যে স্বভাব মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়

যে স্বভাব মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়

যে স্বভাব মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়
যে স্বভাব মানুষকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়

ধর্ম ডেস্ক: বদমেজাজ বলতে বোঝায়, সামান্য বিষয়ে রাগারাগি করা, বকাঝকা ও গালাগাল করা। বদমেজাজি ব্যক্তি যা বলে সেটাই করে। বদমেজাজি মানুষের মধ্যে কারো মতামত শোনা বা আপস-মীমাংসার মনোভাব নেই। এরা অহংকারী, উদ্ধত, রুক্ষ, নির্দয় ও একগুঁয়ে স্বভাবের হয়ে থাকে।

বদমেজাজি মানুষ শুধু নিজেই অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে না; এদের চারপাশের লোকদের মানসিক যন্ত্রণা ও অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
দাম্পত্য জীবন থেকে ভালোবাসা, হৃদ্যতা ও সুসম্পর্ক বিদায় নেয়। সর্বদা ঝগড়াঝাঁটি ও বিবাদ-কলহ লেগে থাকে। এ জাতীয় লোকের কারণে সমাজে প্রচুর সমস্যা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ধীরে ধীরে এই স্বভাবের মানুষ বন্ধু ও সঙ্গীহীন হয়ে পড়ে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে সম্বোধন করে কোরআনের এক আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে। যদি তুমি রূঢ় কঠোরচিত্ত হতে, তাহলে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত…।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
বদমেজাজ অহংকার থেকে উদ্ভূত।

এই ধরনের মানুষ আল্লাহর কাছে ঘৃণিত, মানুষের কাছেও ঘৃণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৮)
জান্নাত নম্র ও বিনয়ী মানুষদের জন্য। বদমেজাজি জান্নাতে যাবে না। হাদিসে এসেছে, হারিস ইবনে ওয়াহাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০১)
সরলতা ও ভদ্রতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীনচরিত্রের হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৬৪)

নম্রতা ও কোমলতা ব্যক্তির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। একবার রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)-কে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যার ভেতর নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৯৪)

তবে ‘আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব ও আল্লাহর জন্য শত্রুতা’—এই নীতির আলোকে মেজাজ প্রয়োগ করা যাবে। যেমন—কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে, ইসলামের অকাট্য বিষয় নিয়ে বেয়াদবি বা কটাক্ষ করলে সে ক্ষেত্রে রাগ প্রযোজ্য। কোনো জালিমকে দুর্বলের ওপর জুলুম করতে দেখলে সে ক্ষেত্রে মেজাজ প্রয়োগ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। তার সহচররা কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল…।’ (সুরা : ফাতহ, আয়াত : ২৯)

জান্নাতে যেতে চাইলে প্রিয় নবীর এই হাদিস মনে রাখুন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘…তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতি হবে। এক প্রকার মানুষ তারা, যারা রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের তাওফিক লাভে ধন্য। দ্বিতীয়ত, ওই সব মানুষ, যারা দয়ালু এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। তৃতীয়ত, ওই শ্রেণির মানুষ, যারা পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদিসম্পন্ন লোক।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭০৯৯)

মহান আল্লাহ আমাদের জান্নাতি মানুষ হিসেবে কবুল করুন।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply