কর অব্যাহতি সুবিধা কমানোর তাগিদ

কর অব্যাহতি সুবিধা কমানোর তাগিদ

কর অব্যাহতি সুবিধা কমানোর তাগিদ
কর অব্যাহতি সুবিধা কমানোর তাগিদ

অনলাইন ডেস্ক: রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর অব্যাহতির সুবিধা কীভাবে আরো যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

সংস্থাটির যুক্তি, এই পদক্ষেপ নিলে রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আহরণ কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও আমদানি শুল্কে ব্যাপক মওকুফ সুবিধা দেওয়া।

এসব সুবিধা কমিয়ে আনলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব কতটা দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে পড়বে, সেটিও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

গতকাল রবিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বার্ডের (এনবিআর) নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে রাজস্ব আহরণের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফ।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাড়তি রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানতে চায় সংস্থাটি। ডিজিটাল সংযোগ স্থাপন বা ইন্টিগ্রেশনের ওপর জোর দিয়েছে আইএমএফ। ভ্যাট বিভাগ ও কাস্টমসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা যায় কি না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে বলেছে সংস্থাটি।

নতুন কাস্টমস আইনের খসড়া তৈরি শুরু হয় ২০১২ সালে এবং আয়কর আইন হয় ২০১৭ সালে। এত দিনেও এ দুটি আইন বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। খসড়া আইনটি কোনো অবস্থায় আছে সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়।

বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে রাজস্ব আদায়ের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংস্কারবিষয়ক কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। ভ্যাট, কাস্টমস ও আয়কর বিভাগ থেকে তিনটি পৃথক অবস্থানপত্র তুলে ধরা হয়।

আয়কর বিষয়ে এনবিআরের সদস্য আয়কর (নীতি) সামছুদ্দিন আহমেদ, ভ্যাট বিভাগের পক্ষে সদস্য (নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও কাস্টমসের পক্ষে সদস্য শুল্ক (নীতি) মাসুদ সাদিক অবস্থানপত্র উপস্থাপন করেন।

ঋণ নিয়ে আলোচনা করতে ১০ সদস্যের আইএমএফ স্টাফ মিশন বুধবার ঢাকায় এসেছেন। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনান্দ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ঢাকায় অবস্থানকালে প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সিরিজ বৈঠকের অংশ হিসেবে গতকাল এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে আইএমএফ।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা মোকাবিলায় আইএএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ইতিমধ্যে তিন কিস্তিতে ঋণ দেওয়ার আভাস মিলেছে।

তবে এই ঋণ পেতে বরাবরের মতো এবারও বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে সরকারকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব খাতে সংস্কার। তারই অংশ হিসেবে এনবিআরের সঙ্গে এই বৈঠক করে আইএমএফ।

এনবিআরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে কর জিডিপি বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই এবং কর জিডিপি অনুপাতে দক্ষিণ এশিয়ায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে রয়েছে। এই হার ৯ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। করের আওতা কোন উপায়ে বাড়ানো যেতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে দুই পক্ষ।

একই সঙ্গে ই-রিটার্ন থেকে শুরু করে ই-পেমেন্ট, অ্যাসেসমেন্ট সিস্টেমসহ বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনায় উঠে আসে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে ঋণ পরিশোধে চাপ বেড়ে যাবে। তখন নিয়মিত করদাতাদের ওপরই করের বোঝা বেড়ে যাবে। এজন্য করের আওতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে উপায় খোঁজা হচ্ছে।

ইত্তেফাক

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply