১৯ নং ওয়ার্ডে সড়কজুড়ে ট্রাক, ভোগান্তিতে ৩৩ হাজার মানুষ

১৯ নং ওয়ার্ডে সড়কজুড়ে ট্রাক, ভোগান্তিতে ৩৩ হাজার মানুষ

১৯ নং ওয়ার্ডে সড়কজুড়ে ট্রাক, ভোগান্তিতে ৩৩ হাজার মানুষ
১৯ নং ওয়ার্ডে সড়কজুড়ে ট্রাক, ভোগান্তিতে ৩৩ হাজার মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে বসবাস প্রায় ৩৩ হাজার মানুষের। গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়ার্ডটির সরু রাস্তায় সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার কারণে দৈনন্দিন কাজে বের হওয়া মানুষগুলোকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডের প্রথম ও প্রধান প্রবেশদ্বার রেল ভবনের পাশের রাস্তাটি। এছাড়া প্রায় দু’তিন কিলোমিটার দূরে আরও একটি রাস্তা রয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, বাজারঘাট সবকিছুই কাছে হওয়ায় মূল সড়ক হিসেবে ১৯নং ওয়ার্ডবাসী রেলভবনের পাশের রাস্তাটিই ব্যবহার করেন। এমনকি চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার ২৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারাও এই রাস্তাটি ব্যবহার করে থাকেন।

কিন্তু সরকারি খাদ্য গোডাউন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের তেলের ডিপো, বাফার গোডাউন ও রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা দোকান-পাটের কারণে সরু রাস্তায় প্রতিদিনই সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এতে ওই এলাকার বাসিন্দাদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে রড, স্টিল ও বিভিন্ন ভাঙ্গারিপট্টির দোকান থাকায় এই রাস্তায় হরহামেশাতেই আসা-যাওয়া করে ট্রাক। ব্যবসায়ীক এলাকা হওয়ায় দিনরাত চাপ থাকে রাস্তাটিতে। রাস্তাটির প্রস্থ কোথাও ১৮ ফিট, ২০ ফিট কিংবা ২১ ফিট যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগন্য।

আবার নগরীর ১৯নং ওয়ার্ডে ঢোকার মূল পথ এটি হওয়ায় শিরোইল কলোনির ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর গলি, কানারমোড়, নিউ কলোনী, আসাম কলোনী, শিরোইল কলোনী, রেল কলোনীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। রাজশাহী মেডিকেলে যাওয়ার সহজ পথ এটি। এখানে রয়েছে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি শাখার অফিস।

এছাড়া সরকারি খাদ্য গোডাউন, তেলের ওয়াগান ও সারের গোডাউন রয়েছে এ পথেই। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে কেনা চাল, গম খাদ্য গোডাউনে সংগ্রহ করার জন্য ট্রাক ভেড়ানো হয় এ পথে। আবার সারের গোডাউনে লোড ও আনলোডের কারণে গোডাউনে স্থান না পেয়ে সড়কের অর্ধেক অংশ জুড়ে দিন-রাত দাঁড়িয়ে থাকছে এসব ট্রাক।

একইভাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ভেতরে অবস্থিত পদ্মা অয়েলের ডিপো থাকায় সেখানেও প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ট্রাক। সবমিলিয়ে শত শত ট্রাক নগরীর এই ওয়ার্ডটিতে অবস্থান ও আসা-যাওয়ার কারণে বিপাকে রয়েছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুধু ট্রাকই নয় তার সঙ্গে ছোট এ পথটিতে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন দোকান-পাট ও খাদ্য গোডাউনের পাশে থাকা ময়লার ভাগাড়ের কারণে রাস্তাটির আরও বেহাল দশা হয়েছে। এসব কারণে ছোট এ পথে কার, মাইক্রোবাস দূরের কথা রিকশা নিয়ে যাতায়াত করাটাও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হাসান বলেন, রেলভবনের পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়াই বিপদ। ওই রাস্তায় গেলেই ঘণ্টা খানেক সময় নষ্ট হয়। রিকশাও যেতে চায় না।এ কারণে ভাড়াও বেশি লাগে। আবার তিন থেকে চার কিলোমিটার ঘুরে পাওয়ার হাউস মোড় হয়ে যেতে হয় গন্তব্যে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

একই ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা ইফতেখার আলম বলেন, বাসায় স্ত্রী গর্ভবতী। আবার আমার বৃদ্ধ মাও অসুস্থ। তীব্র যানজটের কারণে পড়তে হয় দুর্ভোগে।

দেখা মেলে ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদ সুমনের। কাউন্সিলর নিজেই রাস্তার যানজট নিরসনের চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, রাস্তা এমনিতেই সরু। তার মধ্যে গোডাউনের লোড-আনলোডের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছে আমার এলাকার জনগণ। রেলগেটে সিএনজি স্ট্যান্ড মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে, কিন্তু যানজট নিরসনে তারা অনেকটাই উদাসীন।

কাউন্সিলরের ভাষ্য, এ রাস্তায় যানজটের আরও একটি বড় কারণ হচ্ছে সার ও খাদ্য গোডাউনের শ্রমিক ও তাদের লেবার সর্দার। তারা অনেক সময় ব্যবসায়ীদের সাথে বারগেইনিং করে ও ইচ্ছামতো ট্রাকগুলো রেখে দেয়। তাদের অনিয়মের কারণে ভোগান্তি আরও বাড়ে।

এ বিষয়গুলো নিয়ে ডিসি ট্রাফিক ও চন্দ্রিমা থানার ওসিকে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিলে এলাকার মানুষ অনেকটা স্বস্তি পাবে বলে জানান এ জনপ্রতিনিধি।

এ বিষয়ে খাদ্য গোডাউনের পরিদর্শক আবু জাকির মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান বলেন, আমি গত ১০ অক্টোবর এখানে এসেছি। সড়কে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট হয়, এতে আমি নিজেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। সাধারণ জনগণ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সেই চিন্তা থেকে খাদ্য গোডাউনের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে ট্রাক রাখার জায়গা দিয়েছি।

শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতা বা যানজট কমাতে অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শ্রমিকরা স্বতন্ত্রভাবে এখানে কাজ করে। সরকারিভাবে কাজে অতিরিক্ত জনবল ব্যবহার করার সুযোগ নেই। গোডাউনের কাজে যুক্ত শ্রমিকদের আমরা আরও জনবল বাড়ানোর জন্য শুধু অনুরোধ করতে পারি। কিন্তু আদেশ দিতে পারি না। হয়তো তারা এই সুযোগটাই নিচ্ছে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply