‘গব্বর সিংহ’ হতে চেয়েছিলেন অমিতাভ! ‘শোলে’র জন্য আমজাদকে আবিষ্কারের কৃতিত্ব জাভেদের

‘গব্বর সিংহ’ হতে চেয়েছিলেন অমিতাভ! ‘শোলে’র জন্য আমজাদকে আবিষ্কারের কৃতিত্ব জাভেদের

‘গব্বর সিংহ’ হতে চেয়েছিলেন অমিতাভ! ‘শোলে’র জন্য আমজাদকে আবিষ্কারের কৃতিত্ব জাভেদের
‘গব্বর সিংহ’ হতে চেয়েছিলেন অমিতাভ! ‘শোলে’র জন্য আমজাদকে আবিষ্কারের কৃতিত্ব জাভেদের

মিজানুর রহমান: ১৯৭৫ সাল। রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ছবি ‘শোলে’ মুক্তির সাল। বলিউড জগতে শীর্ষে থাকা এই ছবি ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের প্রথম সারির ১০টি ছবির মধ্যেও শীর্ষস্থানীয় থেকেছে।২০০৫ সালে বলিউডের এক জনপ্রিয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিচারকেরা ৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে ‘শোলে’ ছবিটি মনোনীত করেছিলেন।

এমনকি, এই ছবির জনপ্রিয়তা এত বেশি যে, ২০১৪ সালে ‘থ্রি ডি’তে এই ছবি আবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।তবে, ‘শোলে’ ছবির মুক্তি নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। এক কোটি টাকা মূল্যের বাজেট নিয়ে এই ছবির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ছবিটি তৈরি করতে দু’বছরেরও বেশি সময় লাগে। ফলে বাজেট প্রায় তিন গুণ বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ‘শোলে’র বাজেট পৌঁছে গিয়েছিল তিন কোটিতে।

জরুরি অবস্থায় মুক্তি পাওয়া ছবি আদৌ বক্স অফিসে সাড়া ফেলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পরিচালক-প্রযোজকেরা। মুক্তির সময় কোনও অশান্তি হবে কি না, তা নিয়েও ভয়ে ছিলেন তাঁরা। তবুও, এমন রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট মুক্তি পায় ‘শোলে’।

এই ছবির প্রতিটি সংলাপ জনপ্রিয়তার এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, আলাদা ভাবে সংলাপের জন্য অডিয়ো ক্যাসেট প্রকাশ করতে বাধ্য হন প্রযোজক-পরিচালকরা। ক্যাসেট মুক্তির পর প্রায় পাঁচ লক্ষ অডিও ক্যাসেট বিক্রি হয়েছিল। ৭০-এর দশকের সর্বাধিক বিক্রিত অডিও ক্যাসেট ছিল এটি।‘শোলে’ ছবির চরিত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে ‘গব্বর সিংহ’-এর চরিত্রটি।

আমজাদ খান অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বড়পর্দায় নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। মূল গল্পের লেখক আমজাদের পরিবারকে আগে থেকে চিনতেন। আমজাদকে একটি থিয়েটারে অভিনয় করতে দেখে পছন্দ হলে তাঁর বন্ধু জাভেদ আখতারকেও ওই থিয়েটার দেখাতে নিয়ে যান তিনি।গব্বরের চরিত্রের জন্য আমজাদকে ভাল মানাতে পারে ভেবে তা রমেশ সিপ্পিকে জাভেদ আখতার।

এর পর আমজাদের অডিশন নিয়ে শেষ পর্যন্ত গব্বর সিংহ চরিত্রের জন্য আমজাদকেই বেছে নেওয়া হয়।তবে, এই চরিত্রের জন্য পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন ড্যানি। কিন্তু ‘ধর্মাত্মা’ ছবির কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য অভিনয়ের প্রস্তাব খারিজ করেন অভিনেতা। ড্যানি এই চরিত্র ছেড়ে দেওয়ার পর গব্বরের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য কোনও অভিনেতা খুঁজে পাচ্ছিলেন না পরিচালক ও চিত্রনাট্যের লেখকরা।

যখন তাঁরা নতুন মুখের সন্ধানে, সেই মুহূর্তে গব্বর সিংহের চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন সঞ্জীব কুমার।এমনকি, জয়ের চরিত্রটি শুনতে গিয়ে গব্বর চরিত্রটি পছন্দ হয় অমিতাভের। পরিচালকের কাছে এই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ চেয়েছিলেন বলিউডের ‘বিগ বি’। কিন্তু এই প্রস্তাবে রাজি হননি পরিচালক।

পরিচালকের মতে, অমিতাভ ও সঞ্জয়— দু’জনেরই ইন্ডাস্ট্রিতে ‘হিরো ইমেজ’ রয়েছে। তাই গব্বরের মতো একটি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করাতে চাননি প্রযোজক-পরিচালকেরা।

নতুন অভিনেতার জন্য অন্বেষণ চলতেই থাকে তাঁদের। তার পরেই বলিউডে নবাগত আমজাদকে এই চরিত্রের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। নতুন মুখ আমজাদের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন পরিচালক রমেশ।কিন্তু, গব্বর সিংহের চরিত্রটি অমিতাভের মনে দাগ কেটে যায়।

