আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রীতিমতো বাঘে-মানুষে টানাটানি। প্রাণের মায়া করেননি প্রৌঢ়া রীণা। নৌকার বৈঠা, গাছের ডাল হাতের সামনে যা পেয়েছিলেন তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বিশাল রয়্যাল বেঙ্গলের ওপরে। সুন্দরবনের কেঁদো বাঘ তখন তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে । বাঘের গায়ে ঘা কতক বৈঠার বাড়ি দিয়েও লাভ হয়নি। শিকার ছেড়ে রীণার ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। তাঁকে জখম করে শিকার মুখে নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে যায় বাঘ।
সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়ে হামেশাই বাঘের শিকার হন মৎস্যজীবীরা। কেউ আবার বীর বিক্রমে বাঘের সঙ্গে লড়ে প্রাণ নিয়ে ফিরেও আসতে পারেন। কিন্তু বাড়ি ফেরা হল না মৎস্যজীবী শিবপদর। স্ত্রী রীণা ও সঙ্গী শশাঙ্ক মণ্ডলের সঙ্গে ভোররাতে কাঁকড়া, মাছ ধরতে গিয়েছিল তিনি। কিন্তু বিপদ যে কীভাবে ওঁত পেতেছিল তা ধরতেও পারেননি ৫৫ বছরের শিবপদ। শেষ পর্যন্ত বাঘের শিকার হতে হল তাঁকে।
শিবপদ-রীণার বাড়ি গোসাবা ব্লকের সুন্দরবন উপকূল থানার অন্তর্গত লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চরঘেরি এলাকায় । তাঁদের তিন ছেলে, ছেলের বউ রয়েছে পরিবারে। বড় সংসার। দুবেলা পেট চালাতে প্রাণভয় করলে চলবে না। অন্ন সংস্থানের জন্য সুন্দরবনের নদী-খাঁড়িতে মাছ, কাঁকড়া ধরতে হয় শিবপদকে। মঙ্গলবার ভোররাতে মাছ ধরতেই স্ত্রী ও এক সঙ্গীকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তিনি।
ডিঙি নৌকার দাঁড় বেয়ে খাঁড়ির কাছে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। কিছুটা দূরেই ছিলেন শশাঙ্ক। ভোরের আলো তখন সবে ফুটতে শুরু করেছে। নীচু হয়ে জাল পাতছিলেন শিবপদ। আচমকাই তাঁর বুক ফাটা আর্তনাদ শুনে রক্ত জল হয়ে যায় স্ত্রী রীণার। দেখেন, তাঁর থেকে হাত কয়েক দূরে স্বামীর ঘাড় কামড়ে ধরেছে বিশাল এক রয়্য়াল বেঙ্গল। বাঘটা খাঁড়ির কাছেই কোনও ঝোপে গা ঢাকা দিয়ে শিকারের ওপর নজর রাখছিল। বাঘের নিশানায় ছিল শিবপদ। সুযোগ বুঝে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঘ। কামড়ে ধরে ঘাড়।
স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে আসেন রীণা। নৌকার বৈঠা, গাছের ভাঙা ডাল দিয়ে বাঘকে আঘাত করতে থাকেন। প্রায় ২০ মিনিটে বাঘে-মানুষে রুদ্ধশ্বাস লড়াই চলে। শেষে শিকার পাশে রেখে বাঘ রীণা ও শশাঙ্ককে আক্রমণ করে। বেগতিক বুঝে রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন দু’জনেই। বাঘ তখন শিকারকে টানতে টানতে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে পালিয়ে যায়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.