করোনা : ১৩ দিনে রামেক হাসপাতালে ১০১ জনের মৃত্যু

করোনা : ১৩ দিনে রামেক হাসপাতালে ১০১ জনের মৃত্যু

করোনা : ১৩ দিনে রামেক হাসপাতালে ১০১ জনের মৃত্যু
করোনা : ১৩ দিনে রামেক হাসপাতালে ১০১ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার : করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহী অঞ্চল।করোনা সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। কিছুতেই থামছে না করোনার বিস্তার।রাজশাহী বিভাগে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই।পরিস্থিতি সামাল দিতে চাঁপাইবাবগঞ্জে চলছে দুই সপ্তাহের আঞ্চলিক লকডাউন। এই জেলায় করোনার ভারতীয় ধরণও শনাক্ত হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা নওগাঁতেও আঞ্চলিক লকডাউন দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে চলাচলের ওপর আরোপ করা হয়েছে নতুন বিধিনিষেধ। প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী- সন্ধ্যা ৭টা থেকে নগরীতে দোকানপাট বন্ধ রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁয় পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। গত ২৪ মে থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৩ দিনেকরোনাও করোনা উপসর্গ নিয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ১০১ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে ৬০ জন করোনাভাইরাসে, আর বাকিরা করোনা উপসর্গে মারা গেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে রামেক হাসপাতালে ছুটে আসছেন। কিন্তু শয্যা সংকটে সব রোগীকে ভর্তি নিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু অক্সিজেনের স্যাচুরেশন যাদের কমেছে, শুধু তারাই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন। তারপর এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগী মারা যাচ্ছেন।

রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।মারা যাওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১০জন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আর বাকি ছয়জন উপসর্গে মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নয়জন, রাজশাহীর ছয়জন এবং নওগাঁয় একজন রোগী ছিলেন। আইসিইউ এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা গেছেন। এছাড়া শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মারা গেছেন আরও আটজন। এদের মধ্যে চারজন করোনা পজিটিভ ছিলেন।আর বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ জন ও রাজশাহীর তিন জন।এ নিয়ে গত ২৪ মে থেকে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৩ দিনে করোনা ও করোনা উপসর্গ নিয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট ১০১ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে ৬০ জন করোনাভাইরাসে, আর বাকিরা করোনা উপসর্গে মারা গেছেন।

শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৬ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১০, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ ও নওগাঁর একজন রয়েছেন। এছাড়া একই সময় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ১৮ জন বাড়ি ফিরেছেন।

এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে নতুন ৩৭২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সর্বোচ্চ ১১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন রাজশাহীতে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০৯ জন, নওগাঁয় ২৪ জন, নাটোরে ৩৭ জন, জয়পুরহাটে ৩৬ জন, বগুড়ায় ১৫ জন, সিরাজগঞ্জে ১৪ জন এবং পাবনায় ১৯ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন।প্রতিদিন এত বিপুল পরিমাণ রোগীর চিকিৎসা দেয়াটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য রোগীদের জায়গা সংকুলানই একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। সংক্রমণ না কমলে কয়েকদিনের মধ্যে এ সমস্যা আরো প্রকট হতে পারে। এ নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সমস্যার সমাধান কীভাবে হতে পারে, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা।

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ সরকারি হাসপাতালরাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা এক হাজার ২০০টি। এর মধ্যে ২৩২টি শয্যা করা হয়েছে শুধুমাত্র কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায়। এ জন্য বার্ন ইউনিটসহ কয়েকটি ওয়ার্ডকে করোনা ইউনিট করা হয়েছে। তারপরও জায়গা সংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শয্যার জন্য রোগীদের মাঝে যেনো হাহাকার দেখা দিয়েছে। মাত্র ১৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে রামেক হাসপাতালে।

এদিকে রামেক হাসপাতালে জায়গা না হওয়ায় দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকা সদর হাসপাতাল চালুর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এরইমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। এই হাসপাতালটি এবার চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রামেক হাসপাতাল ছাড়া রাজশাহীতে আর কোন হাসপাতালে ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইন নেই। থাকলে সেটাকে করোনার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেত। তাই সব রোগীর চাপ রামেক হাসপাতালে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের রোগীরা এখানে আসছেন চিকিৎসা নিতে। এখন জায়গা সংকুলানই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।রাজশাহী সদর হাসপাতালটি চালু করা গেলে রামেক হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড সেখানে স্থানান্তর করা যাবে। তাহলে রামেক হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড বাড়ানো যাবে। সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইন নেই বলে সেখানে করোনার চিকিৎসা হবে না। সর্বশেষ রামেক হাসপাতালের এক নম্বর ওয়ার্ডটিকে করোনা ওয়ার্ড করার চেষ্টা চলছে। এখন সাধারণ রোগী অন্যত্র না সরালে রামেক হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ড বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।

সংশ্লিষ্ট জানান, রামেক হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসায় চিকিৎসকেরও সংকট রয়েছে। তাদের চাহিদার ভিত্তিতে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর ১৫ জন চিকিৎসককে এখানে দিয়েছেন। তবে তারা এখনও আগের কর্মস্থলেই রয়েছেন। দ্রুত হয়ত তারা চলে আসবেন। কিন্তু নার্সের সংকটের কোনো সমাধান হচ্ছে না।

রামেক হাসপাতালে আরও করোনা রোগী ভর্তি করা হলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহও বাড়াতে হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক। এজন্য ২০ হাজার লিটার লিকুইড অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতার আরেকটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এখন যে সিলিন্ডার আছে সেটিতেও ২০ হাজার লিটার লিকুইড অক্সিজেন রাখা যায়। লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড এই সিলিন্ডারে অক্সিজেন দিয়ে যায়। আরেকটি সিলিন্ডার বসাতে এই প্রতিষ্ঠানটিকেই বলা হয়েছে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply