ইসলামে স্বাস্থ্যকর খাবারের তাগিদ

ইসলামে স্বাস্থ্যকর খাবারের তাগিদ

ইসলামে স্বাস্থ্যকর খাবারের তাগিদ
ইসলামে স্বাস্থ্যকর খাবারের তাগিদ

মিজানুর রহমান টনি: বেশি বেশি করে আল্লাহর উপাসনা করার জন্য, হজ করার জন্য, রোজা রাখার জন্য এবং অন্য মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করার জন্য যেখানে শক্তির প্রয়োজন সেখানে তার জন্য দৈহিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য দরকার। অন্যদিকে পার্থিব কল্যাণের জন্যও সুস্বাস্থ্য অপরিহার্য। খারাপ স্বাস্থ্য তথা অপুষ্টি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, যক্ষ্মা ইত্যাদি মারাত্মক রোগে যারা আক্রান্ত তাদের অঢেল সম্পদ থাকলেও তা তাদের সুখ-শান্তিময় জীবন-যাপনে খুবই ব্যাঘাত ঘটায়। মারাত্মক মানসিক রোগাক্রান্তদের ব্যাপারে সেই একই অবস্থা।

ইসলাম ধর্মে সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, যার সম্পর্কে বেশির ভাগ লোক ধোঁকায় নিপতিত—সুস্বাস্থ্য ও সুসময় বা অবসর।’ (তিরমিজি শরিফ)
ইসলামের যেসব ব্যবস্থা থেকে শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্য অর্জিত হয় তা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

(১) খাওয়া-দাওয়া : সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় খাওয়াদাওয়া অত্যাবশ্যক।

ইসলাম ধর্মে প্রয়োজনীয় খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে বলে না। খাওয়াদাওয়া করা প্রসঙ্গে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘হে লোক সকল, জমিনে যেসব হালাল ও পবিত্র খাদ্যদ্রব্য আছে সেগুলো থেকে তোমরা আহার করো এবং (হালাল-হারামের ব্যাপারে) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮)
এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের যেসব বৈধ ও পবিত্র খাদ্যদ্রব্য দিয়েছেন, তোমরা তা খাও এবং আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো—যদি তোমরা শুধু তারই উপাসনা করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১১৪)

তবে ইসলামে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া করা, খাওয়া অপচয় করা অর্থাৎ অপব্যয় সমর্থন করে না।

অপব্যয় সম্বন্ধে কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘কিছুতেই অপব্যয় করো না। অবশ্যই অপব্যয়কারীরা হচ্ছে শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ২৬-২৭)
ইসলামী বিধান মতে, মানুষ প্রয়োজনমতো শুধু হালাল ও পবিত্র সব ধরনের খাদ্য খেতে পারবে। শূকরের গোশত মানুষের জন্য ক্ষতিকর বিধায় এটি খাওয়া ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের মতে শূকরের গোশত খেলে মানুষের প্রায় ৭০ রকমের অসুখ হতে পারে।

যেমন—পেটে পিনওয়ার্ম, হুকওয়ার্ম, রাউন্ডওয়ার্ম, টেপওয়ার্ম ইত্যাদি কেঁচো/কীট হতে পারে। শূকর হচ্ছে নিকৃষ্ট স্বভাবের পশুদের মধ্যে অন্যতম। এরা নোংরা স্থানে থাকতে এবং সেখানে লুটোপুটি করতে পছন্দ করে। মানুষের মল এদের প্রিয় খাদ্য। অর্থাৎ শূকর হচ্ছে একটি অপবিত্র (নাপাক) জীব।
আর মদ হচ্ছে একটি নেশা জাতীয় পানীয়। মদ পানের কারণে বিভিন্ন মারাত্মক অসুখ হতে পারে। যেমম—খাদ্যনালিতে, পিত্তে ও প্লীহায় ক্যান্সার, হার্টের অসুখ, কিডনি ও প্রস্রাবের বহু রোগ, রক্তস্বল্পতা (পান্ডু) রোগ, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের জ্বালা। মদপানকারীর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও কোনো কোনো সময় দম বন্ধ হয়ে মারাও যায়। মদ পানের কারণে মারাত্মক অসুখ হওয়ার ফলে এ পৃথিবীতে প্রতিবছর লাখ লাখ লোক মারা যায়। যখন কোনো মানুষ মদপান করে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন তার স্বাভাবিক জ্ঞান, বিবেকবোধ লোপ পায়।

(২) ব্যায়াম : সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম অত্যাবশ্যক। ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ নামাজ দ্বারা ইবাদতের সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক উভয় ব্যায়াম সাধিত হয়। নামাজের বিভিন্ন অবস্থায় যেমন-দাঁড়ানো (কিয়াম), হাত-বাঁধা, রুকু, সিজদা, বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের শারীরিক ব্যায়াম হয়ে যায়। একনিষ্ঠ নামাজ পড়ার মাধ্যমে নামাজির হৃদয় প্রশান্ত থাকে। তাই নামাজিদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ফলে তারা মানসিক অসুখ যেমন—হতাশা, বিষণ্নতা, অস্থিরতা, অহেতুক ভয় ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকে। এ জন্য নামাজকে ব্যায়ামের নিরিখে সামগ্রিক ব্যায়ামও বলা হয়। এ ব্যাপারে কোনো কোনো অমুসলমান বিজ্ঞজনও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে মন্তব্য করেছেন। এখানে উদাহরণস্বরূপ দুজন অমুসলিম বিজ্ঞজনের এ ব্যাপারে প্রশংসামূলক মন্তব্য উল্লেখ করা হলো।

আমেরিকার বিখ্যাত অধ্যাপক ডা. বার্থস জুজফ ‘নামাজ ও ইসলাম’ শিরোনামে এক সাক্ষাৎকারের আকারে প্রকাশিত লেখাতে বলেছেন, ‘আমি গবেষণা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে পেয়েছি যে প্রকৃতপক্ষে নামাজ হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যায়াম এবং এর মধ্যে কমতি বা বাড়তির কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ব্যায়ামের শৃঙ্খলা ও পদ্ধতি সম্ভবত বর্তমান বিজ্ঞান, গাম্ভীর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় বুঝে আজ থেকে এক হাজার বছর আগে অদৃশ্য পদ্ধতিতে এ নামাজের পদ্ধতি ঠিক করা হয়েছে।’

স্যার উইলিয়াম ক্রাকস তাঁর ‘Reasearch in the Phominon of Spiritualism’ বইতে লিখেছেন, ‘কোনো মানসিক রোগী যদি মুসলমানদের নামাজ খুশুখুজু (ভয় ও নম্রতা) এবং ধ্যানসহ আদায় করতে শুরু করে তাহলে সে খুব শিগগির এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করবে।’

এখানে উল্লেখ্য যে নামাজ শুধু একটা প্রথাগত ব্যায়াম নয়, এটা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে পরকালে জান্নাতে যাওয়ার একটি বিশেষ বিধান, যাতে বাড়তি উপকার হিসেবে ইহকালে ব্যায়ামের উপকারিতাও পাওয়া যায়।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply