ফরিদপুরে দুই সহোদর নিহতের ঘটনায় তিন মামলা

ফরিদপুরে দুই সহোদর নিহতের ঘটনায় তিন মামলা

ফরিদপুরে দুই সহোদর নিহতের ঘটনায় তিন মামলা
ফরিদপুরে দুই সহোদর নিহতের ঘটনায় তিন মামলা

অনলাইন ডেস্ক: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকা অনেকটাই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আতঙ্ক ও গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে ওই এলাকার পুরুষরা। গত বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহতের পর থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনার দিন রাত থেকেই ঘটনাস্থলে পুলিশে র‌্যাব, এপিবিএন, ডিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি করছে। এছাড়া ঢাকা থেকেও অতিরিক্ত দুই শতাধিক পুলিশ ঘটনাস্থলে সংযুক্ত করা হয়েছে।শনিবার (২০ এপ্রিল) মধুখালী থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তবে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করছে না থানা পুলিশ। গত শুক্রবার সকাল থেকেই পুরো এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।
সরেজমিনে পঞ্চপল্লীর কৃষ্ণনগর এলাকা ঘুরে ঘটনাস্থলের আশপাশের কোনো বাড়িতেই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের তেমন দেখা মেলেনি। আতঙ্কে ও গ্রেপ্তার এড়াতে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করছে আশপাশের এলাকাবাসী।

পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিহত শ্রমিক আশরাফুল (২০) ও এরশাদুলের (১৫) মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজন দাফন সম্পন্ন করেছে শুক্রবার সন্ধ্যায়।মধুখালী থানা সূত্র জানিয়েছে, নিহত দুই সহোদরের বাবা ও পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি মামলা রুজু হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের কালি মন্দিরের কালি প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত চার শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে মারধর করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেন।
আহতদের উদ্ধার করে তিনজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং চার জনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিত্সাধীন অবস্থায় মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২০) ও তার ভাই আশাদুল (১৫) মারা যায়। আহত আরো দুই শ্রমিক আশঙ্কাজনকভাবে চিকিত্সাধীন রয়েছে।

ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শত শত মানুষ এ হামলায় অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। বিক্ষুব্ধদের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়। এলাকাটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে গতকাল শনিবার জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

নিহতদের জানাজায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমসহ হাজারো মানুষ অংশ নেয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিহত দুই ভাইয়ের জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চোপেরঘাট কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঘটনাস্থল, নিহতদের বাড়িসহ মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম বলেন, বিশেষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply