পরিযায়ীর ডাকে জেগেছে রাবি ক্যাম্পাস

পরিযায়ীর ডাকে জেগেছে রাবি ক্যাম্পাস

পরিযায়ীর ডাকে জেগেছে রাবি ক্যাম্পাস
পরিযায়ীর ডাকে জেগেছে রাবি ক্যাম্পাস

অনলাইন ডেস্ক: দুই ধরনের পরিযায়ী পাখি দেখা যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এক ধরনের পাখি থাকে ডাঙায় বা ডালে; আরেকটি পানিতে। তবে রাবির জলাশয়গুলোতে আসা বেশির ভাগ পাখিই হাঁসজাতীয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পাখিই ছোট সরালি। আর বাকিদের মধ্যে রয়েছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভুতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস ইত্যাদি।

শীতের আগমনী বার্তা নিয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে এসেছে পরিযায়ী পাখি। বাংলা হেমন্ত মাসেই শীত শীত অনুভব হয়। আর এই হেমন্তেই পরিযায়ী পাখিদের আগমন ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। যেন শীতের আগমনী বার্তা তারাই দিচ্ছে।

ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। মুখরিত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে সবুজে ঘেরা মতিহারের এই অঙিনায়।

ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলোতে প্রতিবছরে একবার দেখা মেলে তাদের। প্রতিবারের মতো এবারও ক্যাম্পাসে দেখা মিলছে পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। ক্যাম্পাস এখন যেন পাখির রাজ্য। কিছু পাখি ডুবসাঁতার খেলছে, কিছু উড়ে যাচ্ছে আকাশে।

এই ডাল থেকে ওই ডাল ঘুরে আবার নেমে আসছে পানিতে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। সব মিলিয়ে যেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির মেলা বসেছে।

পাখি নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা জানান, প্রতিবছর শীতের মৌসুমে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামতে শুরু করে। ফলে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে।

এ সময় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখি ঝাঁক বেঁধে উড়ে আসে দক্ষিণ এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ দেশ বাংলাদেশে। দেশের যেসব এলাকায় এসব পাখি আসে তার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া, তাপসী রাবেয়া, রহমতুন্নেছা হলের পেছনের চামপচা, রোকেয়া হলের পাশের পুকুরগুলো, শামসুজ্জোহা হলের পাশের পুকুরসহ বেশ কয়েকটি জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির মেলা। পুরো শীতজুড়ে থাকবে পাখির অবাধ বিচরণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পরিযায়ী পাখি দেখে আনন্দিত হন। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেক দর্শনার্থী আসেন পরিযায়ী পাখি দেখতে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উঁচু উঁচু গাছপালা, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্ত জলাশয় ও পর্যাপ্ত খাদ্য থাকায় প্রতিবছর শীতের মৌসুমে পরিযায়ী পাখিরা এ ক্যাম্পাসকে বেছে নেয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র হওয়ায় তারা এখানে বাসাও বাঁধে। প্রতিবছর এদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এবারও ক্যাম্পাসের রোকেয়া হলের পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির দেখা মিলছে।

‘পরিযায়ী পাখিরা কখনো দিক ভুল করে না। যেখান থেকে তারা আসে ঠিক সেখানেই আবার ফিরে যায়। এ ক্ষেত্রে তারা পাহাড়-পর্বতকে দিকনির্দেশনা হিসেবে মনে রাখে।’

অভয়ারণ্য, সুন্দর পরিবেশ, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র ও পর্যাপ্ত খাবার পাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর লিয়াকত আলী।

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে পাখি মারা নিষেধ আছে। পাখিদের কোনো ধরনের ভয়-ভীতি দেখানো হয় না। পরিযায়ী পাখির অবাধ বিচরণে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য তৎপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply