নির্বাচন কর্মকর্তাকে ‘যানাজায়’ যেতে বললেন প্রার্থী

নির্বাচন কর্মকর্তাকে ‘যানাজায়’ যেতে বললেন প্রার্থী

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল লতিফ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি পেয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।

কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতীক বরাদ্দের দিন কাফনের কাপড় কিনে তার রশিদ উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে জমা দেন ওই প্রার্থী। একই সঙ্গে নিরাপত্তা দিতে না পারলে তার মৃত্যু হলে জানাজায় যেতে বলেন তিনি।

শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মোহনপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন।

তিনি বলেন, শুক্রবার ছিল প্রতীক বরাদ্দেন দিন। এদিন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ কাফনের কাপড় কেনার একটি রসিদ দিয়ে গেছেন। সৌজন্যতার খাতিরে সেটি গ্রহণ করেছি। একই সঙ্গে থানা পুলিশকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়েছে। শুনেছি এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত পরবর্তী নির্দেশনা দিলেই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।

নির্বাচন কর্মকর্তা আরও বলেন, শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। শনিবার থেকে চলছে প্রচার-প্রচারণা। সবাইকে আইনকানুন মেনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে বলা হয়েছে। আইনের ব্যত্যয় হলে তারা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল লতিফ অভিযোগ করে বলেন, ৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষে মোহনপুর থানার পাশেই ছিলাম। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওসি) আমার পাশেই দাঁড়ানো ছিল। ওই মুহূর্তে আমার মোবাইল ফোনে মাহবুব নামের এক ব্যক্তি কল করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বলেন, আমি ২৯টি খুন করেছি। তুই আমার টার্গেটে আছিস। গতকাল (শনিবার) তোকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছিলাম। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিস। কুটি বাড়ি এলাকায় ঢুকলে তোকে মেরে ফেলবো।

লতিফ আরও বলেন, এর পরপরই আমি থানায় গিয়ে হুমকিদাতার নাম ও মোবাইল নম্বরসহ থানায় জিডি করেছি। তবে দুঃখের বিষয় হলো এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না পুলিশ প্রশাসন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভাষ্য, বর্তমান যে কোনো অপরাধীর নম্বর ট্রেস করে তার অবস্থান চিহ্নিত করার পর তাকে দ্রুত আটক করা সম্ভব। এখন এসব কোনো ব্যাপারই না। অথচ নাম ও নাম্বারসহ অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছি না। তাই হতাশ হয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে বাজার থেকে কাফনের কাপড় কেনার পর সেটার রশিদ দিয়ে এসেছি এবং বলেছি, নিরাপত্তা না দিতে পারলে আমার জানাজায় যাবেন।

প্রার্থী আব্দুল লতিফ বলেন, ২০০৩ সালে বিএনপির শাসনামলে জাহানাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন আওয়ামী লীগ আমাকে সমর্থন দিয়েছিল। তবে এবার আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র পাইনি। এরপরও এলাকায় আমি জনপ্রিয়। কমপক্ষে ৮০ শতাংশ ভোট আমার। নৌকার প্রার্থীর জনপ্রিয়তা নেই। জিততে হলে তাকে ভোটচুরি করতে হবে। অন্যথায় তাকে সরাতে হবে। আর এ কারণেই তাকে প্রাণনাশের হুমকি বলে দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফের।

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, চলতি মাসের ২৮ নভেম্বর মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ তৃতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আব্দুল লতিফ ছাড়াও আরও পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন। কিন্তু এর আগেই লতিফকে মোবাইল ফোনে এক ব্যক্তি হত্যার হুমকি দেন। এ নিয়ে একটি জিডি করেছেন। হুমকি দেওয়া ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে একটি আবেদনও করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা পেলেই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার পর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফের প্রতি বিশেষ নজর রাখা হয়েছে যাতে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply