রামেবি’র ভূমি অধিগ্রহণের আগেই ৬০ কোটি টাকার টেন্ডার, সব কাজ করছেন পরামর্শকই!

রামেবি’র ভূমি অধিগ্রহণের আগেই ৬০ কোটি টাকার টেন্ডার, সব কাজ করছেন পরামর্শকই!

রামেবি’র ভূমি অধিগ্রহণের আগেই ৬০ কোটি টাকার টেন্ডার, সব কাজ করছেন পরামর্শকই!
রামেবি’র ভূমি অধিগ্রহণের আগেই ৬০ কোটি টাকার টেন্ডার, সব কাজ করছেন পরামর্শকই!

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) অনিয়ম-দুর্নীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। শৃঙ্খলা বা আইনের ব্যতয় ঘটিয়ে একের পর এক কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কোনো কাজেরই গতি আসছে না। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রমেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তা-র্কচারীদের নানা খাম-খেয়ালিপনা নানা কাজের কারণে এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসের নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি। এর জন্য ব্যয়ও বাড়াতে হয়েছে। সংশোধি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। কিন্তু তার পরেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো ভূমি অধিগ্রহণই সম্পন্ন করা যায়নি। এরই মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণকাজের জন্য আহ্বানকৃত টেন্ডার প্রক্রিয়ার শুরুতেই দেখা দিয়েছে অনিয়ম। নগরীর বাজে সিলিন্দা এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য নিয়োগকৃত পরামর্শককে দিয়েই করানো হচ্ছে সব কাজ। বালু ভরাট, মাটি ভরাট, ফটক ও প্রাচীর নির্মাণ কাজের টেন্ডারের সার্বিক কাজই করছেন পরামর্শক রেজায়াত হোসেন রিটু’। যা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত আইনের চরম লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণের এক বছর আগেই পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে প্রতি মাসে ২ লাখ এক হাজার টাকা বেতন দিতে শুরু করে। নিয়ম অনুযায়ী ভূমি অধিগ্রহণের পরই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো নিমার্ণকাজ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিবেন সেই পরামর্শক। তিনি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতিবেদন দিবেন। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত প্রকৌশলীরা বাকি কাজ করবেন। তিনি কখনোই কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোনো ফাইলেও তিনি স্বাক্ষরও করতে পারবেন না। কিন্তু এসব নিয়ম লঙ্ঘন করে রামেবির নিয়োগকৃত পরামর্শক রেজায়াত হোসেন রিটু’কে দিয়েই সব কাজ করানো হচ্ছে।

রামেবি সূত্র আরও জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে ৬০ কোটি টাকার চারটি কাজের জন্য সম্প্রতি টেন্ডার আহ্বান করা হয়। গত ৩ এপ্রিল সেই টেন্ডারের ওপেনিং করা হয়। এই টেন্ডার আহ্বানের বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন ও পরামর্শক রেজায়াত হোসেন রিটু। রিটুকে দিয়ে টেন্ডার প্রস্তুত সম্পন্ন করার পরে ওপেনিং কমিটির সদস্য সচিব করা হয় তাঁকে। এমনকি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটিরও সদস্য সচিব করা হয় তাঁকে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একই ব্যক্তি টেন্ডার ওপেনিং এবং মূল্যায়ন কমিটির দুটি কমিটির একই পদে থাকতে পারবে না না। আবার সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনো প্রকল্পের পরিচারক হতে হলেও তাঁকে চাকরির অন্তত তিন বছর মেয়াদ থাকতে হবে। সে নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন নিজেই এ বৃহৎ প্রকল্পের পরিচালক পদে বসেন। যদিও তাঁর চাকরির মেয়াদ আছে আর মাত্র এক বছর সাত মাস।

সূত্রটি আরও জানায়, রেজায়াত হোসেন রিটুকে টেন্ডার ওপপেনিং কমিটি সদস্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ভিসি নিজেই। এর পর মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশও করেন ভিসি। তাঁর সুপারিশেই মূলত পরামশক রিটুকে মুল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিবও করা হয়। যেটি চরম নিয়মের লঙ্ঘন।

সূত্র মতে, অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দুই বার ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু এখনো কাজ শুরু করা হয়নি। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ নভেম্বর এ বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামো নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবকাঠামো নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।

রামেবি সূত্র মতে, রামেবির ভূমি অধিগ্রহণের সময়সীমা ছিলো সর্বশেষ গত বছরের ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এখনো জমি বুঝিয়ে দিতে পারেনি রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৬৭ দশমিক ৬৭ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য শতক প্রতি ১৭ লাখ টাকা করে জেলা প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বুঝিয়ে নিয়েছে। তবে জমি পরিমাপ করতে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসন যে জমি বুঝিয়ে দেয়ার কথা বলে সেখানে ২৪ শতাংশ জমি কম পাওয়া যায়। ওই জমির মূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ফলে এ নিয়ে আপত্তি তুলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যাতে করে এখনো জমি বুঝে নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আকাঠামো নির্মাণের জন্য ৬০ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদারদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি প্রকল্পের পরামর্শকের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার বলেন, ‘পরামর্শকের কাজ হলো তিনি উন্নয়ন কাজ তদারকি করবেন। পর্যক্ষেণ করবেন এবং সে সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন দিবেন। সে অনুযায়ী কাজ করবেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বা কর্মকর্তারা। তবে চুক্তিতে যদি কিছু শর্ত দেওয়া থাকে, তাহলে সে অনুযায়ী বিলেও স্বাক্ষরও দিতে পারবেন। কিন্তু টেন্ডার পক্রিয়ায় তিনি অংশ নিতে পারবেন না কখনোই।

এসব বিশ্ববিদ্যায়ের পরামর্শক রেজায়াত হোসেন টিটু বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নয়। আমার সঙ্গে যেসব বিষয়ে চুক্তি আছে সেসব বিষয়ে আমি কাজ করছি। এর বাইরে ভিসি স্যারের অনুরোধে আমি টেন্ডার সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করছি। এখানে আমার কিছু করার নাই।

জানতে চাইলে রামেবির ভিসি ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘পরামর্শকের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ীই তাঁকে দিয়ে টেন্ডারের কাজগুলো করানো হচ্ছে। এর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ না হলেও অবকাঠামো তো ডিজাইন অনুাযায়ী করা হবে। সেই কারণে আমরা কিছু কাজ এগিয়ে রাখছি। জমি বুঝিয়ে পেলেই যেন কাজ শুরু করা যায়।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply