নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে নগরীর জলিলের মোড়ে ড্রেন নির্মাণের অভিযোগ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি

নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে নগরীর জলিলের মোড়ে ড্রেন নির্মাণের অভিযোগ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি

নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে নগরীর জলিলের মোড়ে ড্রেন নির্মাণের অভিযোগ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি
নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে নগরীর জলিলের মোড়ে ড্রেন নির্মাণের অভিযোগ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরীর ছোটবনগ্রাম বারোরাস্তা সংলগ্ন জলিলের মোড়ে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির বাড়ির সম্মুখভাগের কিছু অংশ রক্ষার জন্য সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নির্মাণে নকশা বা ডিজাইনের বিচ্যুতি ঘটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসির দাবি, ড্রেন নির্মাণের জন্য রাস্তার ধারের অন্যান্য দরিদ্র ও নি¤œ মদ্যবিত্ত পরিবারের বাড়ি ও সীমানা প্রাচীর নিয়মানুযায়ী ভাঙ্গা পড়লেও এলাকার প্রভাবশালী সিদ্দিক মোল্লা ও তার ভাইয়ের দুটো দুইতলা বাড়ীর সামনের অবৈধ অংশটি না ভেঙ্গে উত্তর-দক্ষিণমূখী নির্মিয়মান ড্রেনটির নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে উক্ত অংশে প্রায় ত্রিভুজাকার ডিজাইন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। যার কারণে ড্রেন সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী রাস্তাটি প্রায় আট ফিট সরু হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসির অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, সিদ্দিক মোল্লার দোতলা বাড়িটির সামনের প্রায় সাত ফিট অংশ সরকারি খাস জমি। নিজের প্রভাব আর অর্থের ব্যবহারে উক্ত সরকারি রাস্তার স্থানটি তিনি যুগের পর যুগ ধরে জোড়পূর্বক দখল করে আছেন।

এদিকে, জলিলের মোড়ে বসবাসকারী এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক ও রাসিক মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উক্ত অভিযোগপত্রে তারা উল্লেখ করেছেন, সিদ্দিক মোল্লার বাড়ির সামনের অংশটি অবৈধভাবে সরকারি রাস্তার উপর নির্মাণ করে বহু বছর ধরে সেখানে তারা বসবাস করছেন। রাস্তার ধারে সরকারি ড্রেন নির্মাণ শুরু হলে বাড়িটির সামনের অবৈধ অংশটি ভাঙ্গার কথা থাকলেও তিনি অর্থের জোরে ঠিকাদারকে সেটি ভাঙ্গা থেকে বিরত রাখেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসির। এলাকাবাসি এবিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে ও কাজে বাঁধা দিলে তাদেরকে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে জেল খাঁটানো হবে বলে সিদ্দিক মোল্লা ভয়ভীতি প্রদর্শণ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, বারোরাস্তার মোড় থেকে উত্তর-দক্ষিণমুখি নির্মিয়মান ড্রেনটি সিদ্দিক মোল্লার বাড়ির সম্মুখভাগে এসে তার গতিপথ পরিবর্তন করে প্রায় ছয় থেকে সাত ফিট পূর্বদিকে টার্ন নিয়ে আবারো নিয়মানুযায়ী দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়েছে। যার কারণে পার্শ্ববর্তী ২৩ ফিটের সরকারি রাস্তাটির প্রশস্ততা হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও উক্ত স্থানটির সামনে রয়েছে ত্রিমুখি সড়কের একটি সংযোগস্থল। সিদ্দিক মোল্লার বাড়ির অবৈধ অংশটি রক্ষা করার জন্য রাস্তার তিনমাথার স্থানটিও অনেকটাই সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

বিল্ডিং কন্সট্রাকশন এ্যাক্ট. (ই.বি এ্যাক্ট-২ ১৯৫০)-এর সেকশন ১৮ তে বলা হয়েছে, মালিকানা অনুল্লেখিত রাস্তা সর্বসাধারণের রাস্তা হিসেবে গন্য হবে। কিন্তু সিদ্দিক মোল্লা নাগরিকদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। নিজের অর্থ আর পেশিশক্তির প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ এলাকার সচেতন ব্যক্তিদের। একই বিধিমালায় আরো বলা হয়েছে, ‘দুইরাস্তার সংযোগস্থলের কোণে অবস্থিত সাইটের ক্ষেত্রে সংযোগ স্থলবর্তী কোণের দুইদিকে রাস্তা সংলগ্ন ১ বর্গ মিটার জায়গা রাস্তা সংলগ্ন ১ বর্গ মিটার জায়গা রাস্তার সরলীকরনের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তুু, সিদ্দিক মোল্লা তার প্রভাব ও পেশিশক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে ড্রেনের সরলীকরণের বিষয়টিকে বাঁধাগ্রস্থ করেছে বিধিমালার লঙ্ঘন ঘটিয়ে।

এবিষয়ে, অভিযুক্ত সিদ্দিক মোল্লার সাথে কথা বলতে গেলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমার বাড়ির সীমানা ঠিকই আছে। আমি সরকারি রাস্তার উপর বাড়ির কোন অংশ বর্ধিত করেনি। এলাকার কিছু লোক আমার পরিবারের ভাল চায় না। তাই তারা বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। তবে, সিদ্দিকের খুব ঘনিষ্ঠজন অকোপটে স্বীকার করেন সরকারি রাস্তার উপরে সিদ্দিক মোল্লার বাড়ির একাংশ নির্মিত হয়েছে। তারা আরো বলেন, আজ থেকে ত্রিশ বছর পূর্বে ঐ এলাকার কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি উক্ত স্থান দিয়ে সরকারি কোন রাস্তা ও ড্রেন নির্মিত হবে। যার কারনে, বাড়ি নির্মানের সময় যে যার ইচ্ছে মতো সরকারি জায়গার একাংশ দখল করে বাড়ি বর্ধিত করেছে।

এলাকাবাসি সকলের চলাচলে যেনো কোন প্রকার বিঘ্ন না ঘটে এবং উপরন্তু সকলের অধিকারকে সমমর্যাদা দেবার অভিপ্রায়ে উক্ত অবৈধস্থানটি ভেঙ্গে ফেলে নির্মিয়মান ড্রেনটি সঠিক নকশায় নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষ অনুরোধ করেছেন। নতুবা এই সিদ্দিক মোল্লাকে দেখে অনেকেই নিজেদের পেশিশক্তি আর অর্থের প্রয়োগ ঘটিয়ে সরকারি অনুমদিত নকশার বিচ্যুতি ঘটানোর মতো বেআইনী কাজে উৎসাহ বোধ করবেন বলে অভিমত সচেতন মহলের।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) প্রধান প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ১৯ নং ওয়ার্ডে যে প্রকল্পটি চলমান রয়েছে সেটির পরিচালক (পিডি) হচ্ছেন মো. আমিনুল ইসলাম তুষার। তার সাথে কথা বলার পরামর্শ দিলেন প্রধান প্রকৌশলী। প্রকল্প পরিচালক আমিনুল ইসলাম তুষারও বিষয়টি জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানান। তবে সাইড ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলতে বলেন তিনি।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply