুরাইয়া চাকরি দিতে পারবেন হাসপাতালে। এর পরে সুরাইয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকার কথা জানান। এসময় সুরাইয়া আমাকে (হুমায়ুন কবীর) এমএলএসএস পদে চাকরি দেবে বলে জানান। এনিয়ে বেশ কয়েকজনকে জোগার করা হয় চাকরী প্রত্যাশীদের। তাদের থেকে টাকা নেয় সুরাইয়া।’

তিনি আরও বলেন- ‘রামেক হাসপাতালে যোগদানের বিষয়ে তিন থেকে চারটি তারিখ পরিবর্তন করে সুরাইয়া। তার পরেও যোগদান দিতে পারেন নি। কয়েকদিন আগে সুরাইয়া জানান- হাসপাতালে হবে না। আপানাদের নেসকোতে চাকরি দেওয়া হবে। তাই আপনাদের আটজনকে ৬ মাসের ট্রেনং করতে হবে। কয়েকদিন আগে জানান-৬ মাসের ট্রেনিং ১৫ দিনে সম্পন্ন করা হবে। এর পরে আমি নেসকোতে যোগাযোগ করি। নেসকোর পক্ষ থেকে জানানো হয়- এটি ভুয়া। তাদের টেনিং এমনভাবে করানো হয় না। আপনারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

কয়েকজন চাকরী প্রত্যাশী জানান-তারা এখনে ১১ জন ট্রেনিং করছেন। এর মধ্যে রাজশাহীর আটজন। আর কুষ্টিয়ার তিন জন। তাদের থেকে মোটা অংকের টাকা নেওয়া হয়েছে। ট্রেনিং চলাকালে সুরাইয়ার ভাই জাহাঙ্গীর আলম প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়া তাদের ট্রেনিং একেকদিন একেক জায়গায় হতো। অনেক সময় প্রার্থীর বাড়িতেও প্রশিক্ষণ দিতে যেতেন প্রশিক্ষকরা।

ভুক্তভোগিদের দাবি তারা নিজের সম্পদ বিক্রি করে টাকা দিয়েছেন। অনেকেই ঋণও তুলেছেন। তাই এই টাকাগুলো ফেরত চান সবাই।

এ ব্যপারে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, এ ঘটনায় দুই জনের নামে প্রতারণার মামলা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়েছে।

ভুয়া নিয়োগপত্র ও সাদা কাগজে টাকা নেওয়ার স্বাক্ষর- সুরাইয়ার।

উল্লেখ্য, এর আগে টিটিসিতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ৩০টি কম্পিউটার চুরি হয়। নাটকিয় ভাবে কম্পিউটারের কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধিদের আড়াল করতে ৮জন শিক্ষক-কর্মচারীকে শকজ করেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ যোগদানের পর থেকেই নানা ধরনের জটিলতা চলমান রয়েছে।

রাজশাহীর সময় / জি আর

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply