মিজানুর রহমান: সমুদ্রের নীচে যে অংসখ্য কেব্লের মাধ্যমে আন্তর্জাল বা ইন্টারনেটের সুবিধা ভোগ করেন বিশ্ববাসী, সেই ‘মেরুদণ্ড’ কি উড়িয়ে দিতে চান পুতিন? ইউক্রেন-যুদ্ধের মাঝে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইউরোপীয় দেশগুলিতে গ্যাস সরবরাহকারী পাইপলাইনে বিস্ফোরণের অভিযোগ আগেই উঠেছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এ বার সমুদ্রের অতলে ইন্টারনেটের ‘মেরদণ্ড’ও কি ভেঙে দেওয়ার ছক কষছে ভ্লাদিমির পুতিন সরকার? ব্রিটিশ উপকূলবর্তী সমুদ্রে একটি রুশ জাহাজের যাত্রাপথ বদলের পর এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দাবি, গবেষণামূলক কাজে যাত্রা শুরু করেছিল রুশ সরকারের মালিকানাধীন ওই জাহাজটি। তবে ঘোষিত পথের মাঝে আচমকাই দিক পরিবর্তন করে সেটি। এর পরেই জাহাজটির ‘আসল উদ্দেশ্য’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সমুদ্রের নীচে যে অংসখ্য কেব্লের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সুবিধা ভোগ করেন বিশ্ববাসী, সেই ‘মেরুদণ্ড’ কি উড়িয়ে দিতে চান পুতিন? না কি, গুপ্তচরবৃত্তির জন্যই সেটি ব্রিটিশ উপকূলের কাছে ঘোরাফেরা করছে? ইউক্রেন-যুদ্ধের মাঝে এমনতরো নানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য সান’-এর দাবি, ১৭ অক্টোবর রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ থেকে রওনা দিয়েছিল ‘আকাদেমিক বরিস পেত্রভ’ নামে ওই জাহাজটি। ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে তা পৌঁছনোর কথা ছিল দক্ষিণ অতলান্তিকের একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। এ সবই নাকি বৈজ্ঞানিক অভিযানের জন্য।
তবে এই ঘোষিত যাত্রাপথে হঠাৎই বদল ঘটে। এর পর থেকেই ‘আকাদেমিকে’র যাত্রাপথের উপর নজর রাখছে ব্রিটিশ নৌসেনাবাহিনী। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২১ অক্টোবর হঠাৎ দিকবদল করে জাহাজটি।
ভবিষ্যতে জাহাজটি নাকি স্কটল্যান্ডের দ্বীপপুঞ্জ পার করবে। তবে তার আগে নর্থ সি-তে নরওয়েজ়িয়ান তৈলভান্ডারের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে জাহাজটি। এর পরই নাকি জাহাজটির ‘আসল উদ্দেশ্য’ নিয়ে সন্দিহান ব্রিটিশ সরকার।
ওই জাহাজটি ব্রিটেনের নৌসেনাঘাঁটির সামনে দিয়েও যাবে বলে দাবি। যে ঘাঁটিতে রয়েছে পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধী ডুবোজাহাজ ‘ট্রাইডেন্ট’। এর পর তা আয়ারল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম দিকের সমুদ্র দিয়ে যাত্রা করবে। সেখানকার সমুদ্রভাগেই রয়েছে দুই মহাদেশকে জুড়ে থাকা অসংখ্য কেব্ল। যা দিয়ে ইন্টারনেটের পরিকাঠামো রক্ষা করা হয়।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য উইক’ জানিয়েছে, অতলান্তিকের গভীরে আমেরিকা এবং ইউরোপকে জুড়তে কেব্ল পাতা রয়েছে, সেটি আসলে ইন্টারনেটের ‘মেরদণ্ড’। ওই কেব্লগুলিই বিশ্ব জুড়ে কমপক্ষে ৯৫ শতাংশই যোগাযোগ ব্যবস্থার ভার বহন করে। ইন্টারনেটের বাকি যোগাযোগ চলে উপগ্রহের মাধ্যমে।
‘আকাদেমিকে’র যাত্রাপথ বদলের উদ্দেশ্য কি বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেওয়া? রাশিয়ার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার কারণও রয়েছে বলে দাবি সংবাদমাধ্যমের।
অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে সমুদ্রের গভীরে পরিকাঠামোয় আগেও আঘাত হেনেছে রাশিয়া। ২৬ সেপ্টেম্বর বাল্টিক সাগরের গভীরে রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইন নর্ডস্ট্রিমে বিস্ফোরণের পিছনেও নাকি পুতিন সরকারের হাত রয়েছে। যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
রাশিয়া থেকে গোটা ইউরোপের ঘরে গ্যাস সরবরাহ করে বাল্টিক সাগরের নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন। অভিযোগ, ওই পাইপলাইনের পর এ বার পুতিনের পরবর্তী নিশানা হতে পারে অতলান্তিকের গভীরে ইন্টারনেটের পরিকাঠামো ব্যবস্থা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হাজারো দাবির আবহে মুখ খুলেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তথা আয়ারল্যান্ডের রিপাবলিকান পার্টির সদস্য বিলি কেলহার। সংবাদমাধ্যম ‘আইরিশ সান’কে বিলি বলেন, ‘‘ইউরোপ এবং আমেরিকার মধ্যে যাবতীয় ইন্টারনেট যোগাযোগ চলে অসংখ্য কেব্লের মাধ্যমে। যা আয়ারল্যান্ড উপকূলের অত্যন্ত কাছ দিয়ে যায়।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বছরের এই সময় আইরিশ উপকূলের কাছে রুশ যুদ্ধজাহাজটি কী করছে?’’
বিলির দাবি, ‘‘হতে পারে, জাহাজটি এই এলাকায় ঘুরেফিরে খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করছে। নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইনে বিস্ফোরণের পর পুতিন সব কিছুই করতে পারেন।’’
পুতিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠার সঙ্গত কারণ রয়েছে বলে মনে করছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাঝে পশ্চিমি দেশগুলির বিরুদ্ধে বার বার হুমকি দিয়েছেন তিনি। এমনকি, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগেও তিনি যে পিছপা হবেন না, সে আশঙ্কাও রয়েছে বলে দাবি।
বস্তুত, সেপ্টেম্বরে পুতিনের হুঁশিয়ারি ছিল, ‘‘আমাদের দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিপন্ন হলে দেশবাসীকে রক্ষার্থে সমস্ত পন্থাই কাজে লাগাব।’’
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.