তাই ২০০৭ সালে ‘শোলে’ ছবির গল্পের ধারায় বানানো ‘রাম গোপাল বর্মা কি আগ’ ছবিতে গব্বর সিংহের চরিত্রের অনুকরণে গড়া ‘বব্বন সিংহ’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ। দুর্ভাগ্যবশত, ছবিটি বক্স অফিসে চূড়ান্ত ভাবে ফ্লপ করে।এই ছবির মূল গল্পটি সেই সময়ের নামী পরিচালক প্রকাশ মেহরা ও মনমোহন দেশাইকে শুনিয়েছিলেন সেলিম-জাভেদ।

কিন্তু তাঁরা অন্য ছবির কাজে ব্যস্ত থাকায় গল্পটি প্রযোজক জিপি সিপ্পি ও রমেশ সিপ্পিকে শোনান তাঁরা। শোনা মাত্রই সেলিম-জাভেদের সঙ্গে ছবি তৈরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন সিপ্পি। দেড় লক্ষ টাকায় ‘শোলে’ ছবির গল্প সেলিম-জাভেদের থেকে কিনে নেন রমেশ।

‘শোলে’ ছবিতে জগদীপ, অমিতাভ বচ্চন ও ধর্মেন্দ্রের কণ্ঠে একটি কাওয়ালি গান দেওয়া ছিল। কিন্তু ছবির দৈর্ঘ্যের কথা মাথায় রেখে পরে গানটিকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

ঠাকুর বলদেব সিংহের চরিত্রে সঞ্জীব কুমার বাজিমাত করেছিলেন। কিন্তু পরিচালকের প্রথম পছন্দ সঞ্জীব ছিলেন না। এই চরিত্রে দিলীপ কুমারকে নিতে চেয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু দিলীপ কুমার গল্প শুনেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। এই ধরনের চরিত্রে আগেও অভিনয় করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ঠাকুরের চরিত্রে নেওয়া হয় সঞ্জীব কুমারকে।

ঠাকুর বলদেব সিংহের নামও নিজের শ্বশুরের নামে রেখেছিলেন সেলিম খান। তাঁর প্রথম স্ত্রী সলমা খানের বাবার নাম ছিল বলদেব সিংহ চড়ক। সেই নামেই সঞ্জীব কুমারের চরিত্রের নামকরণ করেছিলেন সেলিম।

‘শোলে’ ছবির গল্প শোনার পর প্রথমে ঠাকুর বলদেব সিংহের চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। তিনি প্রযোজক ও পরিচালককে নিজের ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন। তিনি ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করলে সঞ্জীব কুমারকে বীরুর চরিত্রটি দিয়ে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল।

কিন্তু বীরুর চরিত্রের বিপরীতে হেমা মালিনী অভিনয় করবেন তা জানার পর অবশেষে বীরুর চরিত্রেই অভিনয় করতে রাজি হন ধর্মেন্দ্র।জয়ের চরিত্রে অমিতাভ নন, বরং রমেশ সিপ্পির প্রথম পছন্দ ছিলেন শত্রুঘ্ন সিংহ। চিত্রনাট্যের চাহিদা মতো তিনি অভিনেতার কাছে প্রস্তাবও নিয়ে যান পরিচালক।

কিন্তু গল্প শুনে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন শত্রুঘ্ন। সেলিম-জাভেদ ও ধর্মেন্দ্রর পরামর্শে শেষ পর্যন্ত জয়ের চরিত্রে বেছে নেওয়া হয় অমিতাভকে।

‘শোলে’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল বেঙ্গালুরুর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে। রামনগর জেলার সেই গ্রামই ছবির গল্প অনুযায়ী হয়ে উঠেছিল রামগড়। দু’বছর ধরে ওই গ্রামেই চলেছিল শ্যুটিং।

‘জয়-বীরু’-এর বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখনও দর্শকদের প্রিয়। কলেজ জীবনে বীরেন্দ্র সিংহ ব্যাস ও জয় সিংহ রাও নামে সেলিম খানের দুই বন্ধু ছিলেন। তাঁদের নাম অনুসারেই ছবিতে দুই চরিত্রের নাম রাখা হয়েছিল।জগদীপ অভিনীত সুরমা ভোপালির চরিত্রটিও ‘শোলে’ ছবির প্রাণ। এই চরিত্রটি তৈরি করেছিলেন জাভেদ আখতার।

তিনি নিজে ভোপালের বাসিন্দা। সেখানে সুরমা নামে তাঁর এক বন্ধু ছিল। নিজের বন্ধুর নামেই জগদীপের চরিত্রটি তৈরি করেন তিনি।এই ছবির জন্য দু’টি ক্লাইম্যাক্স শ্যুট করা হয়েছিল। প্রথম ক্লাইম্যাক্স অনুযায়ী ঠিক হয়েছিল, ঠাকুর বলদেব সিংহ প্রতিহিংসাবশত গব্বর সিংহকে মেরে ফেলেন।

কিন্তু জরুরি অবস্থায় এই ক্লাইম্যাক্সে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেতে সমস্যা হতে পারে জেনে দ্বিতীয় ক্লাইম্যাক্স শ্যুট করার জন্য প্রস্তুতি নেন পরিচালক। এই অন্তিম দৃশ্যটিই শেষ পর্যন্ত সিনেমাতে দেখানো হয়।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